Dengue

ডেঙ্গি লেখা যাবে না, ঝামেলা হবে, আর্তি হাসপাতাল কর্তার

চিকিৎসকও নাছোড়বান্দা— ‘‘আমি শুধু চিকিৎসা করি না। কত ডেঙ্গি রোগী আমার কাছে আসছেন, কত জন মারা যাচ্ছেন, কোন অবস্থায় তাঁরা আমার কাছে এসেছিলেন, সব তথ্য রাখি।’’

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৫৫
Share:

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পাওয়া।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকটি ডেথ সার্টিফিকেট লেখা শেষ করেছেন সবে। প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তা। ‘‘কোনও ভাবেই ডেঙ্গি লেখা যাবে না। ঝামেলা হয়ে যাবে’’— আর্তি ওই কর্তার।

Advertisement

চিকিৎসকও নাছোড়বান্দা— ‘‘আমি শুধু চিকিৎসা করি না। কত ডেঙ্গি রোগী আমার কাছে আসছেন, কত জন মারা যাচ্ছেন, কোন অবস্থায় তাঁরা আমার কাছে এসেছিলেন, সব তথ্য রাখি।’’ হাসপাতালকে চিকিৎসক জানিয়ে দিলেন, রোগীর মৃত্যুর আসল কারণটাই তিনি ডেথ সার্টিফিকেটে লিখবেন। কর্তৃপক্ষ চাইলে তা ছিঁড়ে ফেলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু মৃতের আত্মীয়েরা অন্য চিকিৎসকের ডেথ সার্টিফিকেট চান না। ফলে কর্তৃপক্ষ আতান্তরে।

স্বাস্থ্য কর্তাদের চাপ ছিলই। কিন্তু ‘ডেঙ্গি নিয়ে অযথা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে’ বলে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য মন্তব্যের পরে কোনও কোনও বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গিতে মৃত রোগীর ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর আসল কারণটাই লিখতে দিচ্ছে না বলে চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা অনেকে জানিয়ে দিচ্ছেন, এ ভাবে চললে তাঁদের
পক্ষে আর হাসপাতালের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়।

Advertisement

যে সব চিকিৎসকের কাছে রোজ জ্বরের রোগীদের লাইন পড়ে, তাঁদের অনেকেরই চেম্বারে ভিড় কিছুটা কম। সেটা জ্বরের প্রকোপ কমার জন্য নয়। উত্তর কলকাতায় এক চিকিৎসকের চেম্বারে যিনি নাম লেখান তাঁকে এক সন্ধ্যায় দেখা গেল, রোগীর বাড়ি কোথায়, তাঁর সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের সম্পর্ক কেমন— সেই সবও জিজ্ঞাসা করছেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘ভাল করে সব জেনে নাম লিখছি। গোলমেলে এলাকার লোক দেখলে ফিরিয়েও দিচ্ছি। ঝুটঝামেলার দরকার কী!’’

মুখ্যমন্ত্রী এক শ্রেণির চিকিৎসক এবং ল্যাবরেটরির উপরে ‘আতঙ্ক ছড়ানোর’ দায় চাপিয়েছেন। ডেঙ্গি শনাক্ত করে পাছে বিপদে পড়তে হয়, সেই ভেবে অনেক ল্যাবরেটরিই ঝুঁকি নিতে নারাজ। তারা রোগী ফেরাতে শুরু করেছে। যে সব সংস্থার প্যাথলজিস্টরা অভিজ্ঞ এবং গবেষণার জন্য এত দিন ডেঙ্গির পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রাখতেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত। এক জন বললেন, ‘‘আমাকে কালোকে কালো, সাদাকে সাদা বলতে হবে। যদি তা না বলতে পারি, কাজটা করে কী লাভ!’’

স্বাস্থ্য কর্তারা এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে কলকাতা পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর তথা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন বলেন, ‘‘যদি এমনটা হয়ে থাকে, তবে তা অনৈতিক। ডেঙ্গি বুঝেও কোনও চিকিৎসক বা ল্যাবরেটরি রোগী দেখতে গড়িমসি করলে কর্তৃপক্ষের নজরে আনা উচিত।’’ কিন্তু চিকিৎসক এবং ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ কি এই অবস্থায় স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন? শান্তনুবাবুর দাবি, ‘‘ভাইরাসের চরিত্রগত পরিবর্তনের জন্য এ বছরও ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব হয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাল ফিভারকে ডেঙ্গি বলে দেওয়া হচ্ছে। তা অন্যায়, এতে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।’’ শান্তনুবাবুর এই কথাতেই শাসকের রক্তচক্ষুর আভাস পাচ্ছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন