Diego Maradona

মহেশতলার মাঠে মারাদোনার সেই পায়ের ছাপ কোথায়! জানেন না কেউ

অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত যত্ন করে তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া হল। তখন এত আবেগ-উচ্ছ্বাসের পরিণাম কি এটাই? পায়ের ছাপ কি আর একটু যত্ন করে রাখা যেত না?

Advertisement

সৈকত ঘোষ

মহেশতলা শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫২
Share:

আবেেগের সে দিন। ২০০৮ সালে মহেশতলার অনুষ্ঠানে মারাদোনা। পাশে শমীক লাহিড়ী। —ফাইল চিত্র

তাঁর বাঁ পায়ে ছিল জাদু। ফুটবলের জাদুকর মারাদোনার সেই পায়ের ছাপ পড়েছিল এ বঙ্গেও। শুধু পড়েইনি, রীতিমতো ছাপ নিয়ে রাখা হয়েছিল মহেশতলার একটি অনুষ্ঠানে। কথা ছিল বাঁধিয়ে রাখার। কিন্তু আর্জেন্টিনীয় ফুটবল কিংবদন্তির মৃত্যুর পরের দিন অনেক খোঁজ খবর করেও পাওয়া গেল না তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া সেই সিমেন্টের বেদির। উদ্যোক্তারা দায় ঠেলছেন একে অন্যের উপর। দিনের আলো দেখেনি তাঁর ‘হ্যান্ড অব গড’-এ সূচনা হওয়া সেই ফুটবল অ্যাকাডেমিও।

Advertisement

সালটা ২০০৮। কলকাতা সফরে এসেছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনা। ফুটবলের শহর কলকাতাতেও যে তাঁর গুণমুগ্ধের সংখ্যা বিপুল, তার প্রমাণ মিলেছিল সে দিনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস-উন্মাদনায়। সফর চলাকালীন ১২ ডিসেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায় একটি ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্বোধন করেছিলেন তিনি। অনুষ্ঠান শেষে সে বার মারাদোনার স্মৃতি হিসেবে একটি সিমেন্টের বেদির উপর তাঁর পায়ের ছাপ রেখে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অযত্নে, অবহেলায় সেই স্মৃতি আজ উধাও। হদিশ দিতে পারলেন না তদানীন্তন অনুষ্ঠানের আয়োজকরা।

মারাদোনাকে প্রথম বার কলকাতা এবং মহেশতলায় আনার দায়িত্বে ছিলেন মূলত প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ শমীক লাহিড়ী। আর অনুষ্ঠানের আয়োজনের দায়িত্ব ছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। অনুষ্ঠানের পর মহেশতলা পুরসভার পক্ষ থেকে মারাদোনার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল রুপোর তৈরি তাজমহল। কিন্তু সবটাই এখন কালের গর্ভে বিলীন। মারাদোনার পদার্পণের স্মৃতি বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই মহেশতলায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: মাফিয়ার সঙ্গে সঙ্গিনী নিয়ে জেলে পার্টি থেকে সাংবাদিকদের উপর গুলি, বিতর্কের অন্য নাম মারাদোনা

কেন? প্রশ্ন করতেই শুরু হল দড়ি টানাটানি। সেই সময় মহেশতলা পুরসভা ছিল বামেদের দখলে। মূলত পুরসভার উদ্যোগেই কলকাতায় এসেছিলেন মারাদোনা। সেই সময়ের আয়োজকদের অন্যতম সিটু-র জেলা সম্পাদক রতন বাগচি বলেন, ‘‘আমরা ফুটবল অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে মারাদোনাকে এনেছিলাম ঠিকই, কিন্তু পায়ের ছাপ আমাদের রাখার কথা ছিল না। ওই ছাপ নিয়েছিল অনুষ্ঠানের আয়োজক ওই বেসরকারি সংস্থা। কত মানুষ তো অটোগ্রাফও নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব রেখে দেওয়ার দায়িত্ব তো আমাদের নয়। পায়ের ছাপ রাখেনি পুরসভা।’’

আরও পড়ুন: এক বিস্ময় প্রতিভা, চিরকালের বিতর্কিত

ওই বেসরকারি সংস্থা কিন্তু দায় ঠেলেছে পুরসভার উপরেই। সরাসরি মুখ খুলতে না চাইলেও সংস্থার এক কর্তা স্পষ্ট জানিয়েছেন, পায়ের ছাপ তাঁদের কাছে নেই। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই ছাপ তো পুরসভার কাছেই থাকার কথা।’’

দেখুন ভিডিয়ো:

স্থানীয় বাসিন্দারা কিন্তু এখনও ভোলেননি মহেশতলার মাঠে ফুটবল রাজপুত্রের পদচারণা। সে দিনের কথা উঠলে আজও তাঁদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠে। তাঁর প্রয়াণে যেমন তাঁরা শোকাহত, ততটাই ক্ষুব্ধ এই চাপানউতোরে। ওই অ্যাকাডেমিতেই ফুটবল প্র্যাকটিস করতেন স্থানীয় যুবক শেখ পিন্টু। সেই দিন মারাদোনার সামনে বল নিয়ে জাগলিং করেছিলেন। শিশুসুলভ আনন্দে মারাদোনাও মিশে গিয়েছিলেন তাঁদের সঙ্গে। সেই পিন্টু বললেন, ‘‘এই দুঃসংবাদ, এই নক্ষত্রপতন মেনে নিতে পারছি না। ফুটবলের রাজপুত্রকে আমরা হারালাম।’’

পায়ের ছাপ হারিয়েছে গাফিলতি আর অবহেলায়— সে কথা মানছেন এলাকাবাসীও। কিন্তু অ্যাকাডেমি হয়নি কেন? কথা ছিল বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ৩১ একর জমি নেওয়া হবে। তার মধ্যে স্টেডিয়াম তৈরি হওয়ার পর বাকি জায়গা ব্যবসায়িক কাজে লাগাতে পারবে সংস্থা। কিন্তু পরে আর ফুটবল অ্যাকাডেমি তৈরিই হয়নি। যে জায়গায় অনুষ্ঠান হয়েছিল সেখানে একটি হলঘর তৈরি করেছে ওই বেসরকারি সংস্থা। মহেশতলার তৃণমূল বিধায়ক দুলাল দাস এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধও পাচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শমীকবাবুরা আদৌ ফুটবল অ্যাকাডেমি চালু করতে চাননি৷ তাঁরা মারাদোনাকে সামনে রেখে ভোট বৈতরণী পার হতে চেয়েছিলেন। তাই পুরসভা থেকে প্রচুর টাকা খরচ করে মারাদোনাকে আনা হয়।’’

শমীক আবার পাল্টা তৃণমূলের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর ফুটবল অ্যাকাডেমির বিষয়টি গুরুত্বই দেয়নি। সেই মাঠেই প্রমোটিং চালানো হচ্ছে।’’

কিন্তু স্থানীয়দের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত যত্ন করে তাঁর পায়ের ছাপ নেওয়া হল। তখন এত আবেগ উচ্ছ্বাসের পরিণাম কি এটাই? এমন কিংবদন্তির পায়ের ছাপ কি আর একটু যত্ন করে রাখা যেত না? প্রশ্ন উঠবেই। কারণ তাঁর নামটা যে দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন