প্রসূতি ও সদ্যোজাতদের বাড়ি আর হাসপাতালে নিখরচায় যাতায়াতের জন্য ‘নিশ্চয়যান’ অ্যাম্বুল্যান্স চালু করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু কে তা চালাবে, সেই টানাপড়েনে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রকল্পটিই। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদে টানা ছ’দিন ধর্মঘট করেন নিশ্চয়যান চালকেরা। অন্য জেলাতেও ক্ষোভ। গ্রামাঞ্চলে বহু জায়গাতেই নিশ্চয়যান ছাড়া প্রসূতির সরকারি হাসপাতালে যাতায়াতের অন্য মাধ্যম নেই। ফলে, সেগুলি না চললে বাড়িতে অস্বাস্থ্যকর আঁতুড়ে প্রসব ও শিশুমৃত্যু যে ফের বাড়বে, তাতে সন্দেহ নেই।
স্থানীয় চালকদের বদলে হায়দরাবাদের সংস্থা দিয়ে নিশ্চয়যান চালানোর সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই সঙ্কটের শুরু। তার জেরে ১ থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি মুর্শিদাবাদে সব নিশ্চয়যান চলাচল বন্ধ ছিল। প্রসব যন্ত্রণায় কাতরানো গর্ভবতীর গাড়ি মেলেনি। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাসপাতালে পৌঁছোতে দেরি হওয়ায় প্রসূতি ও সন্তানের প্রাণসংশয় হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিরুপম বিশ্বাসের মতে, এতে বাড়িতে প্রসব করানোর প্রবণতাও বেড়েছে।
সেই ধর্মঘট আপাতত মিটলেও নিশ্চিন্ত নন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। কারণ তাঁরা জানেন যে মালদহ, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হাওড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়িতেও নিশ্চয়যান চালকরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। যে কোনও সময়ে ধর্মঘট ছড়াতে পারে। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখনও দু’টি জেলা, পুরুলিয়া এবং বাঁকুড়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি হায়দরাবাদের সংস্থাকে নিশ্চয়যান চালাতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা চালু হতেই অপারেটরেরা রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভ-ধর্মঘট শুরু করেছেন।’’ কী কারণে তাঁদের ক্ষোভ?
নিশ্চয়যান মালিকদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক রামকুমার মণ্ডলের আক্ষেপ, ২০১১ থেকে তাঁরা গাড়ি চালাচ্ছেন। ৫,৭৭৫টি নিশ্চয়যান চলছে। সরকার অনেকেরই টাকা বাকি রেখেছে। তার উপরে অনেক বেশি টাকায় হায়দরাবাদের এক সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে। তাঁরা যেখানে প্রতি কিলোমিটারে ৮ টাকা করে পান, হায়দরাবাদের সংস্থাটি ১৭ টাকা করে পাচ্ছে। পুরুলিয়া-বাঁকুড়ায় তারা কাজ শুরুর পরে রোগীর ফোন এলে কলকাতার কন্ট্রোল রুম থেকে প্রথমে তাদেরই পাঠানো হচ্ছে। তারা যেতে না পারলে তবেই স্থানীয় গাড়ি ডাক পাচ্ছে। স্থানীয় চালকেরা কার্যত সারা দিন বসে। ১১ হাজারেরও বেশি চালক ও তাঁদের পরিবারের তবে চলবে কী করে?
স্বাস্থ্য অধিকর্তার পাল্টা দাবি, এর জন্য স্থানীয় চালকদের একাংশ দায়ী। অভিযোগ, রাতের দিকে বা একটু প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিশ্চয়যান চালকরা যাচ্ছেন না। অনেকের গাড়িতে জরুরি সরঞ্জাম নেই। গাফিলতি হলে জরিমানা করার কথা বলা ছিল না পুরনো চুক্তিতে। তাই ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছিল না। অজয়বাবু বলেন, ‘‘দু’টি জেলা ছাড়া কোথাও বিকল্প নিশ্চয়যান এখনও নেই। অপারেটরদের সঙ্গে কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করছি।’’