আনন্দবাজারের সাফল্য

স্বাস্থ্য ভবন নড়তেই হাসপাতালে ঠাঁই প্রৌঢ়ের

স্বাস্থ্য ভবনের হস্তক্ষেপে সুভাষগ্রামের সুব্রত মজুমদার বুধবার ভর্তি হলেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি (বিআইএন)-য়ে। ওই হাসপাতালই এক সপ্তাহ আগে কোনও চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দিয়েছিল পথ দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া ওই ক্যুরিয়র সার্ভিস সংস্থার কর্মীকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০৪:১৪
Share:

স্বাস্থ্য ভবনের হস্তক্ষেপে সুভাষগ্রামের সুব্রত মজুমদার বুধবার ভর্তি হলেন বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি (বিআইএন)-য়ে। ওই হাসপাতালই এক সপ্তাহ আগে কোনও চিকিৎসা না করে ফিরিয়ে দিয়েছিল পথ দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া ওই ক্যুরিয়র সার্ভিস সংস্থার কর্মীকে। জানিয়ে দিয়েছিল, গুরুতর আহত ওই রোগীকে ভর্তি করার মতো জায়গা তাদের নেই।

Advertisement

শুধু বিআইএন-ই নয়, আরও দু’টি সরকারি হাসপাতাল চিকিৎসা করেনি সুব্রতবাবুর। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ তো হাসপাতালের কাগজেই গাদা দামি ওষুধের তালিকা লিখে হাতে ধরিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। একটি পথ দুর্ঘটনায় সুব্রতবাবুর গলার নীচ থেকে দেহের বাকি অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছিল সুব্রতবাবুর। সেই অবস্থাতেই প্রায় বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়েছিলেন তিনি। সুব্রতবাবুর ভায়রাভাই তিনটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ভবনকেও। কিন্তু পরিস্থিতির বদল ঘটেনি।

বুধবার আনন্দবাজার পত্রিকায় সুব্রতবাবুর এই দুরবস্থার কথা প্রকাশিত হওয়ার পরে স্বাস্থ্য ভবনে তোলপাড় পড়ে যায়। কেন তিনটি হাসপাতাল মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অমান্য করল, কেনই বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে তারা বুড়ো আঙুল দেখাল, তা জানতে চাওয়া হয় ওই হাসপাতালগুলির কাছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বিআইএন-কে জানিয়ে দেন, সুব্রতবাবুকে ওই হাসপাতালেই ভর্তি করাতে হবে। সেইমতো ইমার্জেন্সি নিউরোসার্জারি বিভাগে সুব্রতবাবুকে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

সুশান্তবাবুর কথায়, ‘‘আমরা প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজের নিউরোসার্জারি ও নিউরো মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান ও চিকিৎসকদের সতর্ক করে দিয়েছি। ভবিষ্যতে এমন কোনও ঘটনা হলে কঠোরতম শাস্তির কথা ভাবা হবে।’’ কিন্তু বারবারই তো এমন ঘটনা ঘটছে। স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ কেউ তো মানছে না। সুশান্তবাবু বলেন, ‘‘আমাদের মাথায় ঢুকছে না এত বার সতর্ক করা এবং নির্দেশ দেওয়ার পরেও কেন একজন মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালগুলি ফেরাবে। যাই হোক, এ সব কোনও ভাবেই আর বরদাস্ত করা হবে না।’’

এ দিন বিআইএন-এর ইমার্জেন্সি নিউরোসার্জারির ৭ নম্বর শয্যায় ভর্তি করা হয় সুব্রতবাবুকে। চিকিৎসকেরা দফায়-দফায় তাঁকে পরীক্ষা করেন। তাঁর স্ত্রী আরতিদেবীর কথায়, ‘‘দুর্ঘটনার পরের দিন ওঁকে নিয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘোরার কথা খুব মনে পড়ছে। আজ স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা বলে দিয়েছেন, তাই এত খাতির হচ্ছে। সে দিন এই পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানুষটাকে ভর্তির জন্য ডাক্তারবাবুদের হাতেপায়ে ধরেছিলাম। এ রাজ্যে উপরমহলে যোগাযোগ না থাকল‌ে কিছুই হয় না।’’

কিন্তু বিআইএন আগেই সুব্রতবাবুকে ভর্তি করে নিল না কেন?

হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা যা বলার স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে জানিয়ে এসেছি।’’ মঙ্গলবার স্বাস্থ্যভবনে কলকাতার সব মেডিক্যাল কলেজ এবং বিআইএনের নিউরোসার্জারির প্রধানদের জরুরি বৈঠকে ডেকেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব রাজেন্দ্র শুক্ল এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, বিআইএনের চিকিৎসকেরা সেখানে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে জানান, ইমার্জেন্সি কেসের চাপে তাঁদের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। গুরুতর আহতকেও মাটিতে রাখতে হচ্ছে। এই ভাবে আর তাঁদের পক্ষে কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। কলকাতার অন্য মেডিক্যাল কলেজগুলিও এই কারণে গুরুতর চোট বা আঘাত পাওয়া কোনও রোগীকে ইমার্জেন্সি থেকে ভর্তি করতে চাইছে না।

তা হলে সুব্রতবাবু এ দিন ভর্তি হলেন কী ভাবে?

হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতি হাসপাতালেই ভিআইপি কোটার জন্য কিছ শয্যা থাকে। সেই শয্যাতেই ভর্তি করানো হয়েছে ওই রোগীকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন