ভুল মানবে তো রাজ্য, চিন্তা শিক্ষাবিদদের

মঙ্গলবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে প্রতীচী ট্রাস্টের প্রাথমিক শিক্ষা-বিষয়ক রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে এই আক্ষেপই উঠে এল। রিপোর্টে মালুম হচ্ছে, ‘ক্লাস ওয়ান’ বা প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি পাঠ্য বই ৩৫০ পাতা মোটা। পাতায়-পাতায় ছাত্রদের উদ্দেশে নানা উপদেশ। তাতেও বিস্তর মেদ। রাজ্যে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতিও উদ্বেগজনক। 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ০৫:০০
Share:

গঠনমূলক সমালোচনাকে খোলা মনে গ্রহণ করতে বললেন শাসক দলের সাংসদ, শিক্ষাবিদ সুগত বসু। আর নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মত, আলোচনায় ঘাটতির ফলে অনেক সমস্যা থেকে যাচ্ছে।

Advertisement

মঙ্গলবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে প্রতীচী ট্রাস্টের প্রাথমিক শিক্ষা-বিষয়ক রিপোর্ট প্রকাশের অনুষ্ঠানে এই আক্ষেপই উঠে এল। রিপোর্টে মালুম হচ্ছে, ‘ক্লাস ওয়ান’ বা প্রথম শ্রেণির পড়ুয়াদের একটি পাঠ্য বই ৩৫০ পাতা মোটা। পাতায়-পাতায় ছাত্রদের উদ্দেশে নানা উপদেশ। তাতেও বিস্তর মেদ। রাজ্যে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের ঘাটতিও উদ্বেগজনক।

তবে সমালোচনার এই নানা দিক রাজ্য সরকার কী ভাবে গ্রহণ করবে, তা নিয়ে আশঙ্কা উঠে এসেছে অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষাবিদদের বক্তব্যে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির এমেরিটাস অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরী বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুল কেন, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেও গঠনমূলক সমালোচনাকে প্রায়ই একটা আক্রমণ বা বিদ্রোহ হিসেবে দেখা হয়। আশা করব এই রিপোর্টকে সে ভাবে নেওয়া হবে না।’’ প্রতীচী ট্রাস্টের সভাপতি অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘আলোচনা ছাড়া ভুলত্রুটি সংশোধন করা যায় না। আলোচনার মাধ্যমেই শিখতে পারা যায়, জানতে পারা যায়। আলোচনার ঘাটতি সমস্যাজনক। সেই সমস্যাগুলি অনায়াসেই সমাধান করতে পারতাম, যদি আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়া হত।’’

Advertisement

তবে এই রিপোর্টে শিক্ষার প্রগতির প্রশংসা এবং গঠনমূলক সমালোচনা— দু’টোই উঠে এসেছে বলে সুগতবাবুর পর্যবেক্ষণ। তাঁর মত, প্রশংসা নয় গঠনমূলক সমালোচনা থেকেই বেশি শেখা যায়। রাজ্য সরকার তথা সরকারি শিক্ষানীতি প্রণয়নকারীদের এই দৃষ্টিভঙ্গিতেই রিপোর্টটি গ্রহণ করা উচিত বলে জানিয়েছেন সুগতবাবু।

সই-শিকারি: প্রতীচী ট্রাস্টের এক অনুষ্ঠানে অমর্ত্য সেন। মঙ্গলবার মৌলালি যুব কেন্দ্রে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শিক্ষকদের উপরে নানা ধরনের চাপের কথাও উঠে এসেছে রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায়। এক জন শিক্ষককে কার্যত স্কুলের ঘরদোর পরিষ্কার করতে হয়। আবার তাঁকেই জেলায় শিক্ষা পরিদর্শকের অফিসে দরবার করতে যেতে হয়। গুটিকয়েক পার্শ্বশিক্ষক ছাড়া তাঁকে সাহায্যের কেউ নেই। এই ধরনের পরিস্থিতি অভিপ্রেত নয় বলে মন্তব্য করেন সুকান্তবাবু। সুগতবাবুও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত শুধরোনোর কথা বলেছেন। পড়ুয়াদের ‘মিড ডে মিল’-এও রাজ্য সরকার ন্যূনতম খরচ এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যথাযথ খাবারের জন্য মাথাপিছু রোজ সাত টাকা সতেরো পয়সা খরচের বদলে সরকার দিচ্ছে চার টাকা তেরো পয়সা। সুগতবাবু বলেন, ‘‘শুনেছি অন্য খাতে রাজ্য সরকার ব্যয় কমাতে চাইছে। কিন্তু এই প্রাথমিক শিক্ষায় আমাদের ব্যয় বাড়াতে হবে।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষিকা দেবী চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শিশুরা ভোটার নয়। তাই হয়তো কোথাও রাজনৈতিক ভাবে তাদের গুরুত্ব কম।’’ সেই সূত্র ধরে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘‘ভোট কম বলে জোর কম। এটা ঠিকই। কিন্তু তাদের জোর দিতে হলে আমাদের আলোচনার একটা ভূমিকা নিশ্চয়ই আছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন