জলের কুমির ডাঙায় উঠবে কি না, বুঝতে পারছে না মৌসম ভবন।
বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছিল ঘূর্ণাসুর। মঙ্গলবার সেটি পুরোদস্তুর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। মায়ানমার তার নাম দিয়েছে ‘কিয়ান্ত’। সে দেশের মোন উপজাতির ভাষায় এর অর্থ ‘কুমির’।
বঙ্গোপসাগরের সেই ‘কুমির’ ডাঙায় উঠবে কি না, তা নিয়েই এখন যাবতীয় জল্পনা। মৌসম ভবন বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি যে ভাবে ঘনঘন অভিমুখ বদলাচ্ছে তাতে মতিগতি বোঝাই দায়। এ দিন সে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে! কালীপুজোর আকাশে দুর্যোগের আশঙ্কা তাই খানিক কেটেছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর বলছে, শনিবার কালীপুজোর দিন বড়জোর হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে।
গত কয়েক বছর ধরে ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসে অনেক বেশি সফল হয়েছে মৌসম ভবন। ২০১৩ সালে অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় পিলিনের ক্ষেত্রে মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বিশ্বের প্রথম সারির দেশের বিজ্ঞানীদের থেকেও অনেক বেশি নিখুঁত ছিল। তা হলে এ বার নিশ্চিত ভাবে বলতে পারা যাচ্ছে না কেন?
মৌসম ভবন সূত্রের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিচ্ছে না। শীতও আসেনি। ঋতু বদলের সময়ে বঙ্গোপসাগরের আবহাওয়া অস্থির হয়ে রয়েছে। আবহাওয়ার এই অস্থিরতার ফলেই ঘূর্ণিঝড়টি খামখেয়ালি হয়ে পড়েছে। বারবার অভিমুখ বদলের ফলেই তার স্থলভূমিতে আছড়ে পড়া নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
অনেকেরই প্রশ্ন, খামখেয়ালি কুমির কি ফের মুখ ঘুরিয়ে এ রাজ্যের দিকে আসতে পারে? তেমন আশঙ্কা অবশ্য করছেন না আবহবিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, কিয়ান্ত তার বাঁ দিকে বাঁক নিচ্ছে। তাই ক্রমশ মায়ানমার থেকে এ রাজ্য হয়ে দক্ষিণ ভারতের দিকে সরে যাচ্ছে সে। আচমকা উল্টো দিকে বাঁক নিয়ে রাজ্যের দিকে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম। কুমিরের মুখে না পড়লেও তার লেজের ঝাপ্টা অবশ্য সইতে হতে পারে এ রাজ্যকে। ফলে বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাসের ব্যাখ্যা, ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রের দিকে বাঁক নেওয়ার ফলে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঠেলে ঢোকাবে। সেই জোলো হাওয়া থেকে মেঘ তৈরি হয়ে বৃহস্পতি ও শুক্রবার বৃষ্টি হতে পারে। ‘‘কালীপুজোর দিনও বৃষ্টির আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে হাল্কা বৃষ্টি হবে বলেই মনে হচ্ছে’’, বলছেন গণেশবাবু।
তবে ‘কুমির’ অন্ধ্রপ্রদেশে ঢুকবে নাকি মুখ ঘুরিয়ে ফের সাগরে ফিরে যাবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। আবহবিদদের একাংশ ২০১৩ সালের অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মাদি’র কথা বলছেন। সাগর থেকে স্থলভূমির দিকে এগোনোর পর ফের মুখ ঘুরিয়ে সাগরেই মিলিয়ে গিয়েছিল সে।