Partha Chatterjee

নথির ব্যূহে পার্থ-অর্পিতা

এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ, অর্পিতা এবং তাঁদের ছ’টি সংস্থার বিরুদ্ধে ইডি ওই নথি পেশ করেছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত (পিএমএলএ)-এ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:৫৮
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

আইনি পরিভাষায় নাম তার ‘রিলাই আপন ডকুমেন্টস’ (আরইউডি) বা ‘বিশ্বাসযোগ্য নথি’। আইনজীবী শিবিরের চোখে এসএসসি বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং তাঁর বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওই সব নথিই তদন্তকারীদের মূল হাতিয়ার। কিন্তু ওই মামলায় আরইউডি নথির বিপুল বহরই কৌঁসুলিদের বিস্ময় উদ্রেক করছে। ১৭২ পাতার সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটের সঙ্গে ১৪,৬৪৩টি বিশ্বাসযোগ্য নথি পেশ করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আইনজীবী মহলের পর্যবেক্ষণ, কোনও আর্থিক দুর্নীতির মামলায় এমন পর্বতপ্রমাণ আরইউডি নথি দাখিল কার্যত নজিরবিহীন। নথির ফাঁদে মূল অভিযুক্তদের নাস্তানাবুদ করাই তদন্ত সংস্থার অভিপ্রায় বলে মনে করছেন ওই আইনজীবীরা।

Advertisement

এসএসসি-র নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে পার্থ, অর্পিতা এবং তাঁদের ছ’টি সংস্থার বিরুদ্ধে ইডি ওই নথি পেশ করেছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত (পিএমএলএ)-এ। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, চার্জশিট পেশ করার দিনে দু’টি বড় ট্রাঙ্ক বোঝাই করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ১৪,৬৪৩টি নথি আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্তকারী অফিসারদের বক্তব্য, বিচারক যদি প্রয়োজন মনে করেন, চার্জশিটের পাশাপাশি ওই নথি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। ইডি-র দাবি, বিচারক ইতিমধ্যেই ওই সব নথির বিষয়ে খোঁজ নিয়েছেন। চার্জশিট জমা দেওয়ার পরে সেগুলি দফতরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সেই সব নথি ফের পেশ করা হবে আদালতে।

আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, ওই মামলায় সবে প্রথম সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। এর পরে তারা কমপক্ষে আরও দু’টি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট এবং তার পরে চূড়ান্ত চার্জশিট পেশ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। সে-ক্ষেত্রে আরও বিশ্বাসযোগ্য নথি দাখিল করা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত সেই আরইউডি নথির পাহাড় ঠিক কতটা উঁচু হবে, সেটা এখন আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

Advertisement

ইডি-র দাবি, চার্জশিটে পার্থ ও অর্পিতার নগদ টাকা, গয়না-সহ ১০৩.১০ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির খতিয়ান পেশ করা হয়েছে। পার্থের সংস্থার মাধ্যমে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ তুলেছেন তদন্তকারীরা। চার্জশিটে তাঁদের দাবি, দুর্নীতির কালো টাকা বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে সাদা করে বিভিন্ন সম্পত্তিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। ইডি-র দাবি, ‘আরইউডি’ নথি ওই সব অভিযোগ প্রমাণের মূল হাতিয়ার। আর আইনজীবীদের একাংশের অভিমত, আর্থিক দুর্নীতির মামলায় ওই সব আরইউডি নথিই সব চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ।

কী আছে ওই সব নথিতে? তদন্তকারীদের দাবি, ওই নথির মধ্যে পার্থ-অর্পিতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেনের খতিয়ান, ওই দু’জনের মোবাইল ফোনের ফরেন্সিক রিপোর্ট এবং তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির বিবরণ রয়েছে। দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে পার্থের ফোনালাপ ও টেক্সট মেসেজের প্রমাণও রয়েছে ওই নথির মধ্যে। রয়েছে সাক্ষ্যপ্রমাণের নথিও। আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, আসলে পার্থ ও অর্পিতাকে সাক্ষ্যপ্রমাণের নথির বেড়াজালে বেঁধে ফেলতে চাইছে ইডি। সেই জাল কেটে বেরোতে না-পারলে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন পার্থ-অর্পিতাকে জেল হেফাজতেই থাকতে হতে পারে।

আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ওই পরিমাণ নথি জমা দেওয়ার পরে বোঝা যাচ্ছে, পার্থ ও অর্পিতাকে গ্রেফতারের আগে থেকেই ফাঁদ পেতেছিল ইডি। ওই দু’জনকে গ্রেফতারের ৫৮ দিনের মধ্যে এই বিপুল তথ্যপ্রমাণের নথি জমা দেওয়ার অর্থ, ওই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অনেক আগে থেকেই তা সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল। অর্ধেক তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের পরে পার্থ-অর্পিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ জয়ন্তের সংযোজন, মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সময় এত বিপুল পরিমাণ নথি যাচাই করা হবে। সে-ক্ষেত্রে দীর্ঘায়িত হতে পারে বিচার প্রক্রিয়া।

আলিপুরের প্রাক্তন মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুব বেশি হলে ৭০০-৮০০ ‘বিশ্বাসযোগ্য নথি’ পেয়েছি। কিন্তু এত ‘বিশ্বাসযোগ্য নথি’ এক কথায় নজিরবিহীন। মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন আদালত যদি এর অর্ধেক নথিকেও সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করে, অভিযুক্তদের পক্ষে খুব মুশকিল হতে পারে।’’ ইডি-র আইনজীবী অভিজিৎ ভদ্র বলেন, ‘‘চার্জশিটে উল্লিখিত সব অভিযোগের প্রেক্ষিতে নানা খুঁটিনাটি, তথ্যপ্রমাণ-সহ নথি জমা দেওয়া হয়েছে।’’

পার্থের আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, ‘‘তদন্তকারী সংস্থা পার্থ আর অর্পিতাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট পেশ করেছে। অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করার দায় তাদেরই। বিচার প্রক্রিয়ার সময় আইনি লড়াই হবে। সেই সময়েই সাক্ষ্যপ্রমাণের নথির বিশ্বাসযোগ্যতা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন