শিক্ষক-ঘাটতি আবার নিয়োগ করলেও বিপদ, সঙ্কটে মাদ্রাসা

শিক্ষকের অভাবে সর্বস্তরের স্কুল এবং কলেজ শুধু নয়, মার খাচ্ছে বহু মাদ্রাসার পঠনপাঠনও। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে মাদ্রাসা-মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩০
Share:

শিক্ষকের অভাবে সর্বস্তরের স্কুল এবং কলেজ শুধু নয়, মার খাচ্ছে বহু মাদ্রাসার পঠনপাঠনও। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে মাদ্রাসা-মামলা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। এই অবস্থায় বহু মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি নিজেদের মতো করে শিক্ষক নিয়োগ করে বেকায়দায় পড়েছে। কারণ, রাজ্য সরকার এই ধরনের নিয়োগের দায়িত্ব নিতে নারাজ। তারা বলছে, এই সব নিয়োগ বেআইনি।

Advertisement

শিক্ষকের অভাব এবং নিজেরা নিয়োগ করায় বিপত্তি— এই শাঁখের করাতের তলায় এখন অনেক মাদ্রাসাই। প্রায় আড়াই বছর আগে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন অবৈধ বলে রায় দিয়েছিল হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। তারও অন্তত এক বছর আগে থেকে রাজ্যের ৬১৫টি মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। ফলে সেখানকার পঠনপাঠন প্রায় শিকেয় উঠেছে। উচ্চ আদালতের সিঙ্গল বেঞ্চ থেকে ডিভিশন বেঞ্চ হয়ে মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। পড়াশোনা চালু রাখতেই তারা নিজেরা শিক্ষক নিয়োগের পথ নিতে বাধ্য হয়েছে বলে অনেক মাদ্রাসার অভিমত। কিন্তু তাতে যে আইন বা বিধিনিয়ম লঙ্ঘন করা হচ্ছে, সেটা খেয়াল না-রাখায় ওই সব মাদ্রাসা সমস্যার মুখোমুখি।

মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের বৈধতা নিয়ে মামলা করেন একটি মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালের ১২ মার্চ হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতি সম্বুদ্ধ চক্রবর্তী রায় দেন, ওই কমিশন অবৈধ। কমিশন ডিভিশন বেঞ্চে যায়। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ই বহাল রাখে। তার পরে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করে বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরাম নামে এক শিক্ষক সংগঠন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতও মামলার নিষ্পত্তির আগে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে।

Advertisement

দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় শিক্ষকের অভাবে অনেক মাদ্রাসাতেই পঠনপাঠনের হাল বেশ খারাপ। ২০১১-’১২ সালে মাদ্রাসাগুলিতে শিক্ষকের শূন্য পদ ছিল দু’হাজার। এখন তা বেড়ে প্রায় ৫০০০ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কিছু মাদ্রাসার পরিচালন সমিতি নিজেরাই শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিতে শুরু করে। মাদ্রাসা পর্ষদ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে অন্তত চারটি মাদ্রাসা ৩৫ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করেছে।

নিষেধ সত্ত্বেও এই নিয়োগ কেন?

মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার দেবকুন্ডা শেখ আব্দুর রজ্জাক মেমোরিয়াল গার্লস হাইমাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা স্থানীয় বিধায়ক শেখ সফিউজ্জামান বলেন, ‘‘২০০৬ সালে সরকারি অনুমোদন পাওয়ার সময় আমাদের মাদ্রাসায় ছাত্রী ছিল ২৪০ জন, শিক্ষিকা ছিলেন ছ’জন। এখন ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে ১৪০০ হলেও শিক্ষিকার সংখ্যা একই রয়েছে। বাধ্য হয়েই আমরা শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিয়েছি।’’ বসিরহাট আমিনিয়া হাইমাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক সরিফুল আমিন জানান, শিক্ষক না-থাকায় অনেক পড়ুয়া মাদ্রাসা ছেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় কিছু শিক্ষক নিয়োগ করা ছাড়া তাঁদের আর কোনও উপায় ছিল না। একই বক্তব্য পূর্ব মেদিনীপুরের মাজনা হাইমাদ্রাসা, গিমাগেড়িয়া ওয়েলফেয়ার হাইমাদ্রাসা এবং কাঁথি রহমানিয়া হাইমাদ্রাসার।

এ ভাবে নিয়োগ কি বৈধ?

রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসুদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘‘এ ভাবে নিয়োগ বেআইনি। রাজ্য সরকার ওই শিক্ষকদের বেতন দেবে না।’’ রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা অধিকর্তা আবিদ হোসেনের প্রতিক্রিয়া, মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। এই পরিস্থিতিতে যাঁরা নিয়োগ করছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্বে করছেন।

মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন বহাল রাখার দাবিতে যে-সব শিক্ষক সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁদের ফোরামও এই ধরনের নিয়োগের বিরুদ্ধে। ফোরামের সভাপতি ইসরারুল হক মণ্ডল বলেন, ‘‘বিভিন্ন মাদ্রাসা যে-ভাবে খুশিমতো শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিচ্ছে, তা বেআইনি। এই বিষয়ে আমরা শীর্ষ আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সব জানাব।’’

কিন্তু শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা যে লাটে উঠছে, সেটা তো ঠিক। বৈধ পথে শিক্ষক নিয়োগ হবে কবে?

প্রতিমন্ত্রী জানান, বিষয়টি বিচারাধীন বলেই নিয়োগ আটকে আছে। মামলার ফয়সালা হয়ে গেলে শিক্ষক নিয়োগ শুরু হয়ে যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন