আমলারা হাজির কেন, সরব দিলীপ

যে মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক’ আক্রমণ করা হচ্ছে, সেই মঞ্চে রাজ্যের আমলারা হাজির কেন— প্রশ্ন তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০৩:৪১
Share:

যে মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ‘রাজনৈতিক’ আক্রমণ করা হচ্ছে, সেই মঞ্চে রাজ্যের আমলারা হাজির কেন— প্রশ্ন তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।

Advertisement

গত ৫ মে কৃষ্ণনগরে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চে হাজির ছিলেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে শুরু করে এক ঝাঁক আমলা। মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়ে দিলীপবাবু বলেছেন, প্রশাসনিক সভাকে রাজনৈতিক মঞ্চে পরিণত করে মুখ্যমন্ত্রী সে দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। আমলারা বসে বসে তা শুনেছেন। রাজ্য বিজেপি সভাপতির প্রশ্ন, এমন অসাংবিধানিক কাজ আমলারা করছেন কী ভাবে?

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই জেলায় জেলায় প্রশাসনিক সভা চালু করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে এক দিকে যেমন সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক কাজকর্মের পর্যালোচনা হয়, তেমনই বিভিন্ন প্রকল্পে সাইকেল-ভাতা ইত্যাদি বিলি করেন মুখ্যমন্ত্রী। বক্তৃতাও দেন। একেবারে গোড়া থেকেই বামেদের অভিযোগ ছিল, নামে প্রশাসনিক সভা হলেও মমতা সেগুলিকে নিজের দলের রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ব্যবহার করছেন।

Advertisement

এই ধরনের সভায় উপস্থিত থাকা নিয়ে আমলাদের বড় অংশের মধ্যেই একটা অস্বস্তি কাজ করত। এই রকমই এক খোলা মঞ্চে তৎকালীন মুখ্যসচিব এবং ডিজি-কে দাঁড় করিয়ে প্রকল্প সম্পর্কে বিবৃতি দিতে বাধ্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই আমলা মহলে অসন্তোষ বাড়ে। এর পর প্রকাশ্য সভা আর প্রশাসনিক বৈঠককে আলাদা করে ফেলা হয়। প্রশাসনিক বৈঠক হয় বন্ধ ঘরে। পরে খোলা মঞ্চে আমলারা আর সাধারণ ভাবে থাকেন না।

কিন্তু এই ব্যবস্থার ব্যত্যয় ঘটে কৃষ্ণনগরে। সেখানে আমলাদের মঞ্চে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। সে দিনই প্রতিক্রিয়া হয়েছিল আমলা মহলে। যদিও প্রকাশ্যে তাঁরা মুখ খুলতে নারাজ। তবে প্রাক্তন আমলাদের অনেকেই মনে করেন, রাজনৈতিক আলোচনা হচ্ছে, এমন সভায় আমলাদের হাজির থাকা অনুচিত। তাঁদেরই এক জন সুনীল মিত্রের কথায়, ‘‘আমলারা যখন চাকরিতে যোগ দেন, তখনই বলে দেওয়া হয় রাজনৈতিক পক্ষপাতহীন হয়ে কাজ করতে হবে।’’ রাজ্য ও কেন্দ্রে বিভিন্ন দফতরের কাজ করা আর এক আমলার বক্তব্য, ‘‘বহু মন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্তু কোনওদিন তো কোনও মন্ত্রীর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়নি। তিনি পার্টি অফিসে গেলে আমি গাড়িতে বসে সিগারেট খেতাম।’’

আমলা মহলের অসন্তোষ এত তাড়াতাড়ি কী ভাবে রাজ্য বিজেপি সভাপতির কানে গেল, তা নিয়েও গুঞ্জন নবান্নের অলিন্দে। চর্চা শুরু হয়েছে দিলীপবাবুর পাঠানো চিঠি নিয়েও। যেখানে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যে মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে রাজনৈতিক আক্রমণ করছেন, সেখানে আমলারা বসে থাকছেন কী ভাবে? সাংবিধানিক চৌহদ্দির মধ্যে যে অধিকার আপনাদের রয়েছে, তা কি লঙ্ঘিত হচ্ছে না? এবং কেন আপনি রাজনৈতিক ওই সভা থেকে অন্য অফিসারদের নিয়ে চলে আসেননি?’’

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য মনে করেন আমলারা সকলেই তাঁর তৃণমূল সরকার পরিবারের সদস্য। তাই প্রশাসনিক বৈঠকে তাঁদের থাকার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন