৩ জেলায় ভাসছে নতুন এলাকা

হাওড়া ও হুগলির বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন— ‘‘এই রকম দুর্ভোগ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। সাধারণ মানুষ যেন তার জন্য তৈরি থাকেন।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫২
Share:

জল ছাড়া হচ্ছে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে। তা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন লোকজন। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

ঝাড়খণ্ড থেকে নিম্নচাপ সরে গিয়েছে বিহারে। বৃহস্পতিবার তাই ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি কমেছে। কিন্তু ঝাড়খণ্ডের বেশির ভাগ জলাধার যে ভাবে উপচে পড়ছে, তাতে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির আশু কোনও উন্নতির আশা দেখছে না নবান্ন। ঝাড়খণ্ডের নদীবাঁধগুলি জল ছাড়লে তা তিন দিনে পৌঁছয় দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলিতে। তাই ঝাড়খণ্ড জল ছাড়া বন্ধ করার পরে দক্ষিণবঙ্গের নদীগুলিতে জলস্তর কমবে। ঝাড়খণ্ডের সেচমন্ত্রী চন্দ্রপ্রকাশ চৌধুরী এ দিন বলেছেন, ‘‘বৃষ্টি কমায় নদীবাঁধগুলো থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর, অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসি-র জল ছাড়ায় পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, হাওড়া এবং নদিয়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকা ভেসে গিয়েছে। ডিভিসি জল ছাড়া বন্ধ না-করা পর্যন্ত জেলাগুলির পরিস্থিতির উন্নতি হবে না বলেই মনে করছে নবান্ন।


ঘাটালের প্রতাপপুরের চৌধুরীপাড়ায় বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে শহরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

Advertisement

হাওড়া ও হুগলির বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানিয়েছেন— ‘‘এই রকম দুর্ভোগ অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে। সাধারণ মানুষ যেন তার জন্য তৈরি থাকেন।’’

মমতা বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাঙ্ক রাজ্যের বন্যা নিয়ন্ত্রণে ৩০০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে। তার মধ্যে ১৮০০ কোটি টাকা হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান এবং মেদিনীপুরের নিচু এলাকাগুলির নদীবাঁধ সংস্কারে খরচ করা হবে।’’ কিন্তু ডিভিসি তাদের জলাধারগুলির সংস্কার না করলে স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়ার বন্যা দুর্গত এলাকায় দাঁড়িয়ে মমতা ঘোষণা করেন, অভিনেতা দেব যাবেন মেদিনীপুরে, ববি হাকিম যাবেন হুগলি ও বীরভূমে।

ডিভিসি-র ছাড়া জলে হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার জলে ডুবেছিল গ্রামীণ হাওড়ার চারটি পঞ্চায়েত। বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে ডুবেছে আরও পাঁচটি পঞ্চায়েত। এই নিয়ে উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাই বন্যার কবলে পড়ল। ডিভিসির ছাড়া জলে বুধবার দুপুর থেকেই মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদর নদীর জল চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে জল বইছিল। সন্ধ্যা হতে না হতেই খানাকুল, পুরশুড়া এবং আরামবাগে শুরু হয় বাঁধ এবং সেতু ভাঙার হিড়িক।

আরও পড়ুন: মমতার মুখে ফের ‘ম্যানমেড’ বন্যা

বুধবার রাতে প্রতাপপুরে শিলাবতী নদীর বাঁধ ভাঙায় ঘাটালের বন্যা পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ডুবে গিয়েছে ঘাটাল শহরও। আগেই মহকুমার ২৫টি পঞ্চায়েত এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছিল। বাঁধ ভাঙায় আরও ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত পুরোপুরি জলমগ্ন। পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া এখনও ডুবে রয়েছে।

বৃষ্টি থেমে গেলেও উদ্বেগ কমছে না নবদ্বীপ-মায়াপুরে। ডুবেছে মায়াপুরের রাস্তার দু’পাশের জমি। চাষিরা জানাচ্ছেন, পাটে অসুবিধা না-হলেও ক্ষতি হবে আমন চাষ।

পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর ২ ব্লকের ডুংরি গ্রামে দামোদরের জল ঢুকে যায় বুধবার রাতে। দামোদর সংলগ্ন বাঁকুড়ার মানাচর এলাকা থেকে জল নামেনি। বীরভূমে নদীর জল ধীরে হলেও নামছে। তবে, বিস্তীর্ণ এলাকার ধান খেত এখনও জলের তলায়। মুণ্ডেশ্বরী নদীর উপর রায়নার বড় বইনানে বাঁধ ভেঙে ভেসেছে বহু গ্রাম। পাশের হুগলি জেলার আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির বেশ কয়েকটি গ্রামেও জল ঢুকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দুর্গত জেলাগুলিতে সেচ, কৃষি ও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের ছুটি বাতিল করেছে রাজ্য সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন