শুধু দ্রুত ছড়াচ্ছেই না, ক্রমশ জটিল হচ্ছে ডেঙ্গি। অঝোর বৃষ্টির পরেও তার প্রকোপ কমছে না রাজ্যে। জটিলতা থেকে মৃত্যুও হচ্ছে। রবিবার থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ডেঙ্গিতে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত আট হাজার।
যাঁরা ডেঙ্গির চিকিৎসা করছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, কোনও এলাকায় এক জন আক্রান্ত হলেই পর পর তিন চারটি বাড়িতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে রোগ। উপসর্গ সবার সমান হচ্ছে না। কারও পেট ব্যথা, পেট খারাপ মূল উপসর্গ। কারও আবার জ্বর এবং ঘাড়ের পিছনে, চোখের নীচে ব্যথা। সারা শরীরেও ব্যথা। আর তাই উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন চিকিৎসকদের অনেকেই। চিকিৎসায় তাই দেরি হয়ে যাচ্ছে। তার ফলে অনেকের শরীরে জলের পরিমাণ নামতে নামতে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছচ্ছে, যেখান থেকে অনেক সময় তাঁরা মারা যাচ্ছেন।
রবিবার যাদবপুরের ১০২ নম্বর ওয়ার্ডে আবির দাস নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিল সে। বাঘাযতীন পল্লির বাসিন্দা আবিরের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে শুক্রবার। প্লেটলেট কমে যাওয়ায় ই এম বাইপাসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রবিবার মৃত্যু হয় তার। ওই এলাকার বেশ কিছু বাসিন্দা আক্রান্ত বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে।
সোমবার রাতে মেদিনীপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় রাহুল রায় (১৮) নামে এক তরুণের। তিনি বেলদা থানার বাখরাবাদের হোসেনপুরের বাসিন্দা। তাঁকে প্রথমে বেলদা গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবনতি হওয়ায় সোমবার সন্ধ্যায় তাঁকে মেদিনীপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মঙ্গলবার বেসরকারি হাসপাতাল থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়, ওই তরুণ ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়েই ভর্তি হন। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তার বক্তব্য, “বেলদার ওই যুবক পড়াশোনার জন্য অন্য জেলায় ছিলেন বলেই জেনেছি। সেখানে জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বর নিয়েই বাড়ি আসেন। ফলে, ডেঙ্গি নিয়ে বেলদায় উদ্বেগের কারণ নেই। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের সূত্রে খবর, জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা এখন ২৭৮। মেদিনীপুর শহরে ৪১ জন আর খড়্গপুরে ৩৬ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত।
মঙ্গলবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বিধাননগর পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের জ্যোতিনগর এলাকার বাসিন্দা শঙ্করী বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এই নিয়ে বিধাননগরে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৬। স্থানীয় কাউন্সিলর চামেলি নস্কর জানান, হাসপাতাল থেকে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গি শক সিনড্রোম বলা হয়েছে। তবে তাঁর দাবি, ওখানে গত কয়েক মাস ধরে মশা তাড়ানোর কাজ করা হয়েছে। কিন্তু ওই মহিলার অসুস্থতার কথা জানানো হয়নি। ওই মহিলার পরিবার জানিয়েছে, শঙ্করী সল্টলেকে পরিচারিকার কাজ করতেন। শুক্রবার তাঁর জ্বর হয়। তিনি কাউকে কিছু না জানিয়ে স্থানীয় দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। রবিবার স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় প্রথমে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় সোমবার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল শঙ্করীকে। মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত চার মাস ধরে এই অজানা রোগ বিধাননগর পুর এলাকার সর্বত্র হয়েছে। দেরিতে হলেও সক্রিয় হয়েছে পুরসভা। তবুও প্রকোপ কমেনি। মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় বলেন, ‘‘পতঙ্গ বিশারদদের পরামর্শ মেনে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ঘিরে লাগাতার মশাবাহিত রোগের প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের কাজ হয়েছে। তাতে ফলও মিলেছে। ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর খবরে চিন্তা বাড়ল। কোথা থেকে কী ভাবে জ্বরের সংক্রমণ হল, তা দেখা হচ্ছে।’’