Dengue

জ্বর নিয়ে মৃত্যু হাসপাতালের লাইনেই

শনিবার সকাল দশটা থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন জ্বরে আক্রান্ত চিংড়িঘাটার বাসিন্দা শিবপ্রসাদ পারিদা (৪০)। বারোটা নাগাদ হঠাৎই বহির্বিভাগের সামনের বারান্দায় পড়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:১৩
Share:

সকাল থেকে হাসপাতালের সামনে থিকথিক করছেন জ্বরে আক্রান্তেরা। কত ক্ষণে বহির্বিভাগে দেখানোর সুযোগ আসবে, কেউ জানেন না। তাই কেউ অপেক্ষার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে বসে পড়েছিলেন, আবার কেউ কাগজ পেতে শুয়ে পড়েছিলেন হাসপাতাল চত্বরেরই কোনও জায়গায়। সেই লাইনে শনিবার সকাল দশটা থেকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন জ্বরে আক্রান্ত চিংড়িঘাটার বাসিন্দা শিবপ্রসাদ পারিদা (৪০)। বারোটা নাগাদ হঠাৎই বহির্বিভাগের সামনের বারান্দায় পড়ে গেলেন তিনি। কিছুক্ষণ পরে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানালেন, শিবপ্রসাদ মারা গিয়েছেন!

Advertisement

ঘটনাটি বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন চারেক ধরে জ্বর ও পেটের যন্ত্রণায় ভুগছিলেন শিবপ্রসাদবাবু। শুক্রবার সকালে তাঁকে আইডি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এনআরএস হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। এনআরএসে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তাঁকে তিনটি ইঞ্জেকশন দিয়ে বা়ড়ি নিয়ে যেতে বলা হয়। এ দিন এনআরএস হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় জানান, বহির্বিভাগে দেখানো রোগীদের তথ্য হাসপাতালে সংরক্ষিত থাকে না। তাই তাঁর জ্বরের কারণ হাসপাতালের তরফে বলা যাবে না।

মৃতের পরিবারের দাবি, শুক্রবার রাতে শিবপ্রসাদবাবুর পেটের যন্ত্রণা শুরু হয়। শনিবার ফের আইডি হাসপাতালে যান। অভিযোগ, জরুরি বিভাগের চিকিৎসকদের ভর্তির জন্য বারবার আবেদন করলেও তাঁরা বহির্বিভাগে দেখানোর নির্দেশ দেন। সকাল দশটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিবপ্রসাদবাবু। বেলা বারোটা নাগাদ পড়ে যান। এর পরেই তিনি মারা যান। চিকিৎসকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি সংক্রমণ হলে মস্তিষ্ক, লিভার, কিডনি-সহ একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপসর্গ হচ্ছে জ্বরের পাশাপাশি মাথা, হাত-পা এবং পেটে যন্ত্রণা। শিবপ্রসাদবাবুর রক্ত পরীক্ষা না হওয়ায় তাঁর ডেঙ্গি হয়েছিল কি না, জানা যায়নি। এ দিন শিবপ্রসাদবাবুর দিদি তনুশ্রী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হাসপাতালে দাঁড়িয়েও চিকিৎসা না পেয়ে ভাই মারা গেল। কত বার চিকিৎসকদের কাছে ছুটে গেলাম। কিন্তু ওঁরা কিছুই করলেন না।’’

Advertisement

এ দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে অপেক্ষারত একাধিক রোগী ও পরিজনের অভিযোগ হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থা নিয়ে। তাঁদের অভিযোগ, জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি করতে চান না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বহির্বিভাগের চিকিৎসককে দেখানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। তাই সেখানে বাড়তি চাপ পড়ে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কেউ অসুস্থ হয়ে গেলেও হাসপাতালের কর্মীরা তাঁকে অপেক্ষা করতেই বলেন। ফি-দিন বহু রোগী বহির্বিভাগে দেখানোর লাইনে অপেক্ষা করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। দুপুর ১২টার পরে কোনও পরীক্ষানিরীক্ষাও হয় না। ফলে আরও ভোগান্তি।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, হাসপাতালের প্যাথোলজি ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। তবে, স্বাস্থ্যভবনের এক কর্তা জানান, চিকিৎসক, নার্স এবং টেকনিশিয়ানের সঙ্কটে ভুগছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল। তাই বিপুল রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য দফতরে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনা প্রসঙ্গে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের প্রিন্সিপাল চিকিৎসক উচ্ছ্বল ভদ্র বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক।
জরুরি পরিস্থিতিতে সব সময় রোগী ভর্তি হয়। তবে, বহির্বিভাগ চলাকালীন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই সাধারণত ভর্তি প্রক্রিয়া চলে। শিবপ্রসাদবাবুর ক্ষেত্রেও সেটা হচ্ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন