বর্ধমানের পরে এ বার দার্জিলিং। তিন বছর আগে বর্ধমানে পুরভোটের দিন প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা ঠিক ছিল না বলে রায় দিয়েছিল আলিমুদ্দিন। এ বার বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের তিনটি আসনে বাম বা গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি বলে লিখিত রিপোর্টে জানিয়ে দিল রাজ্য সিপিএম। ওই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে এক দিকে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভুল বার্তা গিয়েছে আবার সেই সঙ্গে তৃণমূলও লাভবান হয়েছে বলে নির্বাচনী পর্যালোচনায় মেনে নিচ্ছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
বিধানসভা ভোটের ফলাফল পর্যালোচনার জন্য সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে যে রিপোর্ট পেশ করেছেন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সেখানেই দার্জিলিঙের এই ভুলের কথা কবুল করে নেওয়া হয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘দার্জিলিং জেলা কমিটিও এই ভুল মেনে নিয়েছে। রাজ্য সম্পাদকের উপস্থিতিতে জেলা কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে।’’ সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার অবশ্য অসুস্থতার জন্য কলকাতায় এ বার রাজ্য কমিটির বৈঠকে আসেননি।
রাজ্য কমিটিতে পেশ হওয়া খসড়া পর্যালোচনা রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘দার্জিলিঙের পার্বত্য এলাকায় তিনটি আসনে বামফ্রন্ট বা কংগ্রেস প্রার্থী দেয়নি। এই তিনটি আসনে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের সমর্থনের ঘোষণা ঠিক ছিল না। বিজেপি-সমর্থিত জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে পার্বত্য এলাকার মানুষের অসন্তোষের ভোট কুড়িয়ে লাভবান হয় তৃণমূল।’ রিপোর্টে আরও রয়েছে, ‘তা ছাড়া, মোর্চা যে বিজেপিকে পূর্ণ সমর্থন করে, তা-ও তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করে।’ পাহাড়ের ওই তিন আসনে একতরফা প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা ভুল হয়েছিল বলেই পরিষ্কার উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে।
তা হলে কি পাহাড়ের অঙ্ক তাঁরা ভুল বুঝেছিলেন? রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য অবশ্য এই নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। রাজ্য কমিটির বৈঠক শেষ হওয়ার পরে রবিবার তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা দলের সিদ্ধান্ত। এই নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।’’ দলের একটি সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, তৃণমূলের পাশে এ বারের ভোটে কেউ নেই— এই বার্তা স্পষ্ট করার জন্যই পাহাড়ের তিনটি আসনে মোর্চার বিরুদ্ধে প্রার্থী না দেওয়ার ভাবনা এসেছিল। কিন্তু তাতে যে অন্য বিপদ ডেকে আনা হচ্ছে, সেটা তখন খেয়াল রাখা হয়নি!
কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে তুলকালাম আলোচনার মধ্যেই পর্যালোচনা রিপোর্টে এটাও মেনে নেওয়া হয়েছে যে, রাজ্য সরকারের দু’টাকা কিলো দরে চাল বা স্কুলে সাইকেল দেওয়ার কর্মসূচির কতটা প্রভাব গ্রামের মানুষের উপরে পড়ছে, তার আন্দাজ ঠিকমতো করা হয়নি।
সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও খোলাখুলি বলা হয়েছে রিপোর্টে। বাড়ি বাড়ি প্রচার থেকে শুরু করে বুথে এজেন্ট দেওয়া পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রেই ঘাটতি ছিল। এই সঙ্গেই পর্যালোচনা রিপোর্টে উঠে এসেছে একটি আকর্ষক তথ্য। কয়েক মাস আগে কলকাতা প্লেনামের আগে জেলা কমিটিগুলির কাছ থেকে তিন রকমের আসনের তালিকা চাওয়া হয়েছিল— কতগুলি বিধানসভা আসনে জেতার সম্ভাবনা, কতগুলিতে জয়-পরাজয় নিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না এবং কতগুলিতে জয়ের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। জেলার পাঠানো তথ্য মেলালে জেতার সম্ভাবনা ছিল ৭৭, অনিশ্চিত ছিল ১১০ এবং হারের আশঙ্কা ছিল ১০৭টিতে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কংগ্রেস ও বামেদের জোট ৭৭টি আসনেই জিতেছে! জোটপন্থীরা বলছেন, জোটের দৌলতেই এই অবধি যাওয়া গিয়েছে। আর জোট-বিরোধীদের প্রশ্ন, বামফ্রন্ট নিজেরাই যে আসন জিতবে বলে আশাবাদী ছিল, কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে তার চেয়ে মোট আসন বাড়ল না কেন?