ট্রাক-চালকদের মার, বাণিজ্য বন্ধ পেট্রাপোলে

ফের বন্ধ হল বনগাঁর পেট্রাপোল বন্দরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি। অভিযোগ, এ দেশ থেকে ওপারে বেনাপোলে ট্রাকে পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাকচালক ও খালাসিদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বুধবার থেকে পেট্রাপোল বন্দরে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তাঁরা বন্দরে প্রতিবাদ সভা, মিছিল এমনকী নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান বিক্ষোভও করেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পেট্রাপোল শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৩
Share:

ট্রাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ

ফের বন্ধ হল বনগাঁর পেট্রাপোল বন্দরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রফতানি। অভিযোগ, এ দেশ থেকে ওপারে বেনাপোলে ট্রাকে পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাকচালক ও খালাসিদের উপরে অত্যাচার করা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে বুধবার থেকে পেট্রাপোল বন্দরে শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তাঁরা বন্দরে প্রতিবাদ সভা, মিছিল এমনকী নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান বিক্ষোভও করেন। ফলে এ দিন আমদানি-রফতানি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার এ দেশের ট্রাক শ্রমিকদের দু’টি সংগঠনের তরফে পেট্রাপোল শুল্ক দফতরের ডেপুটি কমিশনার শুভেন দাশগুপ্তর কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের দাবি জানানো হয়। ওই দিন তাঁরা বেলা ১২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। এর পর বুধবার সারাদিন কাজে হাত লাগাননি তাঁরা। ট্রাক-শ্রমিকদের অভিযোগ, বেনাপোল বন্দরে পণ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে ঢোকার পরে কখনও ট্রাক থেকে মালপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। কখনও তাঁদের মোবাইল ফোন, টাকা লুঠ করা হচ্ছে। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হচ্ছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বেনাপোল বন্দরে এ পার থেকে যাওয়া ট্রাক থেকে কাপড়, চাল, গাড়ির যন্ত্রাংশ-সহ প্রচুর মালপত্র লুঠ হয়। ট্রাক শ্রমিকদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোনওরকম সহযোগিতা করছে না। এমনকী কয়েকটি ক্ষেত্রে উল্টে তাঁদের উপরেই ঘটনার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ট্রাক নিয়ে ওপারে গেলে নিরাপত্তার আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না।

Advertisement

রমজান মণ্ডল প্রায়ই বেনাপোলে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে যান। তিনি বলেন, “দিন কয়েক আগে বেনাপোলে আমার ট্রাক থেকে বেশ কিছু কাপড় চুরি হয়ে যায়। ওখানে আমাদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। নিরাপত্তার আশ্বাস না পেলে আর মাল নিয়ে বাংলাদেশে যাব না।” পলাশ নামে আর এক ট্রাকচালকের দাবি, “ওপারে যাওয়ার পর আমাকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”

পেট্রাপোল বন্দরে সার
বেঁধে দাঁড়িয়ে পণ্যবোঝাই ট্রাক।

Advertisement

কড়া পাহারা পেট্রাপোলে।
ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

শুভেনবাবু বলেন, “বুধবার ট্রাকশ্রমিকদের কর্মবিরতির জেরে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় প্রায় ২ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। দফতরের আধিকারিকদের বলা হয়েছে বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করতে।” ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া পেট্রাপোল বন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। আগামী মে-জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। শুভেনবাবুর মতে, ওই কাজ শেষ হয়ে গেলে বন্দরে ট্রাক রাখার সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। কমবে চুরির সমস্যাও।

পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “বেনাপোলে এ দেশের ট্রাকশ্রমিকদের নিরাপত্তা না থাকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে বলা সত্ত্বেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এ ভাবে চলতে থাকলে এই বন্দর নিয়ে রফতানিকারীদের মোহভঙ্গ হতে পারে।”

বেনাপোল সি অ্যান্ড এফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কার্গো সম্পাদক মহম্মদ মাহাবুবুর রহমান বলেন, “বেনাপোল বন্দরে দু’দেশের ট্রাক থেকেই মালপত্র চুরি হচ্ছে। আমরা বন্দর সুরক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের কাছে বিষয়টি জানিয়েওছিলাম। কিন্তু সমস্যা মেটেনি। ফলে এদেশের ট্রাকচালকেরাও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন