বিদ্যুৎ জোটেনি গ্রামে, নজর ফেরাতে অস্ত্র ‘না’

প্রতিশ্রুতি ছিল বিদ্যুৎ পৌঁছবে ক্যানিং মহকুমার ঘরে ঘরে। কিন্তু আজও বিদ্যুৎহীন মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভুয়ো প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তাই ইভিএমে ‘নোটা’কেই হাতয়ার করতে চাইছেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ। রাজ্যে ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যানিংয়ে এসে বলেছিলেন, দু’বছরের মধ্যে মহকুমার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন তিনি।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫৮
Share:

খুঁটিই বসেছে। আসেনি বিদ্যুৎ।--নিজস্ব চিত্র।

প্রতিশ্রুতি ছিল বিদ্যুৎ পৌঁছবে ক্যানিং মহকুমার ঘরে ঘরে। কিন্তু আজও বিদ্যুৎহীন মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা। ভুয়ো প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে তাই ইভিএমে ‘নোটা’কেই হাতয়ার করতে চাইছেন ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের একাংশ।

Advertisement

রাজ্যে ক্ষমতায় এসে ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্যানিংয়ে এসে বলেছিলেন, দু’বছরের মধ্যে মহকুমার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবেন তিনি। কিন্তু এখনও দু’বছর পেরিয়ে গেলেও বাসন্তী, গোসাবা, ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ তো দূরের কথা, বিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত পড়েনি। ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার সিংহেশ্বর, কালিকাতলা, গাংচরপাড়া, কালুগাছি, বিশ্বাসপাড়া, আখড়াতলা, বাজপাড়া, চণ্ডীবাড়ি, পূর্বচণ্ডীপাড়া, মোল্লাপাড়া, চুনাঘাটা, সস্তাখালি, সিংখালি, কুলতলি, কুড়িয়াভাঙা, তাতমারি, ৪২ ঘরপাড়া, ১৫ পাড়া, মুখার্জিপাড়া, সারেঙ্গাবাদ, চেঙোখালি, কালিচরপাড়া, বাসন্তী বিধানসভা এলাকার বাসন্তী, কাঁঠালবেড়িয়া, ভরতগড়, রামচন্দ্রখালি, ছাঁটুইপাড়া, মুড়োখালি, উত্তর মোকামবেড়িয়া, গোসাবা বিধানসভা এলাকার লাহিড়িপুর, সাতজেলিয়া, মোল্লাখালি, কুমীরমারি, আমতলি, পাঠানখালি, বিপ্রদাসপুর, বালি ১, ২, গোসাবা, সোনাগাঁ, দুলকি, রাঙাবেলিয়ার উত্তরডাঙা, রানিপুরের বাসিন্দাদের দিন কাটে আঁধারেই।

ক্যানিং ২ পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি শওকত মোল্লা বলেন, “ক্যানিং ২ ব্লকের সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হলে ১৬ হাজার খুঁটি লাগবে। এর মধ্যে ৮ হাজার খুঁটির জন্য অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪ হাজার খুঁটি পোঁতা হয়ে গিয়েছে। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক ভাবে সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছি।”

Advertisement

প্রতি ভোটে বিদ্যুতের প্রতিশ্রুতি ও পরে আশাভঙ্গে ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের অনেকের গলায় এ বার ‘বিদ্যুৎ পেলেই ভোট’-এর সুর। ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকার কালিকাতলা গ্রামের নিতাই লস্করের কথায়, “কাকে ভোট দেব বলুন তো? এতদিন সব দলের নেতাই এসে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা আর কাজে পরিণত হয়নি।” সস্তাখালি গ্রামের বাসিন্দা মুজিবর রহমান মোল্লার গলাতেই একই সুর। জানালেন, “কেউ কথা রাখেনি। তাই কাউকেই ভোট নয়। বোতাম টিপবো ‘না’-এ।

ভোটের মুখে বিদ্যুৎ নিয়ে এলাকার মানুষের ক্ষোভে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে সব দলই। পরিস্থিতি সামাল দিতে নিজেদের মতো করে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন সব দলের প্রার্থীরাই।

জয়নগর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রতিমা মণ্ডল যেমন বলেছেন, “আমার আগের সাংসদরা কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জানি না। কাজ করতে গেলে তো কিছুটা সময় দিতে হবে। আশা করছি, সাধারণ মানুষ আমাদের সরকারের উন্নয়নের কাজে ভরসা রাখবেন।” আরএসপি প্রার্থী সুভাষ নস্করের বক্তব্য, “২০১১ সালের মধ্যে আমরা সুন্দরবনে বিদ্যুদয়নের কাজ শেষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসনিক গাফিলতির কারণে তা শেষ করা যায়নি। বর্তমান সরকার প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাড়িয়ে দিলেও আজও ওই এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি।” কংগ্রেস প্রার্থী অর্ণব রায় এর মধ্যে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাই দেখতে পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কেন্দ্র সরকারের দেওয়া অর্থ খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য। সেই কারণে এই অবস্থা।”

এসইউসি প্রার্থী তরুণ মণ্ডল বলেন, “সুন্দরবনে বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে বহুবার সংসদে সরব হয়েছি। রাজ্য সরকারের বিভিন্ন বৈঠকেও বিষয়টি তুলেছি। কিছু জায়গায় নিজেও উদ্যোগী হয়ে নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুতের সমস্যার সমাধান করেছি।”

মহকুমাশাসক প্রদীপ আচার্য বলেন, “সম্প্রতি এ ব্যাপারে দু’টি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। জানা গিয়েছে, বিআরজিএফ ও গ্রামীণ বিদ্যুৎ যোজনা প্রকল্পের আওতাধীন ওই কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের অনুমোদন না আসায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে আশা করছি, নির্বাচনের পরেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা যাবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন