নিয়োগ বাড়ির কাছেই, সাড়া ডাক্তারদেরও

এত দিন যত বার যে-ক’টি পদে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে, তার মাত্র ২৫, ৩৫ বা মেরেকেটে ৫০ শতাংশ পদে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকেরা যোগ দিয়েছেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

সরকারি চাকরিতে ডাক্তার টানতে তাঁদের বাড়ির কাছাকাছি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যে প্রথম বার এই নিয়মে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগ করতে গিয়ে আশানুরূপ ফলও পেল তারা।

Advertisement

এত দিন যত বার যে-ক’টি পদে মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরিয়েছে, তার মাত্র ২৫, ৩৫ বা মেরেকেটে ৫০ শতাংশ পদে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসকেরা যোগ দিয়েছেন। কিন্তু মার্চে ৯১৬ পদে জেনারেল ডিউটি মেডিক্যাল অফিসার বা জিডিএমও নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে তাতে যোগ দিয়েছেন ৬৩২ জন। অর্থাৎ ৬৯% পদে ডাক্তার পেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

এই প্রথম একসঙ্গে এত বেশি মেডিক্যাল অফিসার সরকারি কাজে যোগ দিলেন। এবং তাঁদের প্রত্যেকেই ইন্টারভিউয়ের পরে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে কাউন্সেলিংয়ে বসে নিজেদের পছন্দের এলাকার হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বেছে নিয়েছেন। সেখানেই তাঁদের নিয়োগ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর ঠিক করেছে, একান্ত প্রয়োজন না-হলে ভবিষ্যতে এই চিকিৎসকদের ওই জায়গা থেকে বদলি করা হবে না।

Advertisement

এই চিকিৎসকেরা মূলত কাজ করবেন সুপার স্পেশ্যালিটি, এসএনসিইউ-এ। জেলা বা মহকুমা হাসপাতালেও কয়েক জনকে নিয়োগ করা হবে। ‘‘মেডিক্যাল অফিসার ছাড়া হাসপাতাল চালানো এক কথায় অসম্ভব। অতীতে বারবার বিজ্ঞাপন দিয়ে আমরা যথেষ্ট লোক পাইনি। এর প্রধান কারণ, পোস্টিংয়ের জায়গা পছন্দ না-হওয়া। ডাক্তার জোগাড় করতে তাই আমরা তাঁদের পছন্দের মতো জায়গায় নিয়োগ শুরু করলাম। তাতে সাফল্যও পেলাম,’’ বলছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী।

জেলায় চিকিৎসকের আকাল নিয়ে একাধিক জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিকিৎসক না-পেলে সরকার যে আর নতুন হাসপাতালের কথা ভাবতে পারবে না, সেটাও জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি চিকিৎসকদের উপরে হামলার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে নেমে বিভিন্ন জেলার অনেক চিকিৎসকই পদত্যাগপত্র দিয়েছেন বা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সালের অক্টোবরে ২৬০ পদে স্পেশ্যাল মেডিক্যাল অফিসার নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরোয়। তাতে যোগ দেন মাত্র ৮২ জন। অর্থাৎ মাত্র ৩২% পদ পূর্ণ হয়। ২০১৬ সালের অগস্টে স্পেশ্যাল মেডিক্যাল অফিসারের ৩১৮ পদে যোগ দেন ৭৮ জন (২৫%)। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জিডিএমও-র খালি পদের ৪৯% পূর্ণ হয়েছিল (১৪৫০ পদের মধ্যে ডাক্তার মেলে ৭১৭টিতে)। ২০১৭ সালে জিডিএমও-র ৮৯৭ পদে যোগ দেন ৩৮৭ জন। অর্থাৎ ৪৩% পদ পূর্ণ হয়।

এই অবস্থায় ‘পছন্দের জায়গায় পোস্টিং’ নীতিতে বেশি চিকিৎসক পেয়ে স্বাস্থ্য দফতর যে এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত, সেটা স্বীকার করছেন অনেক স্বাস্থ্যকর্তা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানান, এত দিন নিয়ম ছিল, প্রথম চাকরিতে যোগ দিয়ে পাঁচ বা সাত বছর ডাক্তারদের উত্তরবঙ্গে কাজ করতে হবে। তাতে অনেকেই সরকারি কাজে যোগ দেওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলতেন। সেই নিয়ম আর থাকছে না। এখন উত্তরবঙ্গে বাড়ি, এমন চিকিৎসকেরাই বাড়ির কাছে পছন্দসই জায়গায় পোস্টিং পাচ্ছেন। দফতরেরও উদ্বেগ কমছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন