ফাইল চিত্র।
ডেঙ্গি ছিল এতকাল ফি বছরের শহুরে রোগ। মূলত নগরাঞ্চলের অপরিচ্ছন্নতা, নিকাশির অভাবে জমা জলে এডিস মশার বাড়বাড়ন্তের কারণেই কলকাতা ও আশপাশে ডেঙ্গির প্রকোপ দেখা দেয় বলে স্বাস্থ্য দফতর মনে করে। কিন্তু এ বার চরিত্র বদলে ডেঙ্গির ভাইরাস থাবা বসিয়েছে গ্রামীণ এলাকাতেও। এখনও পর্যন্ত যত সংখ্যক মৃত্যু হয়েছে তার বেশিরভাগই গ্রামের মানুষ। তাঁরা শহরে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। বিভিন্ন জেলার গ্রামাঞ্চল থেকে এবার বিপুল সংখ্যায় জ্বরের খবর আসছে। যা দেখে নড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর।
স্বাস্থ্য সচিব অনিল বর্মাসহ শীর্ষ কর্তারা ইতিমধ্যেই জেলাশাসক,স্বাস্থ্য আধিকারিক, পঞ্চায়েত ও পুর দফতরের অফিসারদের নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। গত দু’দিনে পর পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলায় জেলায় জ্বর মোকাবিলায় নামার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য ভবন। জেলা সদরে কন্ট্রোল রুম খোলার কথা তো আছেই, পাশাপাশি যে সব এলাকা থেকে জ্বরের খবর আসছে সেখানে বাড়ি বাড়ি লোক পাঠিয়ে জ্বরের তথ্য এবং জমা জলের খোঁজে লোক নামাতেও বলা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, পঞ্চায়েত দফতর ১০০ দিনের কাজের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠাবে। প্রয়োজনে খোলা হলে জ্বর পরীক্ষা শিবিরও। সেখানে ল্যাবরেটরি টেকশিয়ান এবং স্বাস্থ্যকর্মী পাঠিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া জ্বর হলেই যাতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে গ্রামবাসীরা আসেন তা সুনিশ্চিত করতে বলা হয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে।
স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, এ বছর দেগঙ্গা, বাদুড়িয়া, হাবরা, বসিরহাট, মালদহ, খড়গপুর, মেদিনীপুর, শিলিগুড়ির আশপাশ, নাগরাকাটা, আলিপুরদুয়ারের বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ব্যাপক জ্বরের খবর পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, জ্বর মানেই ডেঙ্গি নয়। জ্বরের জেরে মৃত্যু মানেই ডেঙ্গিতে ম়ৃত্যু নয়। কিন্তু তা বলে আমরা কোনও জ্বরই অবহেলা করছি না। এখন আর শহরে নয়, গ্রামেও জ্বর হলে প্রশাসনকে ঝাঁপিয়ে পড়তে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনের বক্তব্য হল, গত বছর জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সারা রাজ্যে ১৮ হাজার ২৮৭ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। এ বার এখনও পর্যন্ত ১৪ হাজার ৩১২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ যে এ বার ‘অস্বাভাবিক’ তা মানতে চাইছেন না স্বাস্থ্য কর্তারা।
পুর কর্তাদের দাবি, এবার ৩০ কোটি টাকা খরচ করে ৯০টি পুর এলাকায় বর্ষা নামার আগেই নালা-নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছিল। তার জন্যই নাকি পুর এলাকায় এবার ডেঙ্গি কম। যদিও স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, এ বছরও কলকাতা, বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম, বরানগর, শিলিগুড়ি, খড়গপুরের মতো শহরে ডেঙ্গি হয়েছে যথেষ্ঠ।
তবে শহর থেকে কেন ডেঙ্গি গ্রামে ছড়াচ্ছে তার কোনও জবাব স্বাস্থ্য কর্তাদের কাছে নেই। কর্তাদের বক্তব্য,‘‘শহরাঞ্চলের অপরিচ্ছনতা ডেঙ্গির সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে। কিন্তু এ বছর বসিরহাট, দেগঙ্গার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যে ডেঙ্গি আক্রান্তরা আসছেন, সেই পরিবেশে ডেঙ্গি হওয়ার কথা নয়। ফলে ডেঙ্গির ভাইরাস দ্রুত চরিত্র বদল করার ফলেই এই ঘটনা ঘটছে।’’ যা মোকাবিলার পথ খুঁজতে দিশেহারা স্বাস্থ্য ভবন।