মেমারি থেকে ধৃত শিশু পাচারে অভিযুক্ত

কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেল

বা়ড়ি থেকে পালিয়ে চাঁচাইয়ের উদ্বাস্তু ক্যাম্পে, দিদির বাড়িতে এসে ‘বাঁচার’ চেষ্টা করেছিলেন হাতুড়ে ডাক্তার। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শনিবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থাতেই গ্রেফতার হয়ে গেলেন শিশু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত তপন বিশ্বাস।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মেমারি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১৩
Share:

বা়ড়ি থেকে পালিয়ে চাঁচাইয়ের উদ্বাস্তু ক্যাম্পে, দিদির বাড়িতে এসে ‘বাঁচার’ চেষ্টা করেছিলেন হাতুড়ে ডাক্তার। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। শনিবার গভীর রাতে ঘুমন্ত অবস্থাতেই গ্রেফতার হয়ে গেলেন শিশু পাচার কাণ্ডে অভিযুক্ত তপন বিশ্বাস।

Advertisement

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে মেমারির পাল্লা রোড থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে দামোদর লাগোয়া চাঁচাই ২ ক্যাম্পের শ্রীপল্লি থেকে ঠাকুরনগরের বাসিন্দা তপনকে ধরা হয়। একটি মোটরবাইক ও গাড়িতে পুলিশ ও সিআইডির আট জন এসে তাঁকে ধরে। ওই দিন দুপুরেই শ্রীপল্লির বাসিন্দা মাসতুতো দিদি ইতি বারুই ও তাঁর স্বামী প্রেমচাঁদ বারুইয়ের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। ওই দু’জনেরও মোবাইলও বাজেয়াপ্ত করেছে সিআইডি। ওই দম্পতির যদিও দাবি, তপনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কোনও যোগাযোগ ছিল না তাঁদের। এ দিন কিছু না জানিয়েই আচমকা হাজির হয়েছিলেন তিনি। সিআইডি কর্তাদের যদিও অনুমান, দিদির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তপনের। তাঁর সঙ্গে কথা বলেই চাঁচাইয়ে আসেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিদেবী বর্ধমানের বাবুরবাগের একটি নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করেন। তবে তিনি শিশু পাচার চক্রে অভিযুক্তের দিদি, এ কথা প্রচার হওয়ার পরেই ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে কাজে আসতে আপাতত নিষেধ করেছেন। এ দিন সে কথা স্বীকার করে নিয়ে ইতিদেবী বলেন, ‘‘সাত বছর ধরে ওই নার্সিংহোমে কাজ করছি। শুধু সম্পর্ক থাকার কারণে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ আমার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলল।’’ ইতিদেবীর ছেলে, মেমারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র প্রণবও বলেন, ‘‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য এসে আমাদের বড় ক্ষতি করে দিয়ে গেল মামা।’’

Advertisement

রবিবার দুপুরে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিবেশিরা বাড়ির সামনে ভিড় জমিয়েছেন। বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন বাড়ি বাড়ি মাছ বিক্রেতা প্রেমচাঁদ। তিনি জানান, শনিবার দুপুরে আচমকা আবির্ভাব হয় তপনের। হঠাৎ এই অজ গ্রামে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘ঘুরতে এসেছি’। পরে সন্ধ্যার দিকে টিভিতে তাঁরা খবর দেখেন, ঠাকুরনগরের হাতুড়ে চিকিৎসক তপন বিশ্বাসকে পুলিশ খুঁজছে। এক নাম হওয়ায় বারুই পরিবারেরও সন্দেহ জাগে। তবে তপনকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি পুরো ব্যাপারটা অস্বীকার করে বলেন, ওটা আলাদা লোক। প্রেমচাঁদবাবুর অবশ্য দাবি, তাঁরা আগেভাগেই খাওয়াদাওয়া করে নিয়ে তপনকে চলে যেতে বলেন। পরে তাঁরাও নিজেদের কাজে বেরিয়ে যান। প্রণবের অবশ্য দাবি, মামা বাড়িতেই ছিলেন। রাত হয়ে যাওয়ায় আর যেতে পারবেন না বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘রাতে আমরা শুয়েছিলাম। তখনও টিভিতে হাতুড়ে চিকিৎসকের খবরটা দেখাচ্ছিল। আমরা ব্যাপারটা বুঝে যাই। পরে শোওয়ার ঘর থেকেই পুলিশ মামাকে ধরে নিয়ে যায়।’’

ইতিদেবী জানান, প্রায় দশ-পনেরো বছর পরে এ দিন তপনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল তাঁদের। কারণ ডাক্তার হয়ে যাওয়ার পরে ঘরে পয়সা আসতেই তপন নিজে থেকেই তেমন যোগাযোগ রাখতেন না। যদিও সিআইডি সূত্রের খবর, এই দম্পতি পুজোর সময় ঠাকুরনগর গিয়েছিলেন নাতিকে দেখতে। তপনের সঙ্গে ইতিদেবীর যোগাযোগও ছিল। এমনকী, তপন বর্ধমান থেকেই বছর কুড়ি আগে পড়াশোনা করেছেন বলে জানা যায়। এই দিদি-জামাইবাবুর কাছে থেকেই পড়াশোনা করতেন তিনি। সে কথা মেনে নিয়ে ইতিদেবী বলেন, ‘‘তখন ছিল, কিন্তু পরে যোগাযোগ ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন