Dilip Ghosh

‘কথা শুনতে হবে’, রাজ্য নেতৃত্বকে আবার বিঁধলেন দিলীপ, জোড়া কর্মসূচির দিনে অস্বস্তি বিজেপিতে

বৃহস্পতিবার বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজ্যের একটি বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে সল্টলেকে দলের সদর দফতরে। একই দিনে বিজেপি বাঁচাও কমিটির বিক্ষোভ সমাবেশও রয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:৪৩
Share:

গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।

অনেক দিন চুপ থাকার পর মুখ খুললেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। বৃহস্পতিবার প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়ে পুরনো ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘‘নতুনদের মতো পুরনোদের কথাও শোনা দরকার। তা না হলে দলের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে এবং তা মাঝেমাঝে প্রকাশ্যে এসে যাচ্ছে।’’

Advertisement

দিলীপ এখন বঙ্গ বিজেপি বা জাতীয় স্তরে বিজেপির কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। সে কথা জানিয়েই বিজেপি নেতা জানান, সাংগঠনিক পদে না থাকায় তিনি চুপ থাকতেই চান। কিন্তু কিছু কথা যে হেতু কেউ বলছে না, তাই সেগুলো বলার দরকার হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে রাজ্যের একটি বিশেষ সাংগঠনিক বৈঠক রয়েছে সল্টলেকে দলের সদর দফতরে। একই দিনে বিজেপি বাঁচাও কমিটির নামে বিভিন্ন জেলা থেকে দুপুর দেড়টায় পূরণ সেন লেনে দলের রাজ্য অফিসের সামনে একটি বিক্ষোভ সমাবেশেরও ডাক দেওয়া হয়েছে। ক্ষোভের নানা কারণের মধ্যে মূল কারণটি হল, বিজেপিতে নতুনদের জায়গা দিতে গিয়ে পুরনোদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। সেই সমাবেশের দিনে ওই একই বিষয়ে এ বার মুখ খুললেন বিজেপিরই নেতা তথা সাংসদ দিলীপও।

Advertisement

দিলীপ বলেন, ‘‘রাজনীতিতে ক্ষমতা পাওয়ার একটা লিপ্সা থাকে। তৃণমূলে যেমন হয় বিজেপিতে তা নয়। তবে অনেক নতুন লোক এসেছেন তাঁদের জায়গা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পুরনো যাঁরা পার্টির মধ্যে ছিলেন, তাঁরাও গুরুত্ব পেতে চাইছেন। ফলে একটা অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে। পরিবার বাড়লে, বেশি লোক এলে সমস্যা হয়। বিজেপিতে যাঁরা নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁদের উচিত সবার সঙ্গে কথা বলে, যাঁদের ক্ষোভ হয়েছে, তাঁদের ক্ষোভের কথা শোনা। আমার মনে হয় ঠিক মতো শোনা হচ্ছে না। তাই বিক্ষোভ দেখা দিচ্ছে।’’ এই বক্তব্যের আগে এবং পরে অবশ্য রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলকে আক্রমণ করেও কিছু কথা বলেন দিলীপ, শেষে আবার ফিরে যান দলের প্রসঙ্গে। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি এখন কোনও সাংগঠনিক পদে নেই। তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আর কথা বলি না সে ভাবে। তবে এখন কিছু কথা বলা দরকার বলে মনে হচ্ছিল আমার। কেউ সেটা বলছে না। তাই আজ আমি বললাম।’’

উল্লেখ্য, দিলীপ বিজেপির রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন জেলা এবং রাজ্যস্তরে যাঁরা দলের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁদের একটা বড় অংশই এখন কোণঠাসা। বালুরঘাটের বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হওয়ার পর সমস্ত জেলায় সাংগঠনিক রদবদল হয়েছে। যা কার্যত হওয়ারই ছিল। কিন্তু সেই রদবদলের পর অভিযোগ ওঠে, বিজেপিতে যাঁরা দায়িত্ব পেয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই হয় পরে বিজেপিতে এসেছেন নয়তো তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।

সম্প্রতিই দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে বিজেপির যে তিনটি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে, সেই মথুরাপুর, যাদবপুর এবং জয়নগরে বিজেপির নিজস্ব সংগঠনের ভিতরেই ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। হয় সেখানে বিজপি কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিল করে পার্টি অফিসে গিয়েছেন। নয়তো ঘেরাও করে রাখা হয়েছে বিজেপি নেতাদের। এমনকি, বাঁকুড়ায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকারকেও সম্প্রতি ঘেরাও করা হয়েছিল। নন্দীগ্রামের বিজেপি নেতা প্রলয় পালও দিন কয়েক আগে রাজনীতি ছাড়তে চেয়েছিলেন বিজেপিতে পুরনোদের গুরুত্ব না থাকার অভিযোগেই। এ রকম একের পর এক ঘটনায় যখন দেখা যাচ্ছে বিজেপির পুরনো নেতারা ক্ষুব্ধ, ঠিক তখনই দলের পুরনো এবং নতুনদের মধ্যে সামঞ্জস্য আনার বার্তা দিলেন দিলীপ। তিনি বললেন, এই সমন্বয় সাধনের কাজে এগিয়ে আসতে হবে বিজেপি নেতৃত্বকেই।

অতীতেও এই ভাবে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে মুখ খুলে বিতর্ক তৈরি করেছেন দিলীপ। যার জেরে তাঁকে প্রথমে চিঠি পাঠিয়ে চুপ করতে বলা হয়েছিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ। কিছুদিন আগে তাঁকে বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তিনি শুধুই সাংসদ। অনেক দিন পর তিনি আবার মুখ খুললেন দলের বিষয়ে। তবে কি আবার তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব? সেই প্রশ্নও তৈরি হল বৃহস্পতিবার সকালে। যদিও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের তরফে কেউ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। দলের সাংগঠনিক বৈঠক থাকায় রাজ্য সভাপতি সুকান্ত-সহ অন্যান্যরা কেউ ফোন ধরেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন