পড়ার বাইরের ফি জুড়েই মহার্ঘ স্কুল

বিধানসভায় শুক্রবারই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাগামছাড়া ফি এবং ডোনেশনের বিরোধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার শিক্ষামন্ত্রীও বলে দিলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে পারে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৭ ০৩:৩৪
Share:

বিধানসভায় শুক্রবারই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাগামছাড়া ফি এবং ডোনেশনের বিরোধিতা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার শিক্ষামন্ত্রীও বলে দিলেন,Ed

Advertisement

কলকাতা ও শহরতলিতে এমন স্কুল অজস্র, যেখানে প্রত্যেক বছরে ৫০ হাজার থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ফি গুনতে হয়। ভর্তি, পঠনপাঠনের সঙ্গে যোগ হয় ‘অন্যান্য’ খরচ। এ দিন টাকি হাউস গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস বয়েজ স্কুলের এক অনুষ্ঠানে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটির নাম করে যে আর্থিক চাপ দেওয়া হচ্ছে, তা মেধাকে উপযুক্ত সম্মান দিচ্ছে না।’’ মুখ্যমন্ত্রী এই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষাকে বলি লার্নিং প্লেস। তা কখনও আর্নিং প্লেস হতে পারে না।’’ গ্রামের বাংলা মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়ারা যে এই বিপুল ফি দিয়ে পড়াশোনা না করেও জীবনে সফল হয়, তাও মনে করান তিনি।

শিক্ষামহল এবং অভিভাবক‌দের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একমত। কিছু বেসরকারি স্কুলের অবশ্য দাবি, শিক্ষার মান ও পরিকাঠামোর নিরিখে ফি কমানো অসুবিধাজনক।

Advertisement

আকাশছোঁয়া বেসরকারি

স্কুল খরচ (বার্ষিক)

• মর্ডান হাই স্কুল ফর গার্লস ৮২ হাজার

• লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ ২ লক্ষ ৪৭ হাজার

• লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস ২ লক্ষ ৪৭ হাজার

• ফিউচার ফাউন্ডেশন ১ লক্ষ ৪০ হাজার

• ভারতীয় বিদ্যা ভবন ৫৩ হাজার

• দি বিএসএস স্কুল ৬৬ হাজার

• ক্যালকাটা গার্লস হাই স্কুল ৬৯ হাজার

• সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ৬৫ হাজার

• লরেটো ডে স্কুল ৬০ হাজার

• ডিপিএস রুবি পার্ক ১ লক্ষ

• সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল ৯০ হাজার

• ডিপিএস নিউটাউন ১ লক্ষ

• হেরিটেজ স্কুল ১ লক্ষ ৭০ হাজার

*ভর্তি, টিউশন এবং অন্যান্য সহ

বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স ফি

• অ্যামিটি বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক স্তর) ৪ লক্ষ ৪৫ হাজার

• অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর) ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার

• জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয় (স্নাতক) ২ লক্ষ

ডিপিএস নিউটাউনের অধ্যক্ষ সোনালি সেনের মতে, সেরা শিক্ষা দেওয়ার জন্য বিপুল খরচ করে নিরন্তর পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হয়। তুলনায় ফি তাঁরা বেশি নেন না। সল্টলেক ভারতীয় বিদ্যাভবনের অধ্যক্ষ রেখা বৈশ্যের বক্তব্য, তাঁদের স্কুলের ফি-ও তুলনামূলক ভাবে কম। যা নেওয়া হয় তার উপযোগী শিক্ষা এবং পরিবেশ পায় পড়ুয়ারা। তা ছাড়া, চাইলেও চট করে ফি কমাতে তাঁরা পারবেন না। কারণ, ফি নির্ধারণ করে ভারতীয় বিদ্যাভবনের ট্রাস্ট। পড়ুয়ার সংখ্যায় রাজ্যে শীর্ষে রয়েছে সাউথ পয়েন্ট। এই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণ দামানি জানান, অন্য বেসরকারি স্কুলের চেয়ে তাঁদের ফি বেশ কম। সাধারণের সামর্থ্যের মধ্যেই ফি রাখার চেষ্টা করেন তাঁরা।

রাজ্যের বহু স্কুলই আইসিএসই-র অধীন। সেই বোর্ডের সিইও এবং সচিব জেরি অ্যারাথুন জানিয়েছেন, সরকার চাইলে বেসরকারি স্কুলের লাগামছাড়া ফি-তে রাশ টানতে উদ্যোগী হতেই পারে। তাঁর কথায়, ‘‘সরকারই এই স্কুলগুলিকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দেয়। কাজেই কোনও ব্যবস্থা নেওয়া বা আইন করা হবে কি না, সেটা সরকারের ব্যাপার।’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, নিজস্ব ফি কাঠামোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সংখ্যালঘু স্কুলগুলির রয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলিতে অভাবী এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য সংরক্ষিত ২০ শতাংশ আসনে অন্য পড়ুয়াদের ভর্তি করার অভিযোগের বিষয়েও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘ওই আসনগুলিতে অযোগ্যরা ঢুকে পড়ছে। তা যাতে না-হয়, দেখা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন