ব্যারাকপুরের নানা বুথ পরিদর্শনের পরে নিজের বাড়িতে তড়িৎ তোপদার। ছবি: সুদীপ আচার্য
দিনভর এলাকা চষে বেড়ালেন ‘সিপিএম গুরু’। ‘তৃণমূল চেলা’-কে অবশ্য নিজের এলাকার বাইরে দেখাই গেল না। আর তাতেই ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ছাড়া ব্যারাকপুরের ভোট পর্ব মিটল নির্বিঘ্নে।
এলাকায় মাস্টারমশাই নামে পরিচিত তড়িৎ তোপদার ছ’বার নির্বাচিত হয়েছেন এখান থেকে। এ বার নিজে ভোটে না-দাঁড়ালেও সুভাষিণী আলির হয়ে সারা দিন চরকির মতো পাক মারলেন তিনি। বুথের সামনে ভিড় দেখলে কখনও রক্তচক্ষু দেখালেন। কখনও ভোটারদের বোঝালেন শিক্ষকসুলভ গলায়।
বরাহনগর থেকে বীজপুরে যাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য, তৃণমূলের সেই ডাকসাইটে নেতা অর্জুন সিংহ এই এলাকায় তড়িৎবাবুর ‘ভাবশিষ্য’ বলেই পরিচিত। এই সিংহের গর্জন অবশ্য এ বার আর তেমন শোনা গেল না। সারা দিনের মধ্যে কাঁকিনাড়া আর ভাটপাড়ার বাইরে গেলেনই না তিনি। শান্ত ভাবে মিডিয়া সামলালেন।
কেন তিনি এই ভোটে এ-রকম নেতিয়ে রয়েছেন? দলের কোনও নেতার উপরে গোসা করেই কি তাঁর এই সিদ্ধান্ত?
প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে অর্জুনবাবু বললেন, “আমার এলাকাটা তো আমাকে দেখতে হবে!”
দুর্মুখেরা অবশ্য এটাকে বলছেন ‘গুরু-শিষ্যের যুগলবন্দি’ এবং এই ‘যুগলবন্দি’তে অন্য কোনও ইঙ্গিত আছে কি না, সেই প্রশ্নও তুলছেন!
তৃণমূলের একটি অংশ অবশ্য জানিয়েছে, দলের একটি গোষ্ঠীর উপরে ক্ষিপ্ত হয়েই অর্জুনবাবু এ বার নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। অন্যত্র যখন তৃণমূলের বুথ দখল ও সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা, তখন ব্যারাকপুরে তেমন কোনও অভিযোগ ওঠেনি বললেই চলে। এ ব্যাপারে অর্জুনবাবুর নিরাসক্ত বক্তব্য, ‘‘আমরা কাউকে বাধা দিই না। সবাই ভোট দিক।”
অর্জুনবাবুর এই ভূমিকায় খুশি গুরুও। অশান্তির নিয়মমাফিক অভিযোগ তুলেও দিনের শেষে চওড়া হাসি হেসে তড়িৎবাবু বলেন, ‘‘কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবু মানুষ ভোট দিয়েছেন নিজেদের মর্জিমতো। সুভাষিণী জিতছেনই।’’
আর তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী এর জন্য দায়ী করছেন নির্বাচন কমিশনকে। তাঁর কথায়, “কমিশনের বাহিনী তৃণমূলকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের ভয় দেখিয়েছে, লাঠিপেটা করেছে। আমরা অভিযোগ জানিয়েছি।’’
এ যেন উলটপুরাণ!