পদস্থের মাথায় অধস্তন, ভোটকর্মীরা ধন্দে হাওড়ায়

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রিসাইডিং অফিসার। আর তাঁরই অধীনে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পোলিং অফিসার হিসেবে কাজ করবেন পদস্থ সরকারি অফিসার বা স্কুল শিক্ষক। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের মধ্যে এ ভাবেই ভোটের কাজ বিলি করে বিতর্ক তৈরি করেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। কিন্তু অধস্তনের অধীনে কী ভাবে কাজ করবেন উচ্চ পদাধিকারিরা?

Advertisement

দেবাশিস দাশ

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী প্রিসাইডিং অফিসার। আর তাঁরই অধীনে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পোলিং অফিসার হিসেবে কাজ করবেন পদস্থ সরকারি অফিসার বা স্কুল শিক্ষক। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কর্মীদের মধ্যে এ ভাবেই ভোটের কাজ বিলি করে বিতর্ক তৈরি করেছে হাওড়া জেলা প্রশাসন।

Advertisement

কিন্তু অধস্তনের অধীনে কী ভাবে কাজ করবেন উচ্চ পদাধিকারিরা?

নির্বাচন কমিশনের নিয়মে বেতনের স্তর বিন্যাসের নিরিখে ভোটের কাজে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের গুরুত্ব ও দায়িত্ব বণ্টনের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, ধরেই নেওয়া হয়, যিনি বেশি বেতন পান, ভোটের কাজে তিনিই বেশি দক্ষ। কিন্তু হাওড়ায় এই ‘উলটপুরাণ’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনেরই অন্দরে। জেলা প্রশাসনের এই কাজে তিনি যে অপমানিত, পরিষ্কার জানাচ্ছেন অনেকে। হাওড়া পুরসভার সাব অ্যসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার শৈবালকুমার চক্রবর্তীর কথায়, “২০ বছরের বেশি প্রিসাইডিং অফিসার হয়ে ভোটের কাজ করেছি। এমনটা কখনও দেখিনি। এত দিন শিক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ভোটকর্মী নিয়োগ হত। কিন্তু এ বার অধস্তনের নির্দেশ মেনে ভোটের কাজ করতে হবে। এটা কম অপমান?”

Advertisement

মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্ত বলেছেন, “বিষয়টি আমাদেরও নজরে এলেও কমিশনের কিছু করার নেই। কারণ ভোটের দায়িত্ব বণ্টন করে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। তাই ওদেরই বলা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে।” আর জেলা প্রশাসন কী বলছে? হাওড়ার মহকুমাশাসক বাণীব্রত দাস শনিবার বলেন, “২২-২৩ হাজার কর্মী নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ ধরনের ভুল হতেই পারে। আমরা সংশোধন করে নেব।”

মহকুমাশাসক সংশোধনের কথা বললেও ভোটকর্মীদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে যাওয়ায় শনিবার রাত পর্যন্ত বিভ্রান্তি থেকেই গিয়েছে। সালকিয়া বিদ্যাপীঠের চার জন অশিক্ষক কর্মীর কথাই ধরা যাক। তাঁদের মধ্যে দুই করণিক প্রদ্যুৎ ঘোষ ও সৈকত সামন্তকে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই দায়িত্ব পেয়েছেন ওই স্কুলেরই চতুর্থ শ্রেণির কর্মী তরুণ মাল ও অবিনাশচন্দ্র মণ্ডল। এত বছর ধরে বুথের পোলিং অফিসারের দায়িত্ব সামলানোর পরে কী ভাবে প্রিসাইডিং অফিসারের গুরুদায়িত্ব সামলাবেন, তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ওই চার ভোটকর্মী। প্রদ্যুৎবাবু বলেন, “২৫ বছর ধরে ভোটের কাজে যাচ্ছি। কিন্তু এমন ঘটনা দেখিনি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মী কী ভাবে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব সামলাবে, জানি না।”

একই অবস্থা বালির আনন্দনগর হাইস্কুল, সালকিয়া শিল্পাশ্রম স্কুল, সাঁত্রাগাছি রেল কলোনি স্কুল কিংবা বালিটিকুরি মুক্তরাম দে হাইস্কুল-সহ হাওড়ার একাধিক স্কুলের শিক্ষক-কর্মীদের। আনন্দনগর হাইস্কুলে ২১ জন শিক্ষককে যেখানে প্রথম পোলিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে, সেখানে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব পেয়েছেন এক জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সালকিয়া শিল্পাশ্রমের ১৯ জন শিক্ষককে দেওয়া হয়েছে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব, অথচ সেই স্কুলের দু’জন অশিক্ষক কর্মীকে করা হয়েছে প্রিসাইডিং অফিসার।

সাঁত্রাগাছি রেল কলোনি স্কুলের কোনও শিক্ষককে প্রিসাইডিং অফিসার না করে এক জন করণিককে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement