বন্ধ প্রগতি শিল্পী সংস্থা সাধারণ পাঠাগার। ছবি: রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়।
দীর্ঘদিন ধরে কোনও কর্মী নেই। বছর খানেক আগে অবসর নিয়েছেন একমাত্র গ্রন্থাগারিক। ফলে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে পাঠাগার। পাঠাগারে লক্ষ লক্ষ টাকার বই ও আসবাবপত্র পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ পাঠক থেকে স্কুল-কলেজের পড়ুয়ারা। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের খিলাগ্রাম পঞ্চায়েতের গৌরাঙ্গচক গ্রামের প্রগতি শিল্পী সংস্থা সাধারণ পাঠাগার এবং শহিদ অম্বিকা গ্রামীণ পাঠাগার বর্তমানে এমনই অবস্থায়।
জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক তুষার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই দু’টি পাঠাগার যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা আমার জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, ১৯৮২ সাল নাগাদ প্রগতি শিল্পী সংস্থা সাধারণ পাঠাগার স্থাপিত হয়। পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। সদস্য সংখ্যা তিনশোর ওপর। সাদারম পাঠর-পাঠিকা ছাড়াও বহিরাগত পড়ুয়া, স্কুল-কলেজ ছাত্র-ছাত্রীরা এই পাঠাগারের উপরে নিভর্রশীল। কিন্তু ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে পাঠাগারটির গ্রন্থাগারিক অবসর নেওয়ার পর থেকেই লোকাভাবে বন্ধ হয়ে যায় পাঠাগারটি। নতুন করে কোনও নিয়োগ না হওয়ায় পাঠাগারটি আর খোলা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা ও নিয়মিত এই পাঠাগারের সদস্য ৮১ বছরের বৃদ্ধ প্রহ্লাদচন্দ্র মোদক বলেন, “গ্রামে এক সময় কোনও পাঠাগার ছিল না। আমরা গ্রামের কয়েকজন মিলে এই পাঠাগার তৈরি করেছিলাম। গ্রামের মোদক পরিবার থেকে এই পাঠাগারের জন্য জমি দান করা হয়। এরপর গ্রামবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ ও নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে পাঠাগার নির্মাণের অর্থ সংগ্রহ করা হয়। গ্রামের অনেকে এই পাঠাগার নির্মাণে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছিলেন।” তিনি আরও জানান, পাঠাগার তৈরি হওয়ার পরে তাঁরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে বই সংগ্রহ করেন। পরে এটি সরকারি অনুমোদন পায় এবং একজন গ্রন্থাগারিকও নিযুক্ত হন।” পাঠাগারে বিভিন্ন ধরনের বইয়ের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কথা ভেবেও বইপত্রের ব্যবস্থা ছিল। ফলে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠাগারটি অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। কিন্তু গত বছর গ্রন্থাগারিক অবসর নেওয়ার পরে নতুন কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে লোকাভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে পাঠাগার। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা প্রচণ্ড সমস্যায় পড়েছেন পাঠাগারের আর এক সদস্য গোপাল চন্দ্র মোদক বলেন, “পাঠাগারটি বন্ধ হলেও প্রতিমাসে বিদ্যুতের বিল আমরা কয়েকজন মিলে মিটিয়ে থাকি। কারণ, পাঠাগারে প্রচুর দামী বইপত্র। আসবাবপত্র রয়েছে। পাছে তা চুরি হয়ে যায় তাই রাতে নিরাপত্তার জন্য আলো জ্বালিয়ে রাখা হয়।”
প্রগতি শিল্পী সংস্থা সাধারণ পাঠাগার থেকে প্রায় হাফ কিলোমিটার দূরে শহীদ অম্বিকা গ্রামীণ পাঠাগার। এই পাঠাগারটিরও একই অবস্থা। কারণ, এই দুটি পাঠাগারেরই গ্রন্থাগারিক ছিলেন একজন। কাজের সুবিধার্থে তাই সপ্তাহে তিনদিন করে দু’টি পাঠাগার খোলা থাকত। শহীদ অম্বিকা গ্রামীণ পাঠাগারের সদস্য প্রবীণ দিলীপ কুমার বসু বলেন, “১৯৮৬ সাল নাগাদ আমার দাদা সনৎ কুমার বসু এবং কয়েকজন শিক্ষানুরাগী বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই সংগ্রহ করে আমার পিসিমা স্বর্গীয় কনকবালা বিশ্বাসের বাড়িতে এই পাঠাগারটি চালু করেন। পাঠাগারে বইয়ের সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সদস্য সংখ্যা প্রায় আড়াইশো। কিন্তু গ্রন্থাগারিকের অবসরের জন্য এটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাঠক-পাঠিকারা বিশেষ করে ছাত্রছাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” দু’টি পাঠাগারেরই গ্রন্থাগারিক অবসরপ্রাপ্ত সুশান্ত ভারতী বলেন, “এই দু’টি পাঠাগার সপ্তাহে তিনদিন তিনদিন করে খোলা হত। ২০১৩ সালে আমি অবসর গ্রহণের পরে নতু কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। ফলে দু’টি পাঠাগার একইসঙ্গে বন্ধ হয়ে যায়।”