দক্ষিণের কড়চা

নবমপদ্ম-তোলা পালকিতে কে যায়? নরেন্দ্র মোদী না কি? আর ঝাঁটার হেলিকপ্টারে? অরবিন্দ কেজরীবাল? ভোটে যখন তাতছে তামাম বাংলা, পটশিল্পীরাই বা বাদ থাকেন কেন? এর আগেই সমকালীন একাধিক বিষয় পটচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামের পটশিল্পীরা। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন দ্বিতীয় টার্মিনালে বহুচর্চিত ‘দ্য আর্ট ওয়াক’-এর ইন্ডিয়া সিমলেন বিভাগেও ঠাঁই পেয়েছে তাঁদের কাজ। এ বার তালিকায় যোগ হল লোকসভা ভোটও। নয়ার মনু চিত্রকর পটে ফুটিয়ে তুলেছেন ভোট-চিত্র।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৫১
Share:

ভোটের পটে

Advertisement

হয় ঝাঁটা নয় ফুল

নবমপদ্ম-তোলা পালকিতে কে যায়? নরেন্দ্র মোদী না কি? আর ঝাঁটার হেলিকপ্টারে? অরবিন্দ কেজরীবাল? ভোটে যখন তাতছে তামাম বাংলা, পটশিল্পীরাই বা বাদ থাকেন কেন? এর আগেই সমকালীন একাধিক বিষয় পটচিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়া গ্রামের পটশিল্পীরা। মুম্বইয়ের ছত্রপতি শিবাজী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নতুন দ্বিতীয় টার্মিনালে বহুচর্চিত ‘দ্য আর্ট ওয়াক’-এর ইন্ডিয়া সিমলেন বিভাগেও ঠাঁই পেয়েছে তাঁদের কাজ। এ বার তালিকায় যোগ হল লোকসভা ভোটও। নয়ার মনু চিত্রকর পটে ফুটিয়ে তুলেছেন ভোট-চিত্র। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সচেতনতা প্রচার তো রয়েইছে, তার সঙ্গে পটের ছবিতে উঠে এসেছে পরিবেশ দূষণ, মোবাইল, ইভটিজিং-এর মতো বিষয়। কিন্তু রাজনীতি কেন? মনু বলেন, “এখন গোটা ভারতেই ভোটের হাওয়া। তাই এমন বিষয় বেছে নেওয়া।” সঙ্গের ছবিটি মনুর আঁকা পটের।

Advertisement

মিষ্টি দল

ঘাসফুল মিষ্টি, পদ্মফুলও তাই। কাস্তের ধার নেই, হাতুড়ির ভার নেই, হাত চাটে অধীর খদ্দের। বহরমপুরের কল্পনা মোড়ের কাছে দোকানের শো-কেসে সাজানো থরে থরে প্রতীক সন্দেশ! ওজন ৬০ গ্রাম, দাম ২০ টাকা। কার কাটতি বেশি দাদা? সকুণ্ঠ জবাব আসে: তৃণমূল। সে কী? দাদাবাবুর দেশে দিদিমণির বাজার! মিষ্টিতে কামড় বসিয়ে খদ্দেররা অবশ্য জানাচ্ছেন, ব্যাপারটা তেমন নয়। যেটা চোখ টানছে, সেটাই তুলছেন। এর মধ্যে রাজনীতি নেই। সরকারি কর্মী তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “সবুজ আর কমলা রঙে আঁকা ঘাসফুল এবং পদ্মই বেশি চোখ টানছে। আমি অবশ্য চারটেই কিনেছি।” ঘাসফুল সন্দেশে কামড় বসিয়ে কলেজ পড়ুয়া রিমা সাহু বলে দেন, “দেখতে ভাল লাগল বলেই নিলাম। আমি রাজনীতি ভালবাসি না। ভোট কাকে দেব তা-ও ভাবিনি।” দোকানের মালিক পূজন ঘোষ জানান, কলকাতার চিৎপুরে নতুনবাজার থেকে চারটি প্রতীকের ছাঁচ তৈরি করিয়ে এনেছেন। ছাঁচে ছানা বসার পরে দেওয়া হচ্ছে এসেন্স তৃণমূলে ভ্যানিলা, বিজেপি-তে কমলালেবু, সিপিএমে স্ট্রবেরি ও কংগ্রেসে আনারস।” কোনও দলের তরফ সন্দেশ সাপ্লাইয়ের বরাত অবশ্য এখনও মেলেনি। ভোটে না জিতে কেই বা মিষ্টিমুখ করে!

বুনো হাঁস

বনহংসী নাম না দিয়ে ‘বুনো হাঁস’ বললেই বোধহয় মানাত বেশি। বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে কাষ্ঠশালীর বনবীথি প্রকাশিত পত্রিকাটির বিষয় জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ ভাবনা। নব্য পত্রিকা। তবে প্রথম সংখ্যা থেকেই পরিচিত পরিবেশবিদদের লেখায় সমৃদ্ধ। চমৎকার চকচকে পাতায় পূর্বস্থলীর বিস্তীর্ণ জলার বাসিন্দা অজস্র মুরহেন, পোচার্ড, বেনে বউ কিংবা শঙ্খচিলের ছবি আকর্ষণীয়। প্রতি বছর, নিয়ম করে ৯ জানুয়ারি পক্ষী দিবসও উদযাপন করে বনবীথি। তবে প্রকৃতি প্রেমের সঙ্গে শুদ্ধ বানানের যেহেতু বিরোধ নেই, সেই দিকে নজর দেওয়াটা জরুরি।

সাংসদনামা

ভোটের আকাশে হাওয়া এলোমেলো। সেই হাওয়াতেই উলুবেড়িয়ার বিদায়ী সাংসদ তথা তৃণমূল প্রার্থী সুলতান আহমেদকে নিয়ে ‘উলুবেড়িয়ার সুলতান’ নামে বই বের করে ফেলেছে উলুবেড়িয়া মহকুমা সংস্কৃতি পরিষদ। এলাকার শিক্ষক থেকে বিদ্বজ্জন, কে কী ভাবে সাংসদের কাছে উপকৃত হয়েছেন, তা নিজেরাই লিখে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। তাতে স্তুতি যে থাকবে, বলাই বাহুল্য। সেটুকুই যা খুঁত। গত শনিবার স্থানীয় রবীন্দ্রভবনে মহাশ্বেতা দেবী বইটি আনুষ্ঠানিক বাবে প্রকাশ করেন। পাশেই সুলতান বসে ছিলেন লাজুক মুখে।

বাসে বসে

পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯-এ। ফেসবুকে ২০১৩। ডোমজুড়-কলকাতা কে-১১ বাসের নিত্যযাত্রীরা আস্ত কমিউনিটি পেজ তৈরি করে ফেলেছেন ফেসবুকে। প্রায় প্রতি দিনই লেখা হচ্ছে নানা মন্তব্য। কোনওটা নিছকই মজার, কোনওটা প্রয়োজনের। যেমন এক তরুণ নিত্যযাত্রী লিখছেন, “আজ মনে হয় কে-১১ বন্ধ। কাল বিকেলে কাটলিয়ায় রাস্তার পাশে ১২টা বাস দাঁড়িয়ে ছিল।” সঙ্গে-সঙ্গে উত্তর এসেছে নীচে, “কাল বন্ধ ছিল। আজ চালু হয়ে গিয়েছে। এই তো, আমি বাসেই বসে রয়েছি।” শুরুতে হাওড়ার মাকড়দহ থেকে পৈলান অবধি রুট চালু হলেও পরে কাটছাঁট করে ডোমজুড় থেকে রবীন্দ্রসদন পর্যন্ত বাস চলছে এখন। ২০১৩-য় পুজোর পরে পেজটি তৈরি করেছিলেন ডোমজুড়ের শুভায়ন রক্ষিত। বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শুভায়নের কথায়, “এই বাসে অনেকে সকাল বিকেল যাতায়াত করেন। তাঁরা যাতে সারা দিনই গল্পগাছা করতে পারেন, তাই এই পেজটি তৈরি করি।” স্কুলশিক্ষক জয়ন্ত মল্লিকের কথায়, “আমাদের এলাকার নতুন প্রজন্মের কাছে কলকাতা আর কে-১১ প্রায় সমার্থক। এই বাসে অনেকেরই ব্যক্তিগত স্মৃতি রয়েছে। সেই সব কথাও পেজে লেখা হচ্ছে।”

অক্সিজেনের জন্য

দশ হাজার গাছ দিয়ে গড়া অক্সিজেন ভিলেজ। বোটিং করার জন্য জলাধার। সেই জল চাষেও লাগে। এক দিকে ফটো গ্যালারিতে মনীষীদের জীবনী ও তথ্য, অন্য দিকে কৃষ্ণনগরের মূর্তি। রাত কাটানোর জন্য ঘর আছে ২৫টি। কংক্রিটের মঞ্চ রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য। চাইলে ঘুরে আসা যেতে পারে সুন্দরবন। তবে সবটাই বাণিজ্যিক শর্তে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুর স্টেশন থেকে সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে প্রায় ৫০ একর জমিতে গড়ে গড়ে উঠেছে এই ‘ইনস্পিরেশন ট্যুরিজম অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার’। ২০১২-য় ১৪টি দেশের প্রতিনিধিরা তার পত্তনের সাক্ষী ছিলেন।

বাধবে লড়াই

তাঁকে চেনেন অনেকেই। টানা পঁচিশ বছর কাঁধের স্ট্র্যাপে হারমোনিয়াম ঝুলিয়ে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসের কামরায়-কামরায় রবীন্দ্রগান শুনিয়ে আসছেন তিনি। শীতে-গ্রীষ্মে, লোকসভা-বিধানসভায় অবিচল। শুধু সময়ে-সময়ে পাল্টে যায় গানের নির্বাচন। “হাজারখানেক রবীন্দ্রসঙ্গীত মুখস্থ রয়েছে আমার। স্বরবিতান থেকে রোজ নতুন গান তুলতে চেষ্টা করি” বলে চলেন বর্ধমানের গুসকরার কাছে নুরপুর গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর তমাল দাস। শ্রোতা? কলকাতা-বোলপুর আসতে-যেতে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় থেকে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, চিত্রকর যোগেন চৌধুরী থেকে প্রয়াত সুচিত্রা মিত্র কত যে স্মৃতি জড়িয়ে। “সুচিত্রাদি আমার গলায় ‘আগুনের পরশমণি’ শুনতে খুব ভালবাসতেন। তেমনই সোমনাথবাবুর সঙ্গে দেখা হলে তিনি শুনতে চান ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’। সৌমিত্রবাবুর পছন্দ ‘প্রতি দিন তব গাথা গাব আমি সুমধুর’।” আপনি নিজে কী গাইতে চান? “যখন যেমনটা মনে হয় আর কী” তমাল হাসেন। অঝোর বর্ষা যখন ট্রেনের বন্ধ জানলায় ঝাঁপাচ্ছে তখন যেমন ‘বাদল বাউল’, আবার শীত ফুরোতেই তাঁর গলায় উঠে আসে ‘বসন্তে ফুল গাঁথল’। আর ভোট যখন দুয়ারে? তমাল গুনগুনিয়ে ওঠেন “বাধা দিলে বাধবে লড়াই লড়তে হবে!” তার পরেই থেমে “কিন্তু এ তো আসলে সংকীর্ণ রাজনীতির গান নয়। স্বাভিমানের গান। আমি সেই গানই গাই। আমি তো আসলে রবি ঠাকুরের দলে।” হারমোনিয়াম ফের প্যাঁ-পোঁ করে ওঠে। ট্রেনের কামরার গলিপথে ভেসে চলে ‘ওরে ভীরু, তোমার হাতে নাই ভুবনের ভার’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন