‘কুমির’ শেষ হয়েছে সাগরের জলেই। কিন্তু গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর থেকে তার লেজের ঝাপ্টার প্রভাব কবে কাটবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে ফের একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। ফলে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢোকা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। উল্টে ঘূর্ণাবর্তটি ফের গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে আসবে কি না, সে দিকেই নজর রাখছে হাওয়া অফিস।
আবহবিদদের একাংশ বলছেন, ঘূর্ণাবর্তটির জন্য কুমিরের লেজের ঝাপ্টার প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। বাধা পেতে পারে উত্তুরে হাওয়া। তাই ভরা কার্তিকেও হিমের আশা দূর অস্ত বলেই মনে করছেন অনেকে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস রবিবার বলেন, ‘‘ঘূর্ণাবর্তটির অবস্থা সোমবার আরও স্পষ্ট হবে।’’
এক সময় কালীপুজোয় রাত বাড়তেই হিম পড়ত। ভোরের দিকে ঘাস ভিজে যেত শিশিরে। কিন্তু আবহাওয়ার চরিত্র বদলাতে থাকায় বাঙালির ঋতু ক্যালেন্ডার থেকে হেমন্ত যেন উবে গিয়েছে! এখন বর্ষার মেজাজ কাটতে কাটতে শীত রাজ্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়। এ বছর অবশ্য পুজোর পরে হেমন্তের গন্ধ নাকে লেগেছিল। উত্তুরে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে মিলছিল শিশিরও। কিন্তু সে সব ছন্দ বিগড়ে দিয়েছে ‘কুমির’। শনিবার কালীপুজোর রাতেও ঘাম হয়েছে অনেকের।
গত সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝ়ড় দানা বেঁধেছিল। মায়ানমার তার নাম দিয়েছিল কিয়ান্ত। সে দেশের মোন উপজাতির ভাষায় এর অর্থ কুমির। গোড়ায় এ রাজ্যের দিকে মুখ ঘুরিয়েছিল কুমির। আবহবিদদের আশঙ্কা ছিল, ওড়িশা-বাংলা উপকূলে ধেয়ে আসতে পারে সে। কিন্তু ফিরতি বর্ষা বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু তাকে ঠেলে দক্ষিণ ভারতের দিকে পাঠিয়েছিল। পরে মধ্য ভারতের শুকনো হাওয়া কুমিরের দেহে ঢুকে তাকে দুর্বল করে দিয়েছিল। আবহবিদেরা বলছেন, কুমির না এলেও তার লেজের ঝাপ্টায় এ রাজ্যে সাগর থেকে জোলো হাওয়া ঢুকে পড়েছিল। তার জেরেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে, আকাশ মেঘলা ছিল।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনের তুলনায় কুমিরের লেজের ঝাপ্টা কিছুটা হলেও ফিকে হয়েছে। তার ফলে আকাশে মেঘ কমেছে। আগামী দিন কয়েক আকাশ সাফ থাকবে। কয়েক রাতের তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকতে পারে বলেই মনে করছেন আলিপুরের বিজ্ঞানীরা।
তবে আবহবিদদের কেউ কেউ এ-ও বলছেন, ঋতু বদলের এই সময়ে ঘূর্ণাবর্তের চরিত্রও চট করে বোঝা যায় না। কুমিরের মতিগতি বুঝতেও হিমশিম খেয়েছেম মৌসম ভবনের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা। তাই ঘূর্ণাবর্তটি হঠাৎ করে মর্জি বদল করলে ভাইফোঁটায় বৃষ্টি মিলতে পারে। আবার আচমকা পট পরিবর্তনে ফিরে আসতে পারে হেমন্তও।