বিক্ষোভ এসপি অফিসেও

ধর্ষণে অধরা, ভাঙচুর ও আগুন পোলবায়

নাবালিকা ধর্ষণের অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার বাধল হুগলির পোলবায়। ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা অভিযুক্তের দোকান ভাঙচুর করে। জিনিসপত্র বাইরে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ চলে জিটি রোড এবং দিল্লি রোডে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পোলবা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৪ ০১:০৬
Share:

জ্বলে ছাই দোকানের জিনিসপত্র। বৃহস্পতিবার তাপস ঘোষের তোলা ছবি।

নাবালিকা ধর্ষণের অভিযুক্তকে পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারায় বৃহস্পতিবার ধুন্ধুমার বাধল হুগলির পোলবায়। ক্ষিপ্ত বাসিন্দারা অভিযুক্তের দোকান ভাঙচুর করে। জিনিসপত্র বাইরে ফেলে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবরোধ চলে জিটি রোড এবং দিল্লি রোডে। এর ফলে দুই রাস্তায় যানজটে নাকাল হন যাত্রীরা। জেলা পুলিশের কর্তারা বিশাল বাহিনী নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। এর আগে চুঁচুড়ায় পুলিশ সুপারের দফতরের সামনেও বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় পোলবার হোসেনাবাদ গ্রামের বছর নয়েকের ওই নাবালিকা স্থানীয় মুদির দোকানে চ্যুইংগাম কিনতে যায়। অভিযোগ, সেই সময় দোকানে আর কোনও ক্রেতা ছিল না। সুযোগ বুঝে দোকানদার শেখ নিয়ামত আলি তাকে দোকানের ভিতরে ডাকে। এর পর চকলেট হাতে দিয়ে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করে। ঘটনার কথা কাউকে না বলার জন্য সে নাবালিকাকে হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ। ওই দিন মেয়েটি বাড়ি ফিরে ভয়ে কাউকে কিছু জানায়নি। মঙ্গলবার সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বাড়ির লোকজন জানান, অসুস্থ অবস্থায় সে মায়ের কাছে সমস্ত ঘটনা বলে। সে দিনই মেয়েটির পরিবারের তরফে পোলবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় নিয়ামতের বিরুদ্ধে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত পলাতক। তাকে ধরতে তল্লাশি চলছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাও করা হয়েছে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে। তবে মেডিক্যাল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি। যদিও মেয়েটির বাবার অভিযোগ, অভিযুক্তকে আড়াল করছে পুলিশ। এলাকায় সে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে তাঁরা শুনেছেন। মেডিক্যাল রিপোর্টটিও পুলিশের সাজানো বলে তাঁদের সন্দেহ। এর পরই অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার রাতে গ্রামবাসীরা চুঁচুড়ায় এসপি অফিসে চড়াও হন। কিন্তু অফিস বন্ধ থাকায় তাঁরা ফিরে যান। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা নাগাদ ফের শ’তিনেক গ্রামবাসী এসপি অফিসের সামনে জড়ো হন। শুরু হয় বিক্ষোভ। বিজেপির কয়েক জন নেতা-কর্মীও বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীদের তরফে পাঁচ গ্রামবাসী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) তথাগত বসুর সঙ্গে দেখা করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাঁদের জানান, অভিযুক্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিক্ষোভকারীরা।

Advertisement

এর পরে গ্রামবাসীরা এলাকায় ফিরে যান। সেখানে আরও লোকজন জড়ো করে অভিযুক্তের দোকান ভাঙচুর করা হয়। দোকানের জিনিসপত্র বাইরে টেনে েনে ততে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে পুলিশ যায়। কিন্তু তাঁরা ক্ষিপ্ত জনতাকে আটকাতে পারেননি। পরে পোলবা থানা থেকে আরও পুলিশ আনা হয়। ইতিমধ্যেই বেলা ১টা নাগাদ জিটি রোড এবং দিল্লি রোডের সংযোগস্থলে অবরোধ করা হয়। গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই সড়কেই সার দিয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। বেগতিক বুঝে মগরা থানা এবং চুঁচুড়া পুলিশ লাইন থেকে বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তথাগতবাবু। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

অভিযুক্ত যুবকের বাড়িতে গিয়ে অবশ্য কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘর তালাবন্ধ ছিল। তথাগতবাবু বলেন, “অভিযুক্ত যদি গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, গ্রামবাসীরা তো ধরিয়ে দিতে পারেন। আর মেডিক্যাল পরীক্ষা করেন চিকিত্‌সকেরা। এ ব্যাপারে পুলিশের হস্তক্ষেপের প্রশ্ন অবান্তর।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন