‘ছোট রাজ্যের পক্ষে, আপত্তি গোর্খাল্যান্ড নামে’

বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় অবশ্য শুক্রবারই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের পক্ষে নন। কিন্তু শনিবার আলিপুরদুয়ারে দিলীপবাবু যা বললেন, তাতে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০৪:২৯
Share:

পাহাড় রাজনীতিকে আরও জটিল করে দিয়ে পৃথক রাজ্যের দাবি উস্কে দিলেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শনিবার খোলাখুলি জানিয়ে দিলেন, গোর্খাল্যান্ড নামে তাঁদের আপত্তি আছে ঠিকই, তবে নীতিগত ভাবে বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষে।

Advertisement

তাঁর এই বক্তব্যকে পশ্চিমবঙ্গ ভাগের ‘চক্রান্ত’ বলে সরব হয়েছে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস। এমনকী, রাজ্য বিজেপির একাংশও দিলীপবাবুর অবস্থানের সমালোচনায় মুখ খুলেছে।

এ দিকে শনিবারই গোর্খাল্যান্ড, বড়োল্যান্ড, বিদর্ভ, বুন্দেলখণ্ডের মতো ছোট রাজ্য গঠনের দাবিকে সমর্থন করে দিল্লিতে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করে ন্যাশনাল ফেডারেশন ফর নিউ স্টেটস। সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মুনিশ তামাঙ্গ বা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সহকারী সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ ছেত্রী সকলেই এখন দার্জিলিঙের অশান্তি থামাতে বিজেপি যাতে সক্রিয় হয় সেই দাবিতে সরব। মুনিশের বক্তব্য, ‘‘গত দু’টি লোকসভায় বিজেপি প্রার্থী পাহাড়ে জিতেছেন। দার্জিলিং এখন জ্বলছে। বিজেপির উচিত সেখানকার মানুষের ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করা।’’

Advertisement

বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় অবশ্য শুক্রবারই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁর দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের পক্ষে নন। কিন্তু শনিবার আলিপুরদুয়ারে দিলীপবাবু যা বললেন, তাতে বিষয়টি ভিন্ন মাত্রা পেল। সব মিলিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক অবস্থান আসলে কী, সেই প্রশ্নও উঠল। ঘটনাচক্রে, মুনিশ তামাঙ্গ এ দিন দাবি করেছেন, ‘‘বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এ বিষয়ে কী ভাবছেন তা স্পষ্ট করা হোক।’’

আরও পড়ুন:সঙ্গীর চাপে সুর বদল গুরুঙ্গের

দিলীপবাবু এ দিন বলেছেন, ‘‘বিজেপি ছোট রাজ্যের পক্ষে। তবে আপত্তি রয়েছে গোর্খাল্যান্ড নাম নিয়ে। কোনও জনজাতির নামে রাজ্য হতে পারে না। বাকি জনজাতিরা দাবি করলে কী হবে? কামতাপুরিরাও পৃথক রাজ্যের দাবি করেছে। তা হলে তারা কী দোষ করেছে?” তা হলে কি রাজ্য বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ ভাগের পক্ষে? গোর্খাল্যান্ড ছাড়া অন্য কোনও নামে পৃথক রাজ্য হলে তাঁরা কি মানবেন? সে প্রশ্নে দিলীপবাবুর ধোঁয়াটে উত্তর, ‘‘ও সব দিল্লি বুঝবে। আমরা কিছু বলব না।’’

বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ আবার দিলীপবাবুর বক্তব্যকে কার্যত নস্যাৎ করে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক, ভৌগোলিক, আর্থিক, সামাজিক কোনও দিক থেকেই পাহাড় আলাদা রাজ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়। পাহাড়ের সব এলাকা নিয়ে একটা আস্ত লোকসভাও নেই। এটুকু এলাকা নিয়ে যদি আলাদা রাজ্য হয়, তা হলে আগামী দিনে তো একটা বিধানসভা, একটা ওয়ার্ড নিয়েও আলাদা রাজ্যের দাবি উঠবে!’’

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে একসুরে সরব হয়েছে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেস। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপি ঠিক কী চায়, সেটা তারা আগে স্পষ্ট করুক। বিজেপির শাখা আর কাণ্ড তো এক কথা বলছে না! তবে যত চক্রান্তই হোক, বাংলাকে ভাগ করা যাবে না। পাহাড় এ বাংলারই অঙ্গ।’’

সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্য মহম্মদ সেলিমের মতে, ‘‘দিলীপবাবুর কথা আসলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই সুর। হয়তো কেন্দ্র এখনই সে কথা প্রকাশ্যে বলছে না। তবে ভোটের সময় পাহাড়ে ওরা পৃথক রাজ্যের কথাই বলে।’’

বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বাংলায় বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদত দিতে চাইছে বিজেপি। তাই বাংলাকে ভাগ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন ওঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন