Duarey Sakar

Duare Sarkar: উপচে পড়ছে ভিড়, বিধি মানাতে প্রচেষ্টা প্রশাসনের

উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, কোচবিহার থেকে মালদহে এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই ভিড় উপচে পড়ে শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৪৫
Share:

আলিপুরদুয়ারে হাতে ফর্ম, কিন্তু মুখে মাস্ক নেই।

গা ঘেঁষাঘেষি করে দীর্ঘ লাইন ছিল। মুখে মাস্কও ছিল না অনেকের। তবে ‘দুয়ারে সরকার’-এর দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন, মঙ্গলবার বহু জেলা প্রশাসন-পুলিশকে জনতাকে করোনা-বিধি মানাতে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ নিয়ে ‘উৎসাহী’দের সামলাতে অতিরিক্ত শিবির বা কাউন্টারের ব্যবস্থা, কড়া নজরদারির মতো নানা পদক্ষেপ চোখে পড়েছে। এ দিকে, ডাক্তারেরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, শিবিরে জড়ো হওয়া ভিড়কে ঠিকঠাক নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়বে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, কোচবিহার থেকে মালদহে এ দিন সকাল থেকে বৃষ্টির মধ্যেই ভিড় উপচে পড়ে শিবিরে। উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, মুর্শিদাবাদের একাধিক শিবিরেও শারীরিক দূরত্ব-বিধি মানার বালাই ছিল না বলে অভিযোগ। পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন শিবিরে প্রশাসন গোল দাগ এঁকে লাইনে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করলেও, তা মানা হয়নি। পূর্বস্থলীর একটি শিবিরে লাইনে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে এক মহিলা জখম হন। এক মহিলা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পুরুলিয়ার দু’টি শিবিরেও তিন জন মহিলা অসুস্থ হন ।

পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথির দুরমুঠ দেশপ্রাণ কলেজের শিবিরে অভিযোগ ওঠে, তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যদের থেকে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর ফর্ম নিতে হচ্ছে। তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ফর্ম পূরণে সাহায্য করা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদের ডোমকলের রাইপুর হাইস্কুলের শিবিরে পর্যাপ্ত ফর্ম না থাকায় লোকজন বাইরের দোকান থেকে ফটোকপি করা ফর্ম কিনে জমা দিতে বাধ্য হন বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সিরাজ দ্বানেশ্বর বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

Advertisement

তবে বীরভূমের মুরারইয়ে ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে
সোমবার পদপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পরে, বিভিন্ন শিবিরে ভিড় সামলাতে অনেক বেশি পুলিশি নজরদারি নজরে পড়েছে এ দিন। বয়স্কদের বসার ব্যবস্থা, শিশুদের দুধ পান করানোর জন্য মায়েদের জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা-সহ নানা
ব্যবস্থা ছিল। জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘প্রথম দিন যেটুকু সমস্যা ছিল, মেটানো গিয়েছে।’’ হাওড়ায় সোমবার শিবির ছিল ৬৭টি। এ দিন হয় ১৩০টি। জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘ভিড় যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে জন্য শিবির বাড়ানো হয়েছে।’’ একই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে পশ্চিম বর্ধমান প্রশাসন।

নদিয়ার করিমপুর, রানাঘাট, তেহট্টের কয়েকটি শিবিরে মুখে মাস্ক না থাকলে গেটে আটকানো হয়। অনেককে মাস্ক ও হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়। পূর্ব বর্ধমানের কালনা কলেজের শিবিরে দেখা যায়, বিশেষ ভিড় জমেনি। শিবিরের কর্মীদের দাবি, নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ওয়ার্ডকে পরিষেবা দেওয়ার কথা প্রচার করা হয়েছে। ফলে, নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষ শিবিরে আসছেন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশের তরফে মাস্ক বিলি করা হয়।

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের কাউন্টার বেড়েছে মালদহ, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম মেদিনীপুরে। শিবির পরিদর্শনে এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরায় অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম ভি রাও এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে শ্রমসচিব বরুণ রায় যান। ঝাড়গ্রামে প্রতিটি শিবিরে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্য ১০টি কাউন্টার ছিল। আজ, বুধবার থেকে ২০টি কাউন্টার করার কথা রয়েছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক জয়সি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অনেকের ধারণা হয়েছে, প্রথম দিন না নিলে হয়তো ফর্ম পাবেন না। অনেকে ভাবছেন, যিনি আগে জমা দেবেন তিনি আগে টাকা পাবেন। তাই সবাই এক সঙ্গে আসছেন।’’

বাঁকুড়ার জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য উৎসাহ বেশি। তাই ওই প্রকল্পের কাউন্টার প্রতি শিবিরে বাড়ানো হয়েছে।” উৎসাহ কেমন ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্য? প্রশাসন সূত্রের খবর, সোমবার সোমবার বেলপাহাড়ির এসসি হাইস্কুলের শিবিরে রাত ১২টা পর্যন্ত চলেছে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর জন্য ফর্ম জমা নেওয়া। ওই দিন পশ্চিম বর্ধমানে জমা পড়া ১৫,১৬০টি আবেদনের মধ্যে ১০ হাজারের বেশি এবং পূর্ব বর্ধমানে শিবিরে যাওয়া ৬২,৫০৮ জনের মধ্যে ৫০,৩৫৬ জন ওই প্রকল্পের জন্য আবেদন করেন।

সরকারি শিবিরে কোভিড-বিধি উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজ্য কোভিড মিনিটরিং কমিটির পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার কো-অর্ডিনেটর সমরেন্দ্রকুমার বসু বলেন, ‘‘অনেকে মাস্ক পরছেন না, দূরত্ব বজায় রাখছেন না—তাতে উদ্বেগ বাড়ছে। কারণ, এ ভাবে চললে তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা বাড়বে।’’ ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর আসানসোল শাখার সভাপতি শ্যামল সান্যালের পরামর্শ, ‘‘প্রশাসনের উচিত, দুয়ারে সরকার শিবির পরিচালনা কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করা।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement