বাম রাখি না তৃণমূল, দ্বন্দ্ব অপার

এমন শাসক দল, যারা শুক্রবার কংগ্রেসের প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘবিকে ভোট দিয়েই গঙ্গারামপুরের কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম দাসকে দলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে! আবার অন্য দিকে, যে বামেদের সমর্থনে জিতে কংগ্রেস বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল, তারাই রাজ্যসভায় লড়াই করেছে সিঙ্ঘবির বিরুদ্ধে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০৩:৫১
Share:

এ রাজ্য থেকে এক বছরের মধ্যে দু’জন সাংসদ গেলেন রাজ্যসভায়। কংগ্রেসের এমন প্রাপ্তি হল ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম! সৌজন্যে তৃণমূল। আর সেই প্রাপ্তির ভোট গুনে ওঠা মাত্রই ফের এক কংগ্রেস বিধায়ককে দলে টেনে নিল তৃণমূল!

Advertisement

রাজ্যসভায় সংখ্যা বাড়ালেও বাংলায় কংগ্রেসের জন্য এখন উভয় সঙ্কট! এক দিকে, তারাই প্রধান বিরোধী দল। রাজ্যসভায় শাসক দলের বদান্যতার পরে বিরোধী আসনে বসে সরকারের সঙ্গে ‘হ্যাঁ মেলানো’ কি সম্ভব, ভাবতে হচ্ছে কংগ্রেসকে। তা-ও আবার এমন শাসক দল, যারা শুক্রবার কংগ্রেসের প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘবিকে ভোট দিয়েই গঙ্গারামপুরের কংগ্রেস বিধায়ক গৌতম দাসকে দলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে! আবার অন্য দিকে, যে বামেদের সমর্থনে জিতে কংগ্রেস বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল, তারাই রাজ্যসভায় লড়াই করেছে সিঙ্ঘবির বিরুদ্ধে। বিধানসভায় এর পরে কি বামেদের সঙ্গে সমঝোতা হবে কংগ্রেসের?

এই টানাপড়েনের মধ্যেই নতুন কৌতূহলের কেন্দ্রে চলে এসেছে শিলিগুড়ি পুরসভা। তৃণমূলের বহু চেষ্টা সত্ত্বেও শিলিগুড়ির পুরবোর্ড বামেরা ধরে রেখেছে কংগ্রেসের সমর্থনে। সেখানে বামেদের কাউন্সিলর ১৮ জন, সঙ্গে কংগ্রেসের চার। আবার তৃণমূলেরও ১৮। কংগ্রেস বামেদের পাশ থেকে উঠে তৃণমূলের পাশে গিয়ে বসলেই এই সবেধন নীলমণি বিরোধী বোর্ড হাতছাড়া!

Advertisement

শিলিগুড়ি পুরসভাকে রাজ্য সরকার যে প্রাপ্য বরাদ্দ থেকে বঞ্চিত করছে, পুর-বাজেটে বৃহস্পতিবারই সেই যুক্তিকে সমর্থন করে বামেদের পাশে থেকেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। আগামী ২৮ মার্চ শিলিগুড়ির আটকে থাকা পাওনার জন্য দরবার করতে কলকাতায় একসঙ্গে আসার জন্য সব কাউন্সিলরকে অনুরোধ করেছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিধাননগরের ‘নগরায়ণ’ ভবনে কাউন্সিলরদের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও এ দিন মেয়রকে আশ্বাস দিয়েছেন। অশোকবাবুর কথায়, ‘‘পুরসভার টাকা আটকে দিয়ে, নানা রকম কৌশল করে তৃণমূল শিলিগুড়ির বোর্ড দখল করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কংগ্রেস কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াই করেছে।’’ ঘনিষ্ঠ মহলে কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারেরও বক্তব্য, শিলিগু়ড়ি পুরসভা নিয়ে নতুন কোনও ভাবনা তাঁদের শুরু হয়নি।

গঙ্গারামপুরের গৌতমের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া ১০ বিধায়কই এ দিন সিঙ্ঘবিকে ভোট দিয়েছেন। তার ফলে দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের বিধায়ক-পদ খারিজের মামলা দুর্বল হয়েছে! আবার সিঙ্ঘবির নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরে কংগ্রেসের দুই বিধায়ক অপূর্ব সরকার ও শাঁওনী সিংহ রায় তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। এর পরে বিরোধী রাজনীতির কী হবে? কংগ্রেস সাংসদ সিঙ্ঘবির জবাব, ‘‘রাজ্যসভায় অ-বিজেপি সব দলের সমন্বয় কয়েক বছর ধরেই চলছে, তেমনই চলবে। বিধানসভায় কী হবে, বাংলার নেতারা ঠিক করবেন।’’

কী করবেন তা হলে? আব্দুল মান্নান বলছেন, ‘‘সিপিএম আমাদের বিশ্বাসযোগ্যতাই রাখল না! জেতার সংখ্যা নেই দেখেও ওরা প্রার্থী দিল কেন?’’ আর তৃণমূল তো আর এক জন বিধায়ককে টেনে নিল? বিরোধী দলনেতার জবাব, ‘‘হুম! শুনেছি!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন