প্রতীকী ছবি।
মেডিক্যাল কলেজগুলিতে শিক্ষক-চিকিৎসকদের আধার কার্ড-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক করেছে ‘মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া’ (এমসিআই)। এই নিয়ম মানছে না পশ্চিমবঙ্গ। শুরু হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর।
শিক্ষক-চিকিৎসকদের নাম-কা-ওয়াস্তে নিয়োগ, দিনের পর দিন ক্লাস বন্ধ, এমসিআইয়ের পরিদর্শনের সময় টাকার বিনিময়ে চিকিৎসক হাজির করার মতো গুরুতর অভিযোগ অনেক দিন থেকেই উঠছিল। এমসিআই এ বার তাদের বাছাই করা সংস্থাকে দিয়ে মেডিক্যাল কলেজগুলিতে আধার-ভিত্তিক বায়োমেট্রিক মেশিন বসাচ্ছে।
পয়লা ডিসেম্বর থেকে সমস্ত সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক ভাবে চালু করার নির্দেশ দেয় এমসিআই। মেশিন বসেছে, কিন্তু সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও রাজ্যের কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজেই এই নির্দেশ কার্যকর হয়নি। রাজ্যের একমাত্র যে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজটি এ বছর ছাত্র ভর্তির অনুমতি পেয়েছে, সেই কেপিসি মেডিক্যাল কলেজ নির্দেশ মেনেছে।
এমসিআইয়ের নির্দেশ না-মানলে নিয়মানুযায়ী সেই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ভর্তি করার অনুমতি বাতিল হতে পারে। তা হলে রাজ্য এই ঝুঁকি কেন নিচ্ছে? এমসিআই এবং দিল্লির স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আধার কার্ড বাধ্যতামূলক করার বিরোধী, তাই আধারভিত্তিক বায়োমেট্রিক হাজিরা তাঁর রাজ্যে চালু করা হচ্ছে না।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, নভেম্বর মাসে রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা দিল্লিতে এমসিআইয়ের সঙ্গে বৈঠকে আপত্তির কথা জানিয়ে এসেছেন। রাজ্যের তরফ থেকে দিল্লিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও খবর। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও জবাব মেলেনি। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘স্বাস্থ্যভবনে অনেক আগে থেকেই বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু। এমসিআইয়ের বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর বিষয়ে রাজ্য সরকার এখনও সবুজ সঙ্কেত দেয়নি।’’
কিন্তু এমসিআই যদি এর জন্য রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলির অনুমোদন বাতিল করে? দেবাশিসবাবু বলেন, ‘‘এমসিআই নিজেরাই এখনও অনেক জায়গায় যন্ত্র বসাতে পারেনি। ওদের নিজেদেরই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হতে পারে।’’ রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের প্রধান নির্মল মাজি আর একধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘এমসিআই কবে উঠে যায় তারই ঠিক নেই! আধার বাধ্যতামূলক করা মানে ব্যক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। তা আমরা করব না।’’
রাজ্যের অনেক সরকারি মেডিক্যাল কলেজই দিল্লিকে জানিয়েছে, বায়োমেট্রিক যন্ত্রগুলি প্রায়ই খারাপ হয়ে যাচ্ছে বা আধার কার্ডের সঙ্গে লিঙ্ক করা যাচ্ছে না। এমসিআইয়ের এথিক্স কমিটির চেয়ারম্যান ধ্রুবজ্যোতি বোহরা-র পাল্টা দাবি, ‘‘কোনও নিয়ম বলবৎ করার জন্য রাজ্যের সদিচ্ছা দরকার। যন্ত্র কাজ না করলে সেটা ঠিক করানোর ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষকে আগ্রহ দেখাতে হবে। মহারাষ্ট্র, দিল্লি, কর্নাটক তো সুন্দর ভাবে নীতি কার্যকর করছে!’’