Federal structure

‘বিশ্বাসভঙ্গ’ হচ্ছে, হস্তক্ষেপ করুন: জিএসটি ইস্যুতে মোদীকে চিঠি দিদির

জিএসটি চালু হওয়ায় রাজ্যগুলিকে নিজেদের কর অরোপ ক্ষমতার ৭০ শতাংশই পরিত্যাগ করতে হয়েছে বলে লিখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:৫৫
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

জিএসটি ইস্যুতে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গোটা দেশে জিএসটি চালু করার সময়ে রাজ্যগুলিকে যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন পালন করা হচ্ছে না বলে গত কয়েক দিন ধরেই সরব হতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিরোধী দল। পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র রবিবারই বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে কেন্দ্রকে আক্রমণ করেন। এ বার সক্রিয় হলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। কেন্দ্র যে ভাবে ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ করছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মূল শর্তগুলোই লঙ্ঘিত হচ্ছে— চার পাতার চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে এমনই লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

জিএসটি যখন চালু করা হয়েছিল, তখন প্রথম পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কেন্দ্র। জিএসটি চালু হওয়ায় রাজ্যগুলিকে নিজেদের কর অরোপ ক্ষমতার ৭০ শতাংশই পরিত্যাগ করতে হয়েছে বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন এ দিনের চিঠিতে। কেন্দ্র যাতে জিএসটি চালু করতে পারে, তার জন্যই রাজ্যগুলি এই ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি হয়েছিল বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। জিএসটি চালু হওয়ার আগে কর বাবদ রাজ্য যে টাকা পেত, জিএসটির জেরে ৫ বছরে তাতে যে ঘাটতি দেখা দেবে, তা ক্ষতিপূরণ দিয়ে কেন্দ্র পুষিয়ে দেবে— এই প্রতিশ্রুতির কথাও মোদীকে মনে করিয়ে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। এখন যে ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন্দ্র অস্বীকার করছে, তা জিএসটি চালু হওয়ার সময়ে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে হওয়া মূল সমঝোতাকেই লঙ্ঘন করছে বলে মমতার মত।

গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান যে, জিএসটি-র জেরে করে যে ঘাটতি হবে, তা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে কোনও ক্ষতিপূরণ কেন্দ্র দিতে পারবে না। কোভিড সংক্রমণ এবং লকডাউনের জেরে দেশের অর্থব্যবস্থা যে পরিস্থিতির মুখে পড়েছে, তা অপ্রত্যাশিত ছিল বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়। এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির কারণেই রাজ্যগুলিকে এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়া যাচ্ছে না বলে সীতারামন ঘোষণা করেন। রাজ্যগুলো এই ঘাটতি কী ভাবে মেটাবে? সীতারামন ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দেন রাজ্য সরকারগুলিকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভিড় সামলানোই চিন্তার কারণ, ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে মেট্রো চালুর সম্ভাবনা

বিভিন্ন অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্যের সরকার কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা শুরু করেছে। বিরোধী দলগুলিও তীব্র আক্রমণ করা শুরু করেছে সীতারামনকে। রবিবার বাংলার অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছিলেন যে, রাজ্যগুলিকে ঋণের জালে ডুবিয়ে দেওয়ার ফাঁদ পাতা হয়েছে। ঋণে ডুবে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থা আরও বেহাল হবে, রাজ্য সরকারগুলি আরও দুর্বল হবে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ধীরে ধীরে নিজের ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে নেবে— এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও অমিত মিত্র সে দিন দাবি করেছিলেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, এ দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অসহনীয় একটা ধাক্কার সামনে দাঁড় করিয়ে দেবেন না।

আরও পড়ুন: লগ্নির শুভলগ্ন এল ইস্টবেঙ্গলে, নবান্নে ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

এ দিনের চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কিন্তু সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেননি। বরং এই পরিস্থিতির নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। বিভিন্ন রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই যথেষ্ট আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে, অনেক রাজ্যই কর্মীদের ঠিক মতো বেতন বা পেনশন দিতে পারছে না বলে তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যগুলিকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য করা কেন্দ্রের উচিত নয় বলে মুখ্যমন্ত্রীর মত। ঋণ যদি নিতেই হয়, কেন্দ্রীয় সরকার নিক এবং রাজ্যগুলির প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিকে— এমনই দাবি পেশ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন