রায়দিঘিতে চার খুনের মামলায় গ্রেফতার সিপিএম শিক্ষক-নেতা

রায়দিঘি-কাণ্ডে সিপিএমের এক শিক্ষক-নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সোমবার গভীর রাতে রায়দিঘির গিলেরছাট পঞ্চায়েতের তেঁতুলতলার বাসিন্দা, সিপিএমের মথুরাপুর-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিমল ভাণ্ডারীর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। শিক্ষক-নেতা বিমলবাবু ছিলেন পাশে দিদির বাড়িতে। স্ত্রীর মাধ্যমে মোবাইলে ডেকে এনে পুলিশ বিমলবাবুকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০১৪ ০৩:০৯
Share:

বিমল ভাণ্ডারী। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

রায়দিঘি-কাণ্ডে সিপিএমের এক শিক্ষক-নেতাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

Advertisement

সোমবার গভীর রাতে রায়দিঘির গিলেরছাট পঞ্চায়েতের তেঁতুলতলার বাসিন্দা, সিপিএমের মথুরাপুর-২ জোনাল কমিটির সম্পাদক বিমল ভাণ্ডারীর বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। শিক্ষক-নেতা বিমলবাবু ছিলেন পাশে দিদির বাড়িতে। স্ত্রীর মাধ্যমে মোবাইলে ডেকে এনে পুলিশ বিমলবাবুকে গ্রেফতার করে। তাঁর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিমলবাবুর স্ত্রী যমুনাদেবী। রায়দিঘিতে চার জনের খুনের ঘটনায় এফআইআরে বিমলবাবুর পাশাপাশি নাম আছে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়েরও। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের গুরুত্বপূর্ণ নেতা কান্তিবাবুকে গ্রেফতার করা হলে জেলা অচল করে দেওয়া হবে বলে ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী।

বিমলবাবুকে গ্রেফতার করা হলে রায়দিঘি-কাণ্ডে স্থানীয় তৃণমূল নেতা ওয়াজেদ খামারুকে কেন গ্রেফতার করা হবে না, তা নিয়ে সরব সিপিএম। নিহতদের পরিজন এবং জখমদের অভিযোগ অনুযায়ী, রায়দিঘি-কাণ্ডে অন্যতম চক্রী ওয়াজেদই। তাঁর নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বলে আহত ও নিহতদের পরিজনেরা অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ওয়াজেদের নাম এফআইআরে লিপিবদ্ধ হয়নি বলে সিপিএমের দাবি। পুলিশ বলছে ওয়াজেদ ‘ফেরার’।

Advertisement

গত শনিবার রাতে রায়দিঘির খাড়ি এলাকায় জমির দখল নিয়ে গোষ্ঠী সংঘর্ষে তিন তৃণমূল সমর্থক এবং এক সিপিএম সমর্থক নিহত হন। দলীয় সমর্থকদের পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে সিপিএমের ২১ জন নেতা-কর্মীর নামে অভিযোগ করে তৃণমূল। পরের দিন চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। তৃণমূল অবশ্য ঘটনার পর থেকেই সিপিএম-বিজেপি চক্রান্তের অভিযোগ করেছে। মুখ্যমন্ত্রীও একই অভিযোগ করেছেন। এমনকী, তদন্তের আগেই এই মর্মে বিধানসভায় নিন্দা প্রস্তাবও পাশ করিয়ে নেওয়া হয়েছে! ঘটনার তিন দিন পরে মঙ্গলবার মুখ খুলে রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায় সিপিএমের দিকেই আঙুল তুলেছেন। বিধানসভা চত্বরে এ দিন অভিনেত্রী-বিধায়ক বলেন, “তিন বছর আমি ওই এলাকার বিধায়ক। এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি। এত নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছে, চোখে দেখা যায় না!”

সরকারের উপরে চাপ বাড়াতে সচেষ্ট বিজেপি-ও। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ এ দিন দাবি করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিন। তা হলেই সত্য উদঘাটন হবে।” বিমলবাবুর গ্রেফতার নিয়ে কান্তিবাবু বলেন, “পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করবে আশা করি। কিন্তু শাসক দলের চাপ থাকলে ওরা কত নিরপেক্ষ থাকতে পারবে, তা ভেবে দেখতে হবে।”

ধৃতের বিরুদ্ধে ৩২৬ (গুরুতর ভাবে জখম করা), ৪০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩০২ (খুন), ৩৪ (দলবদ্ধ ভাবে খুন), ১২০বি (ষড়যন্ত্র) এবং ৩/৪ (বেআইনি ভাবে বিস্ফোরক রাখা) ধারায় মামলা করেছে পুলিশ। বিমলবাবুকে এ দিন ডায়মন্ড হারবার আদালতে হাজির করা হলেও কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। জামিনের আবেদন নাকচ করে বিচারক তাঁকে আট দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। বিমলবাবুর স্ত্রী যমুনাদেবীর অভিযোগ, “মহিলা-পুলিশ না এনেই রাতে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ জিনিস তছনছ করেছে। থানায় ডাকলেই স্বামী চলে যেতেন। এ ভাবে বাড়িতে হানা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না।” তাঁর দাবি, ঘটনার দিন থেকে বিমলবাবু জমি থেকে ধান তোলার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সন্ধ্যার পর ফেরেন। খুনের খবর পেয়ে রাত ১০টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোন।

তদন্তে এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ১০ জনের ‘স্পেশাল অপারেশন টিম’ গঠন করা হয়েছে। গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিন রায়দিঘি থানা ঘেরাও করে সিপিএম। আদালত চত্বরেও প্রতিবাদ-মিছিল করেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন