লগ্নি-তদন্তে ইনিংস শুরু নতুন শাখার

বাম জমানা থেকেই চটজলদি বাড়তি লাভের টোপে লগ্নি-প্রতারণা সরকারকে এবং বঙ্গবাসীকে নাজেহাল করে আসছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে সেই দুর্বিপাক চরমে ওঠে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার অর্থ লগ্নি সংক্রান্ত মামলায় ‘নতুন পথে’ তদন্ত শুরু করে দিল রাজ্যের নবগঠিত ‘ইকনমিক অফেন্স উইং বা ইওডব্লিউ’ বা আর্থিক অপরাধ দমন শাখা।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৪
Share:

বাম জমানা থেকেই চটজলদি বাড়তি লাভের টোপে লগ্নি-প্রতারণা সরকারকে এবং বঙ্গবাসীকে নাজেহাল করে আসছে। সারদা কেলেঙ্কারিতে সেই দুর্বিপাক চরমে ওঠে। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার অর্থ লগ্নি সংক্রান্ত মামলায় ‘নতুন পথে’ তদন্ত শুরু করে দিল রাজ্যের নবগঠিত ‘ইকনমিক অফেন্স উইং বা ইওডব্লিউ’ বা আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। বস্তুত, এই মামলা দিয়েই এ রাজ্যে নিজেদের খাতা খুলল তারা।

Advertisement

সোনায় টাকা লগ্নি করার নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছিল একটি সংস্থার বিরুদ্ধে। টালিগঞ্জ থানা ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত সংস্থার তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। সেই প্রতারণার মামলা চালিয়ে যাবে ওই থানা। সেই সঙ্গে সম্প্রতি বৌবাজার থানায় সোনা কেলেঙ্কারি নিয়ে নতুন মামলা রুজু করেছে রাজ্যের আর্থিক অপরাধ দমন শাখা। পুলিশি সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত তিন জনকেও হেফাজতে নিতে পারে ইওডব্লিউ।

আর্থিক অপরাধ দমন শাখার খবর, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অব ইন্টারেস্ট অব ডিপোজিটরস ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৫’ নামে যে-আইনে এই মামলা রুজু করা হয়েছে, তাতে কোনও ডিএসপি-কে তদন্তের দায়িত্ব দিতে হয়। শাখায় পর্যাপ্ত ডিএসপি না-থাকায় সমতুল পদমর্যাদার অফিসার, লালবাজারের আর্থিক অপরাধ সংক্রান্ত বিভাগের সহকারী কমিশনার বিশ্বনাথ সরখেলকে দায়িত্ব সেই দেওয়া হয়েছে। তিনি অবশ্য লালবাজারের বদলে ইওডব্লিউ-এ তাঁর তদন্তের রিপোর্ট জমা দেবেন।

Advertisement

পুলিশি সূত্রের খবর, ২০১২ সালে সোনার গয়না বিক্রয়কারী একটি সংস্থা ‘ধনবৃদ্ধি’ ও ‘ধনতৃষ্ণা’ নামে এক বছর মেয়াদের দু’টি লগ্নি প্রকল্প চালু করেছিল। শর্ত ছিল, ১১ মাস টাকা দিতে হবে আমানতকারীকে। ১২ মাস পেরোলে লগ্নির অঙ্ক এবং তার উপরে ১০ শতাংশ সুদ হিসেব করে মোট যত টাকা হবে, তার সমমূল্যের সোনার গয়না পাবেন আমানতকারী। ২০১৪ সাল পর্যন্ত বহু আমানতকারী ওই সংস্থায় লগ্নি করলেও সময়মতো গয়না পাননি। তার পরেই লগ্নিকারীদের একাংশ পুলিশে অভিযোগ করেন।

সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় ২০১৩-য়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিয়ে সারদার কর্ণধার এবং অন্য কর্তাদের গারদে পোরে সিবিআই। সেই সঙ্গে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী, শাসক দলের সাংসদ, নেতাকেও গ্রেফতার করে তারা। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট পর্যন্ত বেআইনি লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি তৃণমূল সরকারের পিছু ধাওয়া করেছে। গত ডিসেম্বরে বেআইনি লগ্নি সংস্থা ঠেকাতে রাজ্যে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল প্রোটেকশন অব ইন্টারেস্ট অব ডিপোজিটরস ইন ফিনান্সিয়াল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট, ২০১৫’ পাশ হয়। দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই সেই আইন অনুযায়ী আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে ঢেলে সাজেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই শাখার অধিকর্তার দায়িত্ব পান আইজি পদমর্যাদার আইপিএস অফিসার জাভেদ শামিম। নবান্নের খবর, রাজ্য পুলিশের ডিজি-র বদলে সরাসরি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের অধীনে কাজ করবেন ইওডব্লিউ-এর অধিকর্তা।

সিআইডি-র হাতে থাকা দু’টি বেআইনি লগ্নি সংস্থার তদন্তভারও আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে দেওয়া হচ্ছে বলে জানাচ্ছে নবান্নের সূত্র। তার মধ্যে লগ্নি সংস্থা ‘আইকোর’-এর আট কর্তাকে গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও দিয়েছেন সিআইডি-র তদন্তকারীরা। আর্থিক অপরাধ দমন শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, আইকোরের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে একটি নতুন মামলা রুজু করা হবে। নতুন আইন অনুযায়ী আর্থিক অপরাধ দমন শাখা বেআইনি অর্থ লগ্নি সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নিলাম করতে পারে এবং আমানতকারীদের তা ফেরত দিতে পারে (সারদা কেলেঙ্কারিতে বিচারপতি শ্যামল সেন কমিশন যা করত)। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য আইকোরের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে নবান্ন। সেই সঙ্গে তৈরি হচ্ছে প্রতারিতদের তালিকাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন