আতঙ্কিত রেললাইনের ধারের মহিলারা

বসিরহাটের গ্রামে গণধর্ষিতা মহিলার ঠাকুমা জানালেন, আগেও তাঁদের পরিবারের এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কে, লোকলজ্জায় সে কথা পুলিশকে জানাতে পারেননি। গণধর্ষিতা বধূর পরিবারের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করতে এসেছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। তাঁদের শুনতে হয়েছে, “এখন এসেছেন ভাল কথা। কিন্তু যখন থাকবেন না, তখন আমাদের বাঁচাবে কে?”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

লাইনের পাড় ধরে গ্রামে ঢুকছেন প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র।

বসিরহাটের গ্রামে গণধর্ষিতা মহিলার ঠাকুমা জানালেন, আগেও তাঁদের পরিবারের এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছিল দুষ্কৃতীরা। আতঙ্কে, লোকলজ্জায় সে কথা পুলিশকে জানাতে পারেননি। গণধর্ষিতা বধূর পরিবারের সঙ্গে মঙ্গলবার দেখা করতে এসেছিলেন বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল। তাঁদের শুনতে হয়েছে, “এখন এসেছেন ভাল কথা। কিন্তু যখন থাকবেন না, তখন আমাদের বাঁচাবে কে?”

Advertisement

গত ৩ জুন বসিরহাটের উত্তর বাগুন্ডি গ্রামে রেললাইনের ধারে ঝুপড়িতে থাকা এক বধূর উপরে অত্যাচার চালায় চার দুষ্কৃতী। শিশুকন্যার সামনেই মায়ের গলায় ভোজালি ধরে গণধর্ষণের অভিযোগ পেয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে নুরুল আমিন মোল্লা, আরিফ মোল্লা, শেখ ময়না ওরফে হাফিউল্লা এবং উৎপল মণ্ডলকে। ঘটনার পরে গ্রামে যান চন্দন সেনের নেতৃত্বে বাম বুদ্ধিজীবীদের একটি দল। মঙ্গলবার আইনজীবী ভারতী মুৎসুদ্দির নেতৃত্বে আসেন আরও কয়েক জন। অত্যাচারিতা মহিলা আপাতত লিলুয়ার একটি হোমে আছেন। তাঁর ঘরের সামনে পুলিশি পাহারা আছে। কিন্তু তাতেও ভয়ে সিঁটিয়ে আছে পরিবারটি। সেই আতঙ্ক এ দিন ফুটে উঠেছে তাঁদের কথার্বাতায়।

বসিরহাট স্টেশন থেকে রেললাইন ধরে প্রায় দশ মিনিটের হাঁটা পথ পার হলে বাঁ দিকে পড়বে উত্তর বাগুন্ডি। লাইনের পাশে পলিথিনে ছাওয়া এবং দরমার বেড়া দেওয়া কয়েকটি ঘর। তারই একটিতে থাকেন ওই বধূ। প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কাছে ওই মহিলার নিকট আত্মীয়ারা জানান, বসিরহাট স্টেশনে নেমে গ্রামে আসতে গেলে অধিকাংশ মানুষই লাইনের উপর দিয়ে আসেন। তখনই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা। মহিলাদের সম্মানহানির ঘটনা আকছার ঘটে। বাধা দিতে গেলে কাউকে গাছের সঙ্গে বেঁধে কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে লুঠপাট চালায়। ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান সকলে। গ্রামের মহিলাদের বক্তব্য, “আপনারা চলে গেলে আমাদের রক্ষা করবে কে!”

Advertisement

এলাকাতে পুলিশ পিকেট থাকা সত্ত্বেও বাসিন্দারা আতঙ্কিত। ভারতীদেবী বার বার বলেন, “আপনাদের সব অসুবিধার কথা বলুন। প্রয়োজনে আমরা ঘটনাটি রাজ্যস্তরে নিয়ে যাব।’’ এই কথার জবাবেও বেশিরভাগ মহিলা কেবলই ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। কেউ কিছু বলতে অস্বীকার করেন।

ভারতীদেবী পরে বলেন, ‘‘এখানে দুষ্কৃতীরা এতটাই সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। পুরুষ সঙ্গীদের গাছে বেঁধে মহিলাদের উপরে অত্যাচারের মতো ঘটনা ঘটছে। আগেও এখানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এখানে ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা সরকারকে বলব। মহিলা কমিশনের কাছে যাব।” উপযুক্ত তদন্তের দাবি করেন তিনি। পরে বসিরহাট থানায় গিয়ে যে সব অপরাধী এখনও বাইরে ঘোরাফেরা করছে, অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার দাবি করেন তাঁরা। গণধর্ষণে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্মারকলিপি দেন। তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন