জিএসটি-র ধাক্কায় ঝিমিয়ে তাঁত বাজার

জিএসটি চালুর পরে দু’মাস কাটলেও প্রয়োজনীয় ‘রেজিস্ট্রেশন’ করিয়ে উঠতে পারেননি অনেক তাঁত ব্যবসায়ী। এ দিকে, জিএসটি-র জেরে বেড়েছে সুতো-সহ নানা কাঁচামালের দাম। তাতে শাড়ির দাম বাড়ছে, কমেছে চাহিদা। সব মিলিয়ে, এ বার বরাত মিলছে কম। তাই ঝিমিয়ে তাঁতিপাড়া।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৯:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পুজোর আগে কাজের চাপে এক হয়ে যায় দিন-রাত। তাঁত বোনার খটাখট শব্দ শোনা যায় সব সময়। কিন্তু এ বছর সে ব্যস্ততা নেই পূর্ব বর্ধমানের ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, পূর্বস্থলী বা নদিয়ার শান্তিপুর, ফুলিয়ার তাঁতিদের। সৌজন্যে জিএসটি, অভিযোগ তাঁদের।

Advertisement

জিএসটি চালুর পরে দু’মাস কাটলেও প্রয়োজনীয় ‘রেজিস্ট্রেশন’ করিয়ে উঠতে পারেননি অনেক তাঁত ব্যবসায়ী। এ দিকে, জিএসটি-র জেরে বেড়েছে সুতো-সহ নানা কাঁচামালের দাম। তাতে শাড়ির দাম বাড়ছে, কমেছে চাহিদা। সব মিলিয়ে, এ বার বরাত মিলছে কম। তাই ঝিমিয়ে তাঁতিপাড়া।

কালনা মহকুমায় রয়েছে প্রায় চল্লিশ হাজার তাঁতঘর। দু’লক্ষেরও বেশি মানুষ যুক্ত বস্ত্র শিল্পে। ফুলিয়া-শান্তিপুরে ছোট ব্যবসায়ীর সংখ্যাই ৫০-৬০ হাজার। তাঁরা জানান, বছরে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হয় পুজোর আগে। কলকাতা, আসানসোল থেকে শিলিগুড়ি—রাজ্যের সমস্ত বড় বাজার থেকে বরাত আসে। কিন্তু এ বার যাঁরা ‘জিএসটি রেজিস্ট্রেশন’ করিয়েছেন, তাঁরা অন্য বারের তুলনায় বরাত পেয়েছেন ৩০-৪০% কম। যাঁদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি, তাঁদের হাত খালি। তাঁতিরা জানান, জিএসটির আগে প্রতি কিলোগ্রাম পলিয়েস্টার সুতোর দাম ছিল ৩৫০ টাকা। এখন তা বিকোচ্ছে ৪১৪ টাকা কিলো দরে। দাম বেড়েছে জরি, রঙ, সাধারণ সুতো-সহ প্রায় সব কাঁচামালের। ফলে, গত বছর যে শাড়ির দাম ছিল হাজার টাকা, তা হয়েছে ১,২০০ টাকা। তাই ক্রেতাদের চাহিদা কমেছে।

Advertisement

‘সমুদ্রগড় টাঙাইল তাঁত ব্যবসায়ী সমিতি’র সদস্য কার্তিক ঘোষ জানান, জিএসটি পদ্ধতির সঙ্গে সড়গড় হতেই তাঁদের নাভিশ্বাস উঠেছে। সমস্ত বেচাকেনার হিসেব রাখতে হচ্ছে কম্পিউটারে। সে কাজ করতে পারার মতো দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে। পূর্বস্থলী-শ্রীরামপুরের ব্যবসায়ী গৌরাঙ্গ বসাকের কথায়, ‘‘বড় ব্যবসায়ীদের কাছে শাড়ি বিক্রি করতে গেলেই জিএসটি-র হিসেব চাওয়া হচ্ছে। অনেকে রেজিস্ট্রেশন না করায় বড় বাজারে মাল পাঠাতে পারছেন না।’’ ছোট তাঁতিদের অনেকের থেকে পুজোর আগে সরাসরি শাড়ি কিনত ‘তন্তুজ’। কেউ সরাসরি শহরের নানা দোকানে গিয়ে শাড়ি বেচতেন। আবার নানা জায়গা থেকে মহাজনেরা এসেও শাড়ি কিনতেন। কিন্তু জিএসটি-র রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছাড়া শাড়ি বিক্রি করা মুশকিল। ছোট তাঁতিদের অনেকেরই সেই ‘রেজিস্ট্রেশন’ এখনও করা হয়ে ওঠেনি। ফলে, বিক্রি বন্ধ। তাঁতি হুমায়ুন শেখ বলেন, ‘‘খোলা হাটে যেটুকু বিক্রি হয়, সেটাই ভরসা।’’

তন্তুজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘হস্তচালিত তাঁত থেকে জিএসটি তুলে নিতে মন্ত্রী স্বপন দেবনাথকে আর্জি জানানো হয়েছে।’’ রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী স্বপনবাবুরও আশ্বাস, ‘‘জিএসটি-র ফলে সাধারণ তাঁতিদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠানো হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, তাঁতিদের থেকে পূজা মরসুমে এক কোটি টাকার শাড়ি কিনবে ‘তন্তুজ’। সে জন্য রাজ্যের নানা জায়গায় শিবিরও করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন