National News

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মন্ত্রীর গাড়িতে লালবাতি, মানতে বাধ্য নই: বললেন অরূপ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করেন না। কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই লালবাতির অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁদেরই এক জন।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৭ ১৭:১৬
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ইমাম বরকতির পরে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ফের লালবাতি বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের গাড়ির মাথায় এখনও বনবন করে ঘুরছে লালবাতি। সোমবার সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরাতেও ধরা পড়ল সে ছবি। বিতর্ক শুধু রাজ্যে সীমাবদ্ধ থাকল না, সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমেও শিরোনামে উঠে এলেন অরূপ বিশ্বাস। মন্ত্রীর জবাব: কেন্দ্র নতুন নির্দেশিকা জারি করলেও রাজ্য এখনও লালবাতিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেনি। তাই লালবাতি খুলে ফেলতে তিনি নাকি বাধ্য নন। মন্ত্রী যা-ই বলুন, আইন কিন্তু বলছে, কেন্দ্রের এই নির্দেশ মানতে রাজ্যগুলি বাধ্য।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের গাড়িতে লালবাতি ব্যবহার করেন না। কিন্তু তাঁর মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই লালবাতির অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস তাঁদেরই এক জন। কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে লালবাতি-নীলবাতির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরেও অরূপ বিশ্বাসরা অনড়। তা নিয়ে সোমবার বিতর্ক ছড়াল গোটা দেশে। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে সোমবার শিরোনামে এলেন অরূপ। কী বলছেন মন্ত্রী? কেন এখনও লালবাতি খোলেননি গাড়ির মাথা থেকে? অরূপ বিশ্বাস মনে করছেন, কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা মানতে রাজ্যগুলি বাধ্য নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সরকার এখনও লালবাতির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তাই অন্য কোনও নির্দেশ মানতে আমরা বাধ্য নই।’’

দেশে ভিআইপি সংস্কৃতির রমরমা রুখতে লালবাতির ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সে নিষেধাজ্ঞা না মানার অভিযোগে বার বার জড়াচ্ছে বাংলার নাম। —প্রতীকী ছবি / ফাইল চিত্র।

Advertisement

আইন কিন্তু তা বলছে না। কেন্দ্রীয় সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে জানিয়েছে, শুধুমাত্র আপৎকালীন যানবাহনের ক্ষেত্রেই বেকন লাইট ব্যবহার করা যাবে। ভিআইপি-দের গাড়িতে আর ওই বাতি থাকবে না। কোন কোন গাড়িতে বেকন লাইট লাগানো যেতে পারে, তার তালিকাও প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের তৈরি করা এই তালিকা মেনেই রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করতে বাধ্য। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই অর্ডিন্যান্সে খুশি নয় বলে নবান্ন সূত্রের খবর। অর্ডিন্যান্স জারির আগে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া উচিত ছিল কেন্দ্রের, মত নবান্নের। আলোচনা না করে যে রকম একতরফা ভাবে অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ধাক্কা। বলছে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন শিবির। ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রকে চিঠিও পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। খবর নবান্ন সূত্রের। কিন্তু চিঠি পাঠানো হোক বা না হোক, আপাতত কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা মেনে চলা যে রাজ্যগুলির বাধ্যবাধকতা, তা নিয়ে কিন্তু সংশয় নেই। তা সত্ত্বেও অরূপ বিশ্বাস কী ভাবে গাড়িতে লালবাতি লাগিয়ে ঘুরছেন, সে নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: মোদীর কাছে দিদি, কটাক্ষ দিলীপেরও

রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, লালবাতির বিকল্প খুঁজে বার করতে তৎপর হয়েছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে নিয়ে লালবাতি-নীলবাতির ব্যবহার তুলেই দেওয়া হবে। কিন্তু তার বদলে ভিআইপি-দের গাড়ি চিনে নেওয়ার জন্য অন্য ব্যবস্থা করা হবে। ভিআইপি-দের গাড়িতে পতাকা লাগানোর ব্যবস্থা হবে বলে খবর। সেই ব্যবস্থা চালু করতে কোনও আইনি বাধা থাকবে না ঠিকই। কিন্তু যতক্ষণ না গাড়িতে পতাকা লাগানোর ব্যবস্থা চালু হচ্ছে, তত ক্ষণ পর্যন্ত লালবাতিই বহাল রাখা হবে, এমনটা হওয়ার কথা নয়। কেন্দ্রের পাঠানো নির্দেশিকা মেনে সব গাড়ি থেকে অবিলম্বে লালবাতি-নীলবাতি খুলে দিতে রাজ্য সরকার বাধ্য।

টিপু সুলতান মসজিদের প্রাক্তন শাহি ইমাম নুরুর রহমান বরকতির গাড়িতে লালবাতি থাকায় প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। কেন্দ্রের নির্দেশ মানতে তিনি বাধ্য নন বলে বরকতি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তীব্র বিতর্কের প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার হস্তক্ষেপ করে। ইমামের গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে নেওয়া হয়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে কী হবে? এ বারও কি সক্রিয় হবে প্রশাসন? তাঁর গাড়ি থেকেও কি খুলে নেওয়া হবে লালবাতি? নবান্নের তরফ থেকে এখনও কোনও সদুত্তর নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন