সিন্ডিকেট-দ্বন্দ্বে তৃণমূল অফিসেই কর্মী খুন

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই পার্টি অফিস ভেসে যাচ্ছে যুবক কর্মীর রক্তে! ‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ অর্থাৎ একেবারে সামনে থেকে এক যুবককে গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি দুষ্কৃতীরা। এলোপাথাড়ি চপারের কোপ মেরেছে তাঁর ঘাড়ে-মাথায়। তার পরে রক্তে ভেজা চপার ও পাইপগান হাতে দোলাতে দোলাতে পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে বীরদর্পে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছে আততায়ীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৪ ০২:৫০
Share:

খুনের পরে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসেরই পার্টি অফিস ভেসে যাচ্ছে যুবক কর্মীর রক্তে!

Advertisement

‘পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ’ অর্থাৎ একেবারে সামনে থেকে এক যুবককে গুলি করেই ক্ষান্ত হয়নি দুষ্কৃতীরা। এলোপাথাড়ি চপারের কোপ মেরেছে তাঁর ঘাড়ে-মাথায়। তার পরে রক্তে ভেজা চপার ও পাইপগান হাতে দোলাতে দোলাতে পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে বীরদর্পে রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে গিয়েছে আততায়ীরা।

আতঙ্কের এই ছবি সোদপুরের স্বদেশি মোড়ের। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টেয়। এবং খুনের বিবরণ পাওয়া গিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে, দাবি পুলিশের। নিউ টাউন, দমদমের পরে এ বার সিন্ডিকেট-রাজের এমন রক্তাক্ত দাপট দেখলেন সোদপুরবাসী। হত্যাকাণ্ডের পরে ত্রাস এমনই গলা চেপে ধরেছে যে, আততায়ীদের চিহ্নিত করতে এগিয়ে আসেননি কেউই। পুলিশের দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা আততায়ীদের ভাল করে দেখেননি বলে জানান।

Advertisement

ঠিক কী ঘটেছিল?

পুলিশ ও তৃণমূল সূত্রের খবর, বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ স্বদেশি মোড়ের তৃণমূল কার্যালয়, স্বদেশি ভবনে টিভিতে বিশ্বকাপ ফুটবলের পুনঃসম্প্রচার দেখছিলেন বাপ্পা বল (২৬) নামে ওই যুবক। তাঁর বাড়ি বেলঘরিয়ায়। হঠাৎই কয়েক জন দুষ্কৃতী স্বদেশি ভবনে ঢুকে খুব কাছ থেকে তাঁকে লক্ষ করে পাইপগানের গুলি চালায়। লুটিয়ে পড়েন বাপ্পা। তাঁর ঘাড়ে-মাথায় এলোপাথাড়ি চপারের কোপ মারা হয়। মিনিট দশেক ধরে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে দুষ্কৃতীরা হেঁটেই ভিড়ে মিশে যায়। পুলিশ জানায়, ঘটনাস্থলে একটি রক্তমাখা কাটারি, ওয়ানশটার এবং চারটি কার্তুজের খোল পাওয়া গিয়েছে।

বাপ্পা-হত্যায় রাজনীতির যোগ আছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক এবং পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ। তাঁদের অভিযোগ, সিপিএম-বিজেপির প্রচ্ছন্ন মদতেই ওই যুবককে খুন করা হয়েছে। নির্মলবাবু বলেন, “সরকারে আছি আমরা। তা সত্ত্বেও দুষ্কৃতীদের এতই সাহস যে, আমাদের পার্টি অফিসে চড়াও হয়ে আমাদেরই একনিষ্ঠ কর্মীকে খুন করে চলে গেল!” এর প্রতিবাদে আজ, মঙ্গলবার জেলা জুড়ে কালা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল।

সিপিএম এবং বিজেপি অবশ্য তৃণমূলের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। ওই দু’দলেরই দাবি, সিন্ডিকেট দখলের জন্য তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের পরিণামেই এই খুন। পানিহাটি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের স্থানীয় নেতা চারণ চক্রবর্তী অভিযোগ করেন, “গোটা এলাকায় সিন্ডিকেট-রাজ মাথাচাড়া দিয়েছে। তৃণমূলের সিন্ডিকেটের অন্তঃকলহের জেরেই বাপ্পা খুন হয়েছেন।” বিজেপির যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অমিতাভ রায়ও অভিযোগ করেন, এই খুন নব্য ও পুরনো তৃণমূলের মধ্যে সিন্ডিকেট দখলের লড়াইয়ের পরিণাম।

কে এই বাপ্পা?

জোতিপ্রিয়বাবু, নির্মলবাবুর দাবি, অবিবাহিত ওই যুবক তাঁদের দলের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। তৃণমূলেরই একাংশ অবশ্য সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে ওই যুবকের যোগাযোগের অভিযোগ এনেছেন। তাঁদের বক্তব্য, বাপ্পা এক সময় সিপিএমের ছত্রচ্ছায়ায় ছিলেন। যুক্ত ছিলেন এলাকায় ইট, বালি, পাথর সরবরাহের কারবারে। বছর চারেক আগে খোদ নির্মলবাবুর উপরেই হামলা চালান তিনি।

পুলিশ জানায়, কয়েক বছর ধরে পানিহাটি জুড়ে অসংখ্য আবাসন তৈরি হয়ে চলেছে। ওই সব আবাসন নির্মাণ ঘিরে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য সিন্ডিকেট। পুলিশেরই একাংশের অভিযোগ, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়ি তৈরির মালমশলা না-কিনলে সরকারি কাজও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। জেলবন্দি দাগি দুষ্কৃতীরাও সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। তারা জেল থেকেই ফোন করে প্রোমোটারদের নির্দেশ দিচ্ছে, কোন সিন্ডিকেট থেকে মালপত্র কিনতে হবে। একই সঙ্গে চলছে জমি কেনাবেচার দালাল চক্র।

প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের সন্দেহ, সিন্ডিকেটের ভাগবাঁটায়োরা নিয়ে গোলমালের জেরেই খুন হয়েছেন বাপ্পা। ব্যারাকপুরের গোয়েন্দা-প্রধান সি সুধাকর বলেন, “কী কারণে এই খুন, কারা এই খুনে জড়িত সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সিন্ডিকেটেরই গোলমালে খুন হয়েছেন দমদম-মধুগড়ের যুবক সোমনাথ সাধু খা।ঁ এ দিন বিকেলে তাঁর বাড়িতে যান পর্যটনমন্ত্রী তথা এলাকার বিধায়ক ব্রাত্য বসু। তাঁর সঙ্গে ছিল দমদম থানার পুলিশ। সোমনাথের আত্মীয়দের সমবেদনা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “খুবই দুঃখজনক ঘটনা। দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাবে।” সোমনাথের ভাই গোপালকে মন্ত্রী জানান, তিনি তাঁদের পাশে আছেন। সব রকমের সহযোগিতা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন