প্রতীকী ছবি।
ভূগর্ভের জল যাতে যথেচ্ছ তোলা না-হয়, পরিবেশবিদেরা সেই বিষয়ে বারবার সতর্ক করছেন। কিন্তু বোরো চাষে ভরসা শুধু ভূগর্ভস্থ জল। কেননা জলাধারে পর্যাপ্ত জল নেই। তাই বোরো মরসুমে ক্যানালের মাধ্যমে সেচের জল মিলবে না। বোরো ধান পুরোপুরি সেচ নির্ভর বলেই সঙ্কট চরম আকার নিতে চলেছে। এই অবস্থায় কৃষি দফতর ধানের বদলে বিকল্প চাষে নামাতে চাইছে চাষিদের। কারণ, মাটির নীচের জল তুলেও পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে বলে মনে করছেন না কৃষিকর্তাদের একাংশ।
জেলার রিপোর্ট বলছে, চাষিরা বোরো ধান ছেড়ে বিকল্প তৈলবীজ, ডাল চাষে তেমন আগ্রহী নন। কারণ, তাঁরা বোরো ধান চাষ করেন মূলত বাড়ির সারা বছরের চাল মজুত করার জন্য। বোরোর ফলন মার খেলে খরিফ মরসুম থেকে সরকারের ধান সংগ্রহ প্রক্রিয়াও ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কৃষিকর্তারা জানান, বোরোর ফলন ঠিকঠাক না-হলে সারা বছরের চাল মজুত না-করে চাষিরা সরকারকে ধান বিক্রি করতে চাইবেন না। রাজ্যে গড়ে ১২ লক্ষ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এই চাষ শুরু হয় জানুয়ারির মাঝামাঝি। তখন ক্যানালের মাধ্যমে টানা সেচের জল পাওয়া জরুরি।
কংসাবতীর উপরে মুকুটমণিপুর জলাধার, দামোদরে দুর্গাপুর জলাধার, ময়ূরাক্ষীর উপরে মশানজোড় জলাধার এবং উত্তরবঙ্গে তিস্তা জলাধার থেকে ক্যানালের মাধ্যমে জল দেওয়া হয়। কিন্তু ওই সব জলাধারে যে-পরিমাণ জল আছে, পানীয় জল ও শিল্পের চাহিদা মিটিয়ে তা থেকে সেচের জল দেওয়া মুশকিল হবে। সেচ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পানীয় ও শিল্পে জল দেওয়াই অগ্রাধিকার। তার পরে থাকলে জল দেওয়া সেচে। এ বার পর্যাপ্ত জল নেই বলে সেচে দেওয়া যাচ্ছে না। দিলে পানীয় জলের সমস্যা হতে পারে।’’
কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বৃষ্টি তেমন না-হওয়ায় জল নেই জলাধারে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সাব-মার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তুলতে হবে। কম জল লাগে, এমন রেন গান স্প্রিংলার যন্ত্রও দিচ্ছে সরকার। জল ধরো জল ভরো কর্মসূচিতে যে-সব পুকুর কাটা হয়েছে, সেখান থেকেও সেচের জলের ব্যবস্থা করতে হবে। ‘‘চাষিদেরও পরিস্থিতির কথা বুঝতে হবে। বোরো চাষে অনেক জল লাগে। যে-ফসলে জল লাগবে না, সেই তৈলবীজ, ডাল চাষে চাষিদের নামতে বলা হচ্ছে,’’ বলেন আশিসবাবু।
ভূগর্ভস্থ জল তোলার ক্ষেত্রেও যে সমস্যা হবে, তা মেনে নিচ্ছেন জলসম্পদ ও ক্ষুদ্রসেচ দফতরের কর্তারা। তাঁদের একাংশ জানাচ্ছেন, বৃষ্টি ভাল হলে মাটির নীচের জলভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু এ বার বৃষ্টি সে-ভাবে হয়নি। ফলে রিভার লিফটিং পাম্প বা সাব-মার্সিবল পাম্প থেকে জল পর্যাপ্ত আসবে কি না, বোঝা মুশকিল। তা ছাড়া মাটির নীচ থেকে যত খুশি জল তোলার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। ‘‘চাষিদের কথা ভেবেই এ বার মাটির নীচে জল তোলার ক্ষেত্রে সরকার শিথিল মনোভাব দেখাবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না-হয়, দেখতে হবে তা-ও। রাজ্যের খাদ্য সুরক্ষার প্রশ্নে বোরো চাষে জলের ব্যবস্থা করতেই হবে,’’ বলেন জলসম্পদ ও ক্ষুদ্রসেচ মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।