বাংলা এ বার গাঢ় সবুজ

শেষ হাসি হাসলেন দীনেশই

গত পাঁচ বছরে কমই এলাকায় দেখা গিয়েছিল ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে, এমন অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। তা নিয়ে ক্ষোভও ছিল শিল্পাঞ্চলের মানুষের। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে নানা বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ হাসি হাসলেন তিনিই।

Advertisement

বিতান ভট্টাচার্য

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০২:৩৩
Share:

ব্যারাকপুরে জয়ের আনন্দে মাতলেন মহিলারাও। সজল চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

গত পাঁচ বছরে কমই এলাকায় দেখা গিয়েছিল ব্যারাকপুরের সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীকে, এমন অভিযোগ উঠেছে বারে বারেই। তা নিয়ে ক্ষোভও ছিল শিল্পাঞ্চলের মানুষের। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে ব্যারাকপুর কেন্দ্রে নানা বিরোধিতা সত্ত্বেও শেষ হাসি হাসলেন তিনিই।

Advertisement

শুক্রবার ব্যারাকপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে সকাল থেকেই শুরু হয়েছিল ভোট গণনা। প্রথম দফার গণনার সময় থেকেই এগিয়েছিল তৃণমূল। তবে ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন সিংহের শক্ত ঘাঁটি থেকে অবশ্য তেমন সাড়া পাননি দীনেশ। ওই বিধানসভা এলাকাটিতে শেষ পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে বিজেপিই। কিন্তু বীজপুর-সহ বাকি বিধানসভা এলাকাগুলিতে প্রথম থেকেই বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়েছিল তৃণমূল। গত লোকসভা নির্বাচনে ৫৬ হাজার ভোটে সিপিএমের তড়িৎ তোপদারকে হারিয়েছিলেন দীনেশ। কিন্তু এ বার চতুর্থ দফা গণনার পরেই দীনেশ এগিয়েছিলেন ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে। আর তখনই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতছে তৃণমূলই। দীনেশ তখন ব্যারাকপুরে নোনা চন্দনপুকুরের ভাড়া বাড়িতে বসে। সঙ্গে রয়েছেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। আত্মবিশ্বাসী গলায় বলেন, “১৩ দফা গণনার শেষে এই ব্যবধান ২লক্ষ পেরোবে।”

দীনেশের ধারণা যে এমন ভাবে মিলে যাবে, ব্যারাকপুরের শ্যামনগরের বাড়িতে বসে তখনও বিশ্বাস করতে পারেননি বাম-প্রার্থী সুভাষিণী আলি। সকাল থেকেই ভোট গণনাকেন্দ্রের আশপাশে দেখা যায়নি তাঁকে। দেখা মেলেনি বিজেপির রুমেশকুমার হান্ডারও। অসুস্থ থাকায় তিনি তখন সল্টলেকের বাড়িতে। চোখ টিভিতে। সকাল থেকে কেন্দ্রে বিজেপির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার খবর চাউর হয়ে যেতে তিনিও ভাবছিলেন ব্যারাকপুরের হাওয়া হয় তো ঘুরবে তাঁরই দিকে। কিন্তু নিরাশ হয়েছেন।

Advertisement

তবে সকাল থেকে গণনাকেন্দ্রের আশপাশে দেখা গিয়েছে কংগ্রেসের সম্রাট তপাদারকে। জেতার আশা তেমন ছিল না। ৩০৪৯১টি ভোট পেয়েছেন তিনি। ষষ্ঠ দফা গণনার পরেই কংগ্রেস কর্মীরা সৌজন্যের হাত মেলাতে শুরু করেন তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে। কেউ কেউ আবার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে নিজেরাও সবুজ আবির মেখে নেন।

বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ গণনাকেন্দ্রে এসে পৌঁছন দীনেশ ত্রিবেদী। তিনি গণনাকেন্দ্র ঘুরে দেখার খানিক পরে এসে পৌঁছন ব্রাত্য বসুও। এগারো দফার গণনা তখন শেষ। ততক্ষণে কেন্দ্রের বাইরে এসএন ব্যানার্জি রোডের উপর মিনি-ট্রাকে গান বাজাতে শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। ব্রাত্য বলেন, “এমন ফল প্রত্যাশিতই ছিল। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। এটা গণতন্ত্রেরই জয়।”

এ দিন, প্রথম দফা গণনা থেকেই জেলার বাম নেতৃত্ব বুঝে গিয়েছিলেন, হাওয়া তাঁদের পালে আর নেই। বেশিরভাগেরই মোবাইল ফোন সুইচ্ড অফ ছিল। বিশেষ করে, গত লোকসভা ভোটে বীজপুর বিধানসভা এলাকায় যেখানে সাত হাজার ভোটে এগিয়েছিল বামেরা, এ বারে তারা হেরেছে ৭৪ হাজারেরও বেশি ভোটে। পঞ্চম দফা গণনার পর থেকেই গণনাকেন্দ্রের মধ্যে থাকা বাম-কর্মীরা মহকুমাশাসক ও প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানাতে শুরু করেন, শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূল হামলা চালাচ্ছে। জগদ্দলে বাম কর্মী-সমর্থকদের দোকান-বাড়ি ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তিনি। এগারো দফা গণনার পরে খবর আসে সুভাষিণী আলির শ্যামনগরের বাড়ির কাছেই তাঁর গাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকেও হেনস্থা করার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। বিকেল তিনটে নাগাদ ভোটের ফল একেবারে নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরে বারাসতে পার্টির জেলা অফিসে চলে যান সুভাষিণী। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে এখানে নির্বাচন হয়নি। ভোটের আগে থেকেই যে ভাবে কর্মী সমর্থকদের ভয় দেখিয়ে, প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে কার্যত গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল, তা ভয়ঙ্কর।” তাঁর দাবি, সর্বত্র একই ঘটনা ঘটেছে। এখন শুরু হয়েছে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা। জগদ্দলে দোকান বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে, ব্যারাকপুর, মণিরামপুরে বাড়ি বাড়ি ঘুরে শাসানো হচ্ছে। বীজপুরে ভয়ে ঢুকতে পারছেন না আমাদের লোকেরা। একই প্রতিক্রিয়া রুমেশকুমারেরও। সম্রাট বলেন, “গণতান্ত্রিক অধিকারকে ভয়ঙ্কর ভাবে ধর্ষণ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন