অনটনকে হারিয়েই সফল হতে চায় হুগলির দুই মেয়ে

এক মেয়ের বাবা ফল বিক্রি করেন, অন্যজনের বাবা মিষ্টির দোকানের কারিগর। উচ্চশিক্ষার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই পড়াশোনার খরচ বহন করার করার। মাধ্যমিকে ভাল ফল করার পরে আরও পড়াশোনা আদৌ করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নই এখন উঁকি দিচ্ছে হুগলির দুই মেয়ে ও তাদের পরিবারের মনে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৪ ০২:১৫
Share:

প্রীতি পাল ও রিয়া সিকদার।—নিজস্ব চিত্র।

এক মেয়ের বাবা ফল বিক্রি করেন, অন্যজনের বাবা মিষ্টির দোকানের কারিগর। উচ্চশিক্ষার সাধ থাকলেও সাধ্য নেই পড়াশোনার খরচ বহন করার করার। মাধ্যমিকে ভাল ফল করার পরে আরও পড়াশোনা আদৌ করতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নই এখন উঁকি দিচ্ছে হুগলির দুই মেয়ে ও তাদের পরিবারের মনে।

Advertisement

হুগলি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়ে ৬০৮ নম্বর পেয়েছে ব্যান্ডেলের খোলাকলের প্রীতি পাল। সবক’টি বিষয়েই লেটার পেয়েছে সে। অঙ্কে ৯৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৯০ আর জীবন বিজ্ঞানে ৯০ পেয়েছে কোনও গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই। ইচ্ছে রয়েছে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হওয়ার। পরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা তার। বাবা শম্ভুনাথ পাল হুগলি ঘাট স্টেশনের কাছে একটি মিষ্টির দোকানের কারিগর। রোজগার যত্‌সামান্য। তাই মেয়ের এত ভাল ফলের পরেও তাঁর মনে আশঙ্কা চালাতে পারবেন তো মেয়ের পড়াশোনার খরচ।

প্রীতির মা লক্ষ্মীদেবী জানান, ছোট থেকেই মেয়ে হুগলি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে পড়েছে। সেখানকার শিক্ষক-শিক্ষিকারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন মেয়েকে। পড়াশোনা ছাড়াও ছবি আঁকা এবং নাচ শেখায় ঝোঁক ছিল মেয়েটির। পরিবারের অভাব তার সেই ইচ্ছায় লাগাম টেনেছে। পড়শি দিদিমা চন্দ্রা পালই ছোট থেকে পড়িয়ে এসেছেন প্রীতিকে। বুধবার একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির জন্য ফর্ম তুলেছে সে। কিন্তু বাবার যা রোজগার, তাতে কী ভাবে পরের ধাপগুলো পেরোবে, তা জানে না সে। শম্ভুবাবুর কথায়, “ছেলেমেয়েকে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার করতে গেলে প্রচুর খরচ। আমাদের মতো ঘরে সেই খরচ জোগাড় করা অসম্ভব। ১৪০ টাকা রোজে কাজ করি। মেয়ের জন্য বাড়িতে মাস্টার রাখতে পারিনি। এখন তো যা খরচ শুনছি, আমার সাধ্যের বাইরে।”

Advertisement

বলাগড়ের বারুজীবী কলোনির বাসিন্দা রিয়া সিকদার শ্রীপুর রাধারানী বিদ্যামন্দির উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিয়ে এ বার মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৪৫। ভৌত বিজ্ঞানে ৯৯, জীবন বিজ্ঞানে ৯৮ আর অঙ্কে ৯১ পেয়েছে সে। তার লক্ষ্য, বড় হয়ে সে হয় জয়েন্টে মেডিক্যাল পাশ করে নার্সিং করবে, না হলে রসায়নে অনার্স করে শিক্ষকতা করবে। আপাতত বলাগড় উচ্চ বিদ্যালয়ে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়বে বলে সে ঠিক করেছে। কিন্তু তার স্বপ্নেও কাঁটা হয়ে বিঁধছে অভাব। বাবা রতন শিকদার জিরাট স্টেশনের কাছে ডালা পেতে ফল বিক্রি করেন। জানালেন, আগে রেলের জায়গায় বসতেন। রেল সেখান থেকে তুলে দেয়। উপায় না দেখে কাছেই একটি দোকানের সামনে ডালা স্থানান্তরিত হয়েছে তাঁর। স্ত্রী বীনাদেবী মেশিনে সেলাই করে আর দু’-একটা বাচ্চাকে পড়িয়ে দু’পয়সা আয় করেন। তিনি বলেন, “আমরা গরিব মানুষ। ভবিষ্যতে মেয়েকে পড়াতে যা খরচ হবে, কোথা থেকে তা আসবে ভেবে পাচ্ছি না। তবে যতটা পারি, চেষ্টা করে যাব।” তিনি জানান, পরিবারের অভাবের কথা জেনে মাধ্যমিক পর্যন্ত গৃহশিক্ষকেরা অপেক্ষাকৃত অল্প টাকায় মেয়েকে পড়িয়েছেন। কিন্তু এর পরে কী হবে, আশঙ্কা তাঁর গলায়। রিয়ার কথায়, “বাবা-মা কতটা কষ্ট করে আমাকে পড়াচ্ছেন, জানি। আমি বড় হয়ে ওঁদের কষ্টের দাম দিতে চাই।” তবে পরে কী হবে, সে কথা এখনই ভাবতে চায় না রিয়া। সে জানে, দূরের লক্ষ্য পূরণের পথে প্রথম ধাপ উচ্চ মাধ্যমিক। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হতেই ক্লাস ইলেভেনের বইপত্তর নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছে সে। কোনও পরিস্থিতিতেই বইখাতা ছাড়বে না সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন