তিন আসনে তিন নতুন মুখ সিপিএম-তৃণমূলে

বামপন্থীদের আগাম ঘোষণা ছিল, লোকসভার প্রার্থী বাছাইতে তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্তত হুগলি জেলার ক্ষেত্রে আগাম ঘোষণার সঙ্গে কিছুটা সঙ্গতিপূর্ণ সেই তালিকা। হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে কয়েক দশক জুড়ে দলের প্রার্থী ছিলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা রূপচাঁদ পাল।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৬:৪০
Share:

বামপন্থীদের আগাম ঘোষণা ছিল, লোকসভার প্রার্থী বাছাইতে তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্তত হুগলি জেলার ক্ষেত্রে আগাম ঘোষণার সঙ্গে কিছুটা সঙ্গতিপূর্ণ সেই তালিকা।

Advertisement

হুগলি লোকসভা কেন্দ্রে কয়েক দশক জুড়ে দলের প্রার্থী ছিলেন বর্ষীয়ান সিপিএম নেতা রূপচাঁদ পাল। গতবার তাঁকে হারিয়ে সাংসদ হন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী প্রয়াত গোপাল দাস নাগের মেয়ে রত্না দে নাগ। এ বারেও তিনি দলের প্রার্থী। যদিও ওই আসনে এ বার বদলে গিয়েছে সিপিএম প্রার্থীর মুখ। এক সময়ের জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ, পরে সভাধিপতির দায়িত্ব সামলেছেন বছর পঞ্চাশের প্রদীপ সাহা। জেলা রাজনীতিতেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ। পাণ্ডুয়ার বাসিন্দা প্রদীপবাবু এত দিন জেলা পরিষদে লড়ে এ বার রাজনীতির বৃহত্তর আঙিনায়। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই নেতাকে টিকিট দিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই দলীয় নেতৃত্ব দলে অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করল।

শ্রীরামপুরে বামেদের নতুন প্রার্থী ডিওয়াইএফ নেতা বছর চল্লিশ তীর্থঙ্কর রায় (মুন্না)। গত লোকসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুরে শোচনীয় পরাজয় হয় বামেদের। এ বার দেখার, নতুন এবং তরুণতর প্রার্থী এনে কতটা লড়াই সিপিএম দিতে পারে গঙ্গাপাড়ের এই লোকসভা কেন্দ্রে। শ্রীরামপুর কলেজে ছাত্র রাজনীতি থেকে তীর্থঙ্করের উত্থান। ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। একেবারে প্রথামাফিক এসএফআই থেকে দলের যুব সংগঠনের সদস্য হন। বর্তমানে তিনি সংগঠনের জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য। বৃহত্তর রাজনীতিতে সে ভাবে পরিচিত মুখ না হলেও জেলা রাজনীতিতে কিন্তু দাপটের সঙ্গেই রাজনীতি করে এসেছেন এই যুবক। দাদু দীনেন ভট্টাচার্য ছিলেন শ্রীরামপুরেরই প্রাক্তন সাংসদ। তীর্থঙ্কর বলেন, “আমাদের সংগঠনে প্রার্থী কে হল, সেটা বড় কথা নয়। বামফ্রন্টের নীতিকে সামনে রেখেই লড়াই করব।” গত বারের মতো কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেই এই আসনে দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল।

Advertisement

সিপিএমের শক্তিমোহন মালিক আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে গতবারের জয়ী হয়েছিলেন কংগ্রেস প্রার্থীকে হারিয়ে। এ বারেও তাঁকেই প্রার্থী করেছে দল। যদিও গত বারের থেকে এ বার পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। তৃণমূল শুধু সাংগঠনিক শক্তিই বাড়ায়নি, এক সময়ের বামেদের শক্ত ঘাঁটি আরামবাগে তাদের কর্তৃত্ব অনেকটাই শিথিল হয়েছে। শুধু যে দলীয় শক্তি কমেছে তাই নয়, আরামবাগে সংগঠনের স্তম্ভ অনিল বসু দল বহিস্কৃত হয়েছেন। গোঘাটে এক সময়ের জোনাল কমিটির সম্পাদক অভয় ঘোষের উপর অনেকটাই নির্ভর করত সংগঠন। ধৃত ওই সিপিএম নেতা এখন জেলে। সব মিলিয়ে কয়েক দশকে এ বারেই প্রথম কঠিন লড়াইয়ের মুখে বামপন্থীরা।

আরামবাগে দল কাকে প্রার্থী করে, তা দেখার জন্য তৃণমূলের অন্দরেও উৎসাহ ছিল। কেননা, শ্রীরামপুর এবং হুগলি কেন্দ্রে গত বারের জয়ী দুই প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রত্না দে নাগ যে টিকিট পাবেন, তা এক রকম নিশ্চিত ছিল। আরামবাগ কেন্দ্রে এ বার তৃণমূলের চমক আফরিন আলি অপরূপা পোদ্দার।

আরামবাগের রাজনীতিতে দলীয় কোন্দল সাংগঠনিক দিক থেকে তৃণমূলের বড় সমস্যা। বার বার সতর্ক করেও সেখানে সংগঠনকে সেই ভাবে বাগে আনতে পারেনি দল। তার উপরে শৈলেন সিংহ, সমীর ভাণ্ডারীর মতো মহকুমার পোড়খাওয়া নেতাদের সাংগঠনিক দিক দিয়ে দল সে ভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তার ফলে সংগঠনের কুশ্রী চেহরা বারে বারেই দেখা দিয়েছে। এটা একপ্রকার নিশ্চিত ছিল, দলীয় কোন্দল ঠেকাতে লোকসভায় আরামবাগে বাইরের কেউ প্রার্থী হবে।

দলের সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত বছর আঠাশের আফরিনা। গত চার বছর ধরে তিনি রিষড়া পুরসভার ভাইস-চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বললেন, “দিদি ভরসা রেখেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। অনুগত সৈনিকের মতো কাজ করে তাঁর ভরসার যোগ্য হয়ে ওঠার চেষ্টা করব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন