রবীন্দ্রনাথে ভর করে ভোটযুদ্ধে একলা পিনাকী

তিনি একাই দল। সে দলের সদস্য একা তিনি, প্রার্থীও তিনি। আর আছেন রবীন্দ্রনাথ। বাড়ির নাম ‘কবিতানগর’। বনগাঁ শহরের সুভাষপল্লি দক্ষিণ কলোনির সেই বাড়ির সামনে দু’টি বক্স। কিন্তু কবিতা নয়, সেখানে এখন সকাল-সন্ধে বক্তৃতা বাজছে। আর গান। প্রার্থীর নাম পিনাকীরঞ্জন ভারতী, বয়স ৬৮। তিনি নিজেই তাঁর দলের একটা গালভরা নাম দিয়েছেন ‘দ্য রিলিজিয়ন অব ম্যান রিভলভিং পলিটিক্যাল পার্টি অব ইন্ডিয়া’। প্রতীক ফুলের মালা। যদিও দেশের নিয়মে একা দল গড়া যায় না বলে প্রতি বার তিনি নির্দল হিসেবেই লড়েন। এ বারও বনগাঁ আসনে লড়বেন।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০০:৫৪
Share:

প্রচারে পিনাকীরঞ্জন। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

তিনি একাই দল। সে দলের সদস্য একা তিনি, প্রার্থীও তিনি।

Advertisement

আর আছেন রবীন্দ্রনাথ।

বাড়ির নাম ‘কবিতানগর’। বনগাঁ শহরের সুভাষপল্লি দক্ষিণ কলোনির সেই বাড়ির সামনে দু’টি বক্স। কিন্তু কবিতা নয়, সেখানে এখন সকাল-সন্ধে বক্তৃতা বাজছে। আর গান।

Advertisement

প্রার্থীর নাম পিনাকীরঞ্জন ভারতী, বয়স ৬৮। তিনি নিজেই তাঁর দলের একটা গালভরা নাম দিয়েছেন ‘দ্য রিলিজিয়ন অব ম্যান রিভলভিং পলিটিক্যাল পার্টি অব ইন্ডিয়া’। প্রতীক ফুলের মালা। যদিও দেশের নিয়মে একা দল গড়া যায় না বলে প্রতি বার তিনি নির্দল হিসেবেই লড়েন। এ বারও বনগাঁ আসনে লড়বেন।

প্রার্থীরা ভোট চাইতে ভোটারদের দোরে-দোরে যান। কিন্তু কবিতানগরে প্রার্থীর কথা শুনতে তাঁর দোরেই আসতে হচ্ছে ভোটারদের। যশোহর রোডের পাশে সেই বাড়ির সামনে গ্রিলের বড় গেট। তার ধারে টেবিল আর প্লাস্টিকের তিনটে লাল চেয়ার। দু’টি ছোট বক্স আর মাইক্রোফোন রাখা টেবিলে।

রোজ সকাল ৬টা থেকে ১০টা, আবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা ওখানেই চেয়ারে বসে মাইক ফুঁকছেন প্রার্থী ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মানবতাবাদে উজ্জীবিত নতুন বাংলা, নতুন ভারত, নতুন পৃথিবী গড়তে পিনাকীরঞ্জন ভারতীকে বিপুল ভোটে জয়ী করুন।’ শুনে মিনিট খানেকের জন্য থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথচলতি কেউ। চেনা কেউ আবার মুচকি হেসে বলে যাচ্ছেন ‘চালিয়ে যান।’

১৯৫৭ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের গোপালগঞ্জ জেলার নারকেলবাড়ি গ্রাম থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বর্ধমানে উদ্বাস্তু শিবিরে এসে উঠেছিলেন পিনাকী। সেখানে বছর তিনেক কাটিয়ে তাঁরা আসেন বনগাঁয়। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় এমএ করেও চাকরি-বাকরির দিকে যাননি তিনি। তার বদলে বাড়িতেই গড়ে তোলেন ‘কবিতীর্থ’ নামে একটি নৃত্যগীত-সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। কিছু দিন আগেও সেটির বেশ রমরমা ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে স্ত্রী বীণার মৃত্যুর পরে এক রকম একাই হয়ে গিয়েছেন নিঃসন্তান বৃদ্ধ।

এর আগে তিন বার বিধানসভা নির্বাচনে দাঁড়ালেও লোকসভা ভোটে পিনাকীবাবুর লড়তে নামা এই প্রথম। তাঁর দাবি, ২০০৯ সালেও লোকসভা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু হুমকি শুনে সরে আসতে হয়। যদিও তা নিয়ে কোথাও তিনি নালিশ করতে যাননি। এ বার এখনও তাঁর এলাকায় মনোনয়ন জমা শুরু হয়নি। কিন্তু তাঁর তোড়জোর শুরু হয়ে গিয়েছে।

আপাতত সকালে উঠে নিজেই গোটা উঠোন ঝাঁট দিয়ে ফেলছেন। সে উঠোনে ছোট্ট একটি বেদিতে রবীন্দ্র-মূর্তি। উঠোন ঢোকার মুখে গেটের দু’ধারে কবির নানা বাণী। ভিতরে স্থায়ী মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের বড় ছবি। গোটা বাড়ির পাঁচিল জুড়েই কবিগুরুর বাণী ও ছবি ঠাসা। সকাল-সন্ধে প্রচার বক্তৃতার ফাঁকে বেজে চলেছে নানা শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত। সুচিত্রা মিত্র সবচেয়ে প্রিয়, তাই তাঁর গানই বাজছে বেশি বার করে।

‘রিলিজিয়ন অব ম্যান’ না হয় রবীন্দ্রনাথের বক্তৃতার সংকলন। কিন্তু দলের নামে ‘রিভলভিং’ কথাটা কেন? পিনাকীবাবুর ব্যাখ্যা, “রিভলভ করা মানে তো ঘোরা। এখনকার রাজনীতি যে পথে চলছে আমি তাকে ঘুরিয়ে দিতে চাই।”

গেটের সামনে, পথেঘাটে তাঁকে দেখে চেনা-আধোচেনা এক-আধ জন মন্তব্য ছুড়ে দেন “আপনার কিন্তু এ বার জেতার সম্ভাবনা আছে।” কেউ ভুরু নাচিয়ে বলেন, কেউ না নাচিয়েই। সরল হাসিতে মুখ ভরে যায় বৃদ্ধের। বলেন ‘ধন্যবাদ।’

গত তিন বার কখনও হাজার দেড়েক, কখনও উনিশশো মতো ভোট পেয়েছেন। এ বার কত পাবেন?

পিনাকীবাবু নিরুত্তর। বক্সে বেজে ওঠে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে...।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন