গ্রামবাসী ভোট বয়কট করায় গরু পাচারকারীরা এসে ছাপ্পা ভোট মেরেছে এই অভিযোগ তুলে হাসনাবাদের একটি বুথে ইভিএম ভেঙে দিলেন কিছু ভোটার।
ইছামতী ঘেঁষে টাকি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে জালালপুর ১৫৩ নম্বর দেওকাটি অবৈতনিক প্রাথমিক স্কুলের বুথে ৬৫৫ জন ভোটার। তাঁদের অভিযোগ, ইছামতী দিয়ে বাংলাদেশে নিয়মিত গরু পাচার হয়। বিএসএফ দেখেও দেখে না, অথচ নিরীহ গ্রামবাসীর চলাচলে বাধা দেওয়া হয়। পর্যটকদের জন্য নদীর ধারে ‘মিনি সুন্দরবন’ গড়ে তুলেছে টাকি পুরসভা। বিএসএফ চৌকিতে পর্যটকদের ভ্যানরিকশা প্রায়ই আটকানো হয়। ফলে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।
শুধু জালালপুর নয়। সীমান্ত ঘেঁষা অনেক গ্রামেই এখন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে, ইউপিএ সরকারের নির্দেশে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি চালানো বন্ধ করায় গরু পাচারকারীদের রমরমা হয়েছে। রাতবিরেতে গরুর ক্ষুরে নষ্ট হচ্ছে ধান-পাট-উচ্ছে-খেত। অনেকেরই বিশ্বাস, নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ ক্ষমতায় এলে বিএসএফ আর ‘ঠুঁটো জগন্নাথ’ হয়ে থাকবে না। যোগ্য জবাব দেওয়া হবে পাচারকারীদের।
কিছু দিন আগেই গরু পাচার এবং বিএসএফের আচরণের প্রতিবাদে ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন জালালপুরের বাসিন্দারা। তৃণমূল প্রার্থী ইদ্রিশ আলি, টাকির পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বিএসএফের অফিসারেরা গিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, ভোট মিটলেই পুরসভা নদীর ধারে আলো লাগাবে। ‘ওয়াচ টাওয়ার’ও বসানো হবে, যাতে বিএসএফ গ্রামের লোকজনকে অযথা বিরক্ত না করে সেখান থেকেই নজরদারি চালাতে পারে। তখনকার মতো গ্রামবাসী নিরস্ত হলেও গত কয়েক দিন ধরে বিএসএফ ফের গ্রামে চৌকি বসানোয় তাঁরা খেপে যান।
সোমবার ভোট শুরুর পরেই বোঝা যায়, অধিকাংশ গ্রামবাসী বয়কটের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেলা ২টো নাগাদ ১০-১৫ জন গরু পাচারকারী বুথে এসে চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘আমাদের জন্য যখন তোরা ভোট দেওয়া বন্ধ রেখেছিস, তখন ভোটটা আমরাই দিয়ে যাই।’ এক পোলিং অফিসারের মাথায় বন্দুক তারা বেশ কিছু ছাপ্পা ভোট মেরে চলে যায়। এর পরেই গ্রামের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ছাপ্পা দিয়েছে বলে অভিযোগ তুলে ভোটকর্মীদের বুথে আটকে তাঁরা বিক্ষোভ শুরু করেন। কিছু লোকজন বুথে ঢুকে ইভিএম ভেঙে দেন। বিকেল ৪টে নাগাদ হাসনাবাদের বিডিও এবং নির্বাচনী পর্যবেক্ষক বাহিনী নিয়ে গিয়ে ভোটকর্মীদের উদ্ধার করেন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, কর্তারা ফিরে যেতেই কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামে ঢুকে ব্যাপক লাঠি চালায়। পাঁচ মহিলা-সহ জনা দশেক আহত হন। রিটার্নিং অফিসার সৈকতকুমার দত্ত অবশ্য বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠি চালিয়েছে বলে আমাদের কাছে কোনও খবর নেই। ইভিএম ভাঙচুরের খবর পেয়েছি। বুথের প্রিসাইডিং অফিসার রিপোর্টে জানিয়েছেন, অজ্ঞাতপরিচয় কিছু লোকজন এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই বুথে পুনর্নির্বাচন চাওয়া হয়েছে।” বসিরহাটের তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “গ্রামবাসীর দাবি সঙ্গত। কিন্তু আমাদের কেউ ছাপ্পা মারেনি।”