ছেলেকে স্নেহচুম্বন বাবার।--নিজস্ব চিত্র।
স্কুল থেকে মার্কশিটটা হাতে পেয়েই বিশ্বজিৎ ছুট লাগিয়েছিল বাবার খোঁজে। বেশ খানিকক্ষণ খোঁজাখুজির পরে দেখেছিল বাবা সমর নাগ তখন ব্যস্ত উলুবেড়িয়ার লতিবপুর রেললাইনের ধারে ডাব বিক্রি করতে। ঠা ঠা রোদ্দুর ভরা খোলা আকাশের নীচে ডাব বিক্রেতা বাবা ছেলেকে আসতে দেখে তাকিয়েছিলেন। কাছে এসে বাবাকে নিজের রেজাল্টের খবর দিতেই ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন বাবা। চোখ ভেসে গেল জলে। ছলছল বিশ্বজিৎও।
স্কুলের গণ্ডী পেরনোর সৌভাগ্য হয়নি কোনওদিন সমরবাবুর। তাই রেজাল্ট দেখে ভেবেছিলেন ছেলে পাশ করেছে। কিন্তু শুধু পাশ নয়, যখন ছেলে রেজাল্ট পড়ে শোনাল তখন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ছেলে পাঁচটি লেটার নিয়ে মোট ৫৮৭ নম্বর পেয়ে বাণীবন যদুরবেড়িয়া বিদ্যাপীঠ থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে।
দশ বাই বারো ফুট টালির ঘরে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে সমরবাবুর সংসার। আয় বলতে সকালে বেড়িয়ে পাড়ার গাছ থেকে ডাব সংগ্রহ করে রাস্তায় রাস্তায় ডাব বিক্রি করা। দিনে বড়জোর ১০০-১৫০ টাকা। চারজনের সংসার কোনওরকম চলে। অভাবের সংসার হলেও সন্তানের প্রতি আঁচ আসতে দেননি সমরবাবু ও তাঁর স্ত্রী রেখাদেবী। তাঁদের কথায়, “ছেলেকে আমরা মানুষের মতো মানুষ করবই। ছেলের শখ চিকিৎসক হবে। সেই শখ পূরণের জন্য প্রয়োজন হলে বাড়ি বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে হলেও অর্থের জোগান দেব।”
গৃহশিক্ষক বলে কিছু ছিল না বিশ্বজিতের। পাড়াতেই একটি কোচিং সেন্টারে পড়ত। মাস্টারমশাই জয়দেব মান্না বললেন, “ছোটবেলা থেকেই বিশ্বজিত পড়াশোনায় ভাল। এমনকী মাধ্যমিকের আগে বেশ কিছুদিন অসুস্থও হয়ে পড়েছিল। পয়সার অভাবে বাড়ির লোক ঠিকমতো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি। প্রত্যেকদিনই পরীক্ষা দিতে আমি নিয়ে যেতাম। জানতাম পাড়ার মুখ উজ্বল করবে।”
বিশ্বজিতের কথায় স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাকে খুব সাহায্য করেছেন। মাধ্যমিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে নিজের পড়ার খরচ চালানোর জন্য এখন সে ছাত্র-ছাত্রী পড়াতে শুরু করেছে। চোখে একটাই স্বপ্ন। চিকিৎসক হতে চায় বিশ্বজিৎ। কিন্তু তার জীবনের বড় বাধা আর্থিক সঙ্কট। বিশ্বজিতের কথায়, “আমি চেষ্টা করব। যদি কোনও সহৃদয় ব্যক্তি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তা হলে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করবই।”