তপতী চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
পাক্কা বারো ঘণ্টা ভেসেছিলেন জলে। শনিবার সন্ধ্যায় পড়ে গিয়েছিলেন বর্ধমানের দামোদরে। রবিবার সকালে উদ্ধার হলেন হুগলির মুণ্ডেশ্বরীতে।
বেঁচে ফিরে কপালকেই ধন্যবাদ দিচ্ছেন তপতী চৌধুরী। মেমারি থানার কুচুট গ্রামের বাসিন্দা, ৬২ বছরের তপতীদেবী শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের কর্মী। বান্ধবীর অসুস্থ স্বামীকে দেখতে শনিবার বিকেলে বর্ধমান শহরের বেড়ের মোড়ে এসেছিলেন। দামোদরের জল দেখতে চলে যান সদরঘাটে। ফুলে ফেঁপে যাওয়া দামোদর দেখতে তখন ভিড়। আইসক্রিম কিনে কাছ থেকে জল দেখতে গিয়েই পা পিছলে নদীতে। স্রোতের টানে নিমেষে চলে যান অনেকটা দূরে।
বর্ধমান শহরের কালীবাজার আমতলায় থাকেন ছেলে অনিরুদ্ধ ও বৌমা অর্পিতা সরকার। রবিবার রাতে সেই বাড়িতে বসেই তপতীদেবী বললেন, ‘‘এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল বাঁচব না। প্রবল স্রোত। তার পরে ভাবলাম চেষ্টা করি। বারো বছর বাদে সাঁতার কাটলাম।’’
এ ভাবে কতক্ষণ কেটেছে জানেন না। চারপাশে ঘন অন্ধকার। একটা সময় স্রোতের তীব্রতা কমে আসে। বুঝলেন দামোদর ছেড়ে অন্য নদীতে পড়েছেন। এক সময় আলো ফুটল। তপতীদেবীর কথায়, ‘‘শরীরের শক্তি ছিল না। কোনও মতে হাত দু’টো তুলেছিলাম। তখনই কোথা থেকে একটা নৌকা এসে আমাকে তুলে নিল জল থেকে।’’ যে জায়গায় তাঁকে তোলা হয়, সেটি পুড়শুড়ার ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতের মারকুন্ডা ফেরিঘাট। মাছ ধরতে গিয়ে কয়েক জন তপতীদেবীকে দেখতে পেয়ে বাঁচান। পাড়ে উঠেই তাঁর রক্তবমি শুরু হয়। সুমিত্রা দাস নামে স্থানীয় এক মহিলা তপতীদেবীকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ডাক্তার ডেকে ওষুধ কিনে দেন। তারকেশ্বর থেকে বোনপো এসে তপতীদেবীকে বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি করান। সন্ধ্যার পরে ছাড়া পেয়ে ছেলের বাড়িতে ফেরেন।
‘‘কপালই বাড়ি ফিরিয়ে দিল।’’—কপালে হাত ঠেকিয়েই বললেন তপতীদেবী।