অসতর্ক হলেই নদীতে, তবু সারানো হয়নি সেতু

বছর দশেক আগে লোহার খাঁচার উপরে কাঠের পাটাতন পেতে সেতু তৈরি করে দু’পারের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর কোনওরকম মেরামতির কাজ হয়নি। একের পর এক বর্ষায় কাঠের পাটাতন বহু জায়গাতেই পচে গিয়ে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাথরপ্রতিমা শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৫
Share:

এখন সেতু যে অবস্থায়। ছবি: দিলীপ নস্কর।

বছর দশেক আগে লোহার খাঁচার উপরে কাঠের পাটাতন পেতে সেতু তৈরি করে দু’পারের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে আর কোনওরকম মেরামতির কাজ হয়নি। একের পর এক বর্ষায় কাঠের পাটাতন বহু জায়গাতেই পচে গিয়ে নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। কিছু জায়গায় ভেঙেও গিয়েছে। ফলে যে কোনও সময় গোটা সেতুই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকলেও নিরুপায় বাসিন্দারা। রাজ্যে নতুন সরকার আসার পরে বাম আমলে তৈরি ওই সেতুর সংস্কার হবে বলে আশা করেছিলেন স্থানীয় মানুষ। কারণ তা নিয়ে প্রশাসনের কাছে আগে বহু দরবারও করেছেন তাঁরা। কিন্তু নতুন সরকারের আমলেও পরিস্থিতির বদল হয়নি।

Advertisement

দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমা ব্লকের দুর্বাচটি পঞ্চায়েতের দুর্বাচটি ও গোপালনগর এই দুই গ্রামের মধ্যে যোগাযোগের জন্য বছর দশেক আগে শেলেমারি নদীর উপরে এই সেতু তৈরি হয়। তার আগে যাতায়াতে নৌকাই ছিল উপায়। তাতেও সমস্যার শেষ ছিল না। রাত হয়ে গেলে বন্ধ হয়ে যেত খেয়া পারাপার। তা ছাড়া ঝড়-বৃষ্টিতেও খেয়া বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হত বাসিন্দাদের। সেতুর জন্য বহু আবেদনের পরে তদানীন্তন সিপিএম বিধায়ক সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় নদীর উপরে লোহার বিম ও তার উপরে কাঠের পাটাতন দিয়ে সেতু তৈরি করে দিয়েছিলেন। কয়েক বছর পরে সেতুর সংযোগকারী গোপালনগর ও দুর্বাচটী এলাকার মানুষের গঙ্গাধরপুরে যাতায়াতের জন্য ইটের রাস্তাও তৈরি করা হয়। কাকদ্বীপ বাজার, পাথরপ্রতিমা বিডিও অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়াও ডায়মন্ড হারবার ও কলকাতায় আসার জন্য ওই রাস্তাই ছিল সহজ পথ। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেতু তো বটেই, ইটের রাস্তাও দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল হয়ে পড়েছে। আট থেকে দশ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই বেহাল রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতে হচ্ছে পাথরপ্রতিমা, গঙ্গাধরপুর, রাক্ষসখালি, গদামাথুরা, সীতারামপুর পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বেহাল ওই সেতু দিয়ে প্রতিদিন অন্তত হাজার পাঁচেক মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু সংস্কারের অভাবে প্রায়ই সেতুতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটলেও পঞ্চায়েত থেকে জেলা প্রশাসন উদাসীন বলে এলাকার মানুষের অভিযোগ। দিনের বেলায় তবু সাবধানে দেখেশুনে সেতুর বিপজ্জনক অংশ এড়িয়ে যাতায়াত করা গেলেও সন্ধের পরে সেতু দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই পারাপার করতে হয়। দুর্বাচটী গ্রামের পবন বায়েন, শেখ হাকিমদের অভিযোগ, নির্বাচনের সময় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা এলাকায় এসে ভোটে জিতলে সেতুর সংস্কার করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা আর বাস্তবের মুখ দেখেনি। এমনকী রাজ্যে ক্ষমতার পরিবর্তনের পর প্রশাসনের কাছে সেতু সংস্কারের জন্য অনেক আবেদন জানানো হলেও পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়নি।” গোপালপুর গ্রামের সিঞ্চয় মান্নার অভিযোগ, “এলাকার মানুষ সেতুর সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের জন্য পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত ও সড়ক কর্মাধ্যক্ষ রজনীকান্ত বেরা ও বিডিওকে গণস্বাক্ষর করে আবেদনও জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। সেতুর যা অবস্থা তাতে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে যতক্ষণ না ঘরে ফেরে দুশ্চিন্তায় থাকি।”

Advertisement

পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রজনীকান্ত বেরা সেতু নিয়ে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, “ওই সেতুর সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করতে গেলে যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন তা আমাদের তহবিলে নেই। জেলা প্রশাসনকে একাধিকবার সমস্যার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। এই অবস্থায় আমি অসহায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন