Food Delivery App

পুজোয় অনলাইনে খাবার বরাত দেওয়া বন্ধ? ভাল পুজো কাটাতে চেয়ে ধর্মঘটের পথে শহরের ‘ডেলিভারি বয়’রা

ফলাও করে প্রচার নয়, ফেসবুকে একটি পোস্ট করেই আন্দোলনে নেমেছেন কর্মীদের ওই অংশ। তাঁদের অভিযোগ, দিনে ১২- ১৩ ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন বড়জোর ৫০০-৬০০ টাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৭:৫০
Share:

সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দফা অভিযোগ রয়েছে সরবরাহ কর্মীদের। ফাইল চিত্র।

‘মুখের গোড়ায় খাবার ধরা’— বলতেন পুরনো দিনের মা-দিদিমারা। অতিব্যস্ততায় খাওয়া ফেলে কাজে যাওয়া ছেলেমেয়েদের মুখের কাছে খাবার ধরতেন তাঁরা। অর্থের বিনিময়ে হলেও এ যুগে কিছুটা সেই কাজ করেন অনলাইনে খাবার বিকিকিনির অ্যাপের ‘ডেলিভারি বয়’রা। তবে এ বার পুজোয় তাঁদের অনেকেই যানজটের ফাঁক গলে দু’চাকার ‘পৃথ্বীরাজ’-এ আপনার খাবার নিয়ে বাড়ির চৌকাঠ বা অফিসের রিসেপশনে হাজির হবেন না। কারণ, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ চতুর্থী থেকেই ধর্মঘটে যাচ্ছেন অনলাইন খাবার সরবরাহ অ্যাপের কর্মীদের একটি বড় অংশ। তাঁদের দাবি, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে তাঁদের দিকটাও দেখুন অ্যাপ কর্তৃপক্ষ। সবার মুখে খাবার পৌঁছে দিতে দিতে তাঁদের নিজেদের সংস্থানেই যে টান পড়ছে!

Advertisement

ফলাও করে প্রচার নয়, ফেসবুকে একটি পোস্ট করেই আন্দোলনে নেমেছেন কর্মীদের ওই অংশ। তাঁদের অভিযোগ, দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করে তাঁরা বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন বড়জোর ৫০০-৬০০ টাকা। মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সেই আয় আরও কমেছে। সমস্যার কথা বলে কর্তৃপক্ষের কাছে দু’টি দাবি জানিয়েছিলেন তাঁরা। এক, তাঁদের ‘বেস ফেয়ার’ অর্থাৎ ডেলিভারি পিছু ন্যূনতম প্রাপ্য (বর্তমানে ২০ টাকা) বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করতে হবে। দুই, অতিরিক্ত কিলোমিটার পিছু প্রাপ্য ৫ টাকার বদলে ১০ টাকা করতে হবে। দু’টি দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানা যায়নি। তবে সরবরাহ কর্মীদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দাবি মানা হয়নি বলেই বাধ্য হয়ে পুজোর আগে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

ডেলিভারি বয়দের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘ডেলিভারি ভয়েস’-এর সৌম্য চট্টোপাধ্যায় জানান, কলকাতা শহরের পাঁচটি জোন থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ডেলিভারি বয় যোগ দিয়েছেন কর্মবিরতিতে। এই পাঁচটি জোন হল— লেক টাউন, দমদম, সোদপুর, চিনার পার্ক এবং বেলঘরিয়া। আপাতত এই অঞ্চলের কর্মীরাই নিজেদের সমস্যার সমাধান চেয়ে আন্দোলন করবেন তাঁরা। সমস্যা ঠিক কতটা গভীরে তা বোঝাতে সৌম্য বলেন, ‘‘সংস্থাগুলিতে ওঁদের ডেলিভারি পার্টনার বলা হয়। ওয়ার্কার বা কর্মী বলা হয় না। ফলে কর্মী হিসাবে তাঁদের যে প্রাপ্য অধিকার, সে সব থেকেও বঞ্চিত হন ওঁরা।’’ সৌম্য জানিয়েছেন, পুজোর আগে আন্দোলন করলে ওঁদের উপার্জন বন্ধ হবে। কিন্তু সেই ক্ষতি স্বীকার করেও আন্দোলনে নামছেন ওই সরবরাহ কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকছেন সবজি সরবরাহকারী একটি অ্যাপের কর্মীরাও। ওই সংস্থাটির কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের ‘বেস ফেয়ার’ ৫০টাকা থেকে কমিয়ে এক ধাক্কায় ২০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। সুরাহা চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। উল্টে বলে দেওয়া হয়েছে থাকলে থাকো, নয়তো ছেড়ে দাও।’

Advertisement

এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনার কথা বলতে হয়— কিছু দিন আগেই ঘোড়ায় চেপে ক্রেতার কাছে খাবার পৌঁছে দিয়ে খবরে এসেছিলেন এক খাবার সরবরাহ কর্মী। সংবাদমাধ্যম বাহিত হয়ে সেই সংবাদ পৌঁছেছিল জনতার দরবারে। জানা গিয়েছিল, প্রচারের জন্য নয়, নিজের গাড়িটি ছিল না তাঁর কাছে। সময়ে খাবার পৌঁছে দিতে হবে ভেবে হাতের কাছে যা পেয়েছিলেন, চেপে বসেছিলেন। তাতে অবশ্য ক্ষতি কিছু হয়নি। সংস্থার সুনামই বেড়েছিল। কিন্তু যে সংস্থার সুনামের জন্য কর্মীরা এই পরিশ্রম করছেন, অভিযোগ, তাদের কাছ থেকে শুধু উপেক্ষাই জুটেছে কর্মীদের। ফলে পুজোর মুখে ধর্মঘট ডেকেছেন তাঁরা। পুজোর মুখে এই পদক্ষেপ তাঁদের পুজো খারাপ করতে পারে তা বুঝেও। তবে আগামী দিনে আরও ভাল পুজো কাটানোর আশা থেকেই এই পদক্ষেপ। আর আশা, অচিরেই আরও অনেককে এই আন্দোলনে পাশে পাবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন