বেরিয়ে পড়েছে সোয়েটার। কলকাতায়। ছবি: সুমন বল্লভ
এক রাতেই বদলে গিয়েছে চারপাশ! মেঘ কেটে নীল আকাশ, ঘ্যানঘ্যানে বৃষ্টিকে সরিয়ে ঝকঝকে রোদ। জোলো হাওয়ার বদলে হাজির গা-জুড়োনো মোলায়েম উত্তুরে বাতাস!
রবিবার সকালে এমন আবহাওয়া দেখে অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন, শীত কি তবে প্রায় এসে গেল? নেট-দুনিয়াতেও রঙ্গ-রস, আলোচনার শেষ নেই। যেমন, নিম্নচাপের বৃষ্টি প্রসঙ্গে শনিবার এক জন হোয়াটসঅ্যাপে লিখেছিলেন, ‘এ বছর কি তা হলে জ্যাকেটের উপরে রেনকোট পড়তে হবে?’’ এ দিন সকালে তাঁর কাছে পাল্টা মেসেজ গিয়েছে, ‘ছাতি-বর্ষাতি ছেড়ে সোয়েটার ধরে ফ্যালো।’
সত্যিই কি সে রকম অবস্থা?
হাওয়া অফিসের তরফে অবশ্য তেমন ইঙ্গিত নেই। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষণ— এ স্রেফ নিম্নচাপ বিদায়ের জের। গভীর নিম্নচাপ পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে দূরে সরতেই তার প্রভাব কমেছে। সাগরের জোলো হাওয়াকে ঠেলে সরিয়ে পরিমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে উত্তুরে বাতাস। পরিষ্কার আকাশ আর উত্তুরে বাতাসের যুগলবন্দিতে এত দিনকার ঘেমো প্যাচপ্যাচে পরিবেশটা কেটেছে। ‘‘তাতেই খানিক স্বাদবদল। একটা শীত শীত ভাব।’’— মন্তব্য এক আবহবিদের।
আলিপুরের রেকর্ডে রবিবার কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময়ের স্বাভাবিক সর্বনিম্নের চেয়ে ১ ডিগ্রি কম। পুরুলিয়া, আসানসোল, শ্রীনিকেতনে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮-১৯ ডিগ্রির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। বাতাসে আর্দ্রতাও কমেছে, ফলে চামড়ায় টান। আলিপুরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস এ দিন বলেন, ‘‘উত্তুরে হাওয়া ঢুকতেই দক্ষিণবঙ্গে রাতের তাপমাত্রা কমছে। আগামী ক’দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৯ ডিগ্রির কাছাকাছি নামবে।’’
তাই বলে শীত যে এখনই আসছে না, সেটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন গণেশবাবুরা। ওঁদের বক্তব্য, কলকাতায় পুরোদস্তুর শীত পড়তে গেলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি হওয়া চাই। থার্মোমিটারে পারদ পতন শুরু হলেও তা এখনই ১৪ ডিগ্রিতে গিয়ে ঠেকবে না। সেটা কখন হবে?
আবহবিদদের জবাব, প্রতি ঋতুর মতো শীতেরও নিজস্ব একটা ছন্দ রয়েছে। সেই স্বাভাবিক ছন্দ বজায় থাকলে গোটা নভেম্বর, এমনকী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত পারদ ওঠা-নামা করবে। আর তা করতে করতেই ১৪ ডিগ্রির কাছাকাছি গিয়ে থিতু হবে। শীত তখন জাঁকিয়ে বসবে কলকাতা-সহ লাগোয়া দক্ষিণবঙ্গে।
অর্থাৎ, সোয়েটার-জ্যাকেট, লেপ-কম্বল, টুপি-মাফলারের ওম পুরোমাত্রায় পোহাতে আরও অন্তত এক মাস। আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা এ-ও বলছেন, আগে উত্তর ভারত ও লাগোয়া ঝাড়খণ্ড-বিহারে শীতের জাঁকিয়ে বসা চাই। তার পরে ওই তল্লাটের উপর দিয়ে বয়ে আসা হিমেল বাতাসই শীত আনবে দক্ষিণবঙ্গে।
ঘটনা হল, উত্তর ভারত বা ঝাড়খণ্ডে ঠান্ডা এখনও সে ভাবে পড়েনি। নয়াদিল্লির মৌসম ভবনের খবর: উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী অমৃতসরে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২.৭ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি বেশি। পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশের বহু অঞ্চলে তাপমাত্রার অধোযাত্রা শুরু হয়নি। রাঁচি, জামশেদপুরেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা তার উপরে। এই পরিস্থিতি কেন?
হাওয়া অফিসের ব্যাখ্যা: পুরোটাই একটা সুসংবদ্ধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার অঙ্গ। নিয়ম হল, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে ইরান-আফগানিস্তান হয়ে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া (পরিভাষায়, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) কাশ্মীর-হিমাচলে ঢুকে বৃষ্টি নামাবে, তুষারপাত ঘটাবে। তাতে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে জাঁকিয়ে ঠান্ডা পড়বে। ভারতীয় ভূখণ্ডে শীতের সূচনা হয় এ ভাবেই। কিন্তু এখনও কাশ্মীরে তেমন জোরালো ঝঞ্ঝা আসেনি। তাই উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে রাতের তাপমাত্রা হু-হু করে নামতে পারছে না। ‘‘স্বাভাবিক। নভেম্বরের অর্ধেকও তো পেরোয়নি। এ সময়ে তেমন জোরালো ঝঞ্ঝা আসবে কোত্থেকে?’’— পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছেন এক আবহবিদ।
এমতাবস্থায় সামনের দিনগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে হাওয়া অফিস। ভরসাও দিচ্ছে। এক আবহবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘আর ক’দিন গেলে একের পর এক ঝঞ্ঝা ঢুকতে শুরু করবে। উত্তর ভারতের তাপমাত্রা পাল্লা দিয়ে নামবে। দক্ষিণবঙ্গেও শোনা যাবে শীতের পদধ্বনি।’’