শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুরেই তিন বছরে ক্ষতি ৬০ লক্ষ

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘেরাওয়ের প্রতিবাদে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আরএসএসের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) বিরুদ্ধে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩১
Share:

মেরামত: গোলমালে ভেঙে গিয়েছে গেটে তালা লাগানোর জায়গা। সারাই করা হচ্ছে ওই অংশটি। শুক্রবার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

শিক্ষাঙ্গনের দখল নেওয়ার রেষারেষিতেই গত তিন বছরে সরকারের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা! এই সময়কালের মধ্যে শহরের বিভিন্ন কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা দফতরে পাঠানো রিপোর্ট তেমনটাই। কোথাও ইউনিয়ন রুমের পাশাপাশি ভাঙা হয়েছে ক্লাসঘর। কোথাও সরাসরি নিশানা করা হয়েছে অধ্যক্ষের ঘরকে। সেই তালিকাতেই রয়েছে বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা সেই ক্ষতির অঙ্ককেই আরও দীর্ঘ করবে বলে মত শিক্ষা দফতরের।

Advertisement

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘেরাওয়ের প্রতিবাদে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে আরএসএসের শাখা সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) বিরুদ্ধে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল, চার নম্বর গেটের নিরাপত্তারক্ষীর ঘরের কাচ ভাঙা। কলা বিভাগের ইউনিয়নের ঘরেও ভাঙচুরের ছাপ স্পষ্ট। চেয়ার-টেবিল বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের জেরে পাখার ব্লেড দুমড়ে গিয়েছে। ইউনিয়ন রুমের দেওয়ালে লাল কালি দিয়ে এবিভিপি লেখার পাশাপাশি কালি মাখানো হয়েছে সেখানে থাকা ভগৎ সিংহের একটি ছবিতেও।

শিক্ষা দফতরের অবশ্য দাবি, ২০১৬ থেকেই শিক্ষাঙ্গনে ভাঙচুরের ঘটনায় কড়া অবস্থান নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নির্দেশে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও ঘটনায় সম্পত্তির ক্ষতি হলে কী কী ভাঙা হয়েছে, তার মূল্য-সহ তালিকা পাঠাতে হবে শিক্ষা দফতরে। পার্থবাবু বলেছিলেন, ‘‘যাঁরা ভেঙেছেন, তাঁদের দিয়েই ক্ষতিপূরণ দেওয়ানো হবে।’’ সেই মতো গত কয়েক বছরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা কলেজগুলি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলেই রিপোর্ট পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তা পাঠিয়ে দিয়েছে শিক্ষা দফতরে।

Advertisement

রিপোর্ট অনুযায়ী, দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ, চারুচন্দ্র, সেন্ট পলস, জয়পুরিয়া, মণীন্দ্রচন্দ্র ও বিদ্যাসাগর কলেজে গত তিন বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার সামগ্রী ভাঙা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টস বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিভিন্ন দফায় আসা ওই সম্পত্তি ক্ষতির তালিকা মিলিয়ে ৬০ লাখ ছুঁইছুঁই। সবই শিক্ষা দফতরে পাঠানো হয়েছে। বিদ্যাসাগর কলেজে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনায় নিজেই রিপোর্ট নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়।’’ তবে মন্ত্রী বললেও প্রায় সব ক্ষেত্রেই ক্ষতির টাকা মেটাতে হয়েছে হয় কলেজ, নয় শিক্ষা দফতরকে।

চারুচন্দ্র কলেজের শিক্ষক বিমলশঙ্কর নন্দ বলছিলেন, ‘‘শিক্ষা দফতর নির্দেশ দিলেও সব কলেজই নিয়ম করে ক্ষতির তালিকা পাঠায় না। তাই শিক্ষাঙ্গনে এই হামলা আটকানো যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে আরও কড়া হওয়া প্রয়োজন।’’ বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যক্ষ গৌতম কুন্ডু বললেন, ‘‘হামলায় ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তো দিতেই হয়। শিক্ষা দফতরের টাকায় হওয়া কোনও প্রকল্পের ক্ষতি হলে তা-ও জানাতে হয়। কিন্তু কত বলব? ইউনিয়নের ঝামেলা, ক্রিকেট খেলতে গিয়ে কাচ ভেঙে যাওয়া তো রোজই লেগে রয়েছে। অনেকে বাইরে থেকে পরীক্ষা দিতে এসেও ক্লাসঘরের সামগ্রী ভেঙে দিয়ে যান।’’

ভাঙচুরের জেরে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ব অভিজ্ঞতা সে ভাবে না থাকলেও বৃহস্পতিবারের ঘটনার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কেও ক্ষতির রিপোর্ট পাঠাতে হবে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাস অসুস্থ থাকায় এ দিন ক্যাম্পাসে যাননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তিনটে কম্পিউটার মিলিয়ে প্রায় দু’লক্ষ টাকার জিনিস ভাঙা হয়েছে। শিক্ষা দফতরকে জানাচ্ছি।’’

পার্থবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই ভাঙচুর বরদাস্ত করা হবে না। আমি বারবার বলেছি। কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ তবে আগের ‘কঠোর’ অবস্থানের পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি কেন? উত্তর মেলেনি মন্ত্রীর কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন