ভোটার তালিকার তথ্য যাচাই করেছেন আধিকারিকেরা। — ফাইল চিত্র।
নির্বাচন কমিশনের শুনানির জন্য প্রতিটি বিধানসভা থেকে দিনে অন্তত ১০০ জন করে ভোটারকে ডাকা হবে। শুনানি করবেন কমিশন নিযুক্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও)-এরা। এর জন্য প্রতিটি বিধানসভা এলাকায় ১০ জন করে এইআরও নিয়োগ করা আছে কমিশনের। অর্থাৎ, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য ২৯৪০ জন এইআরও নিযুক্ত রয়েছেন। পাশাপাশি অতিরিক্ত এইআরও-ও নিয়োগ করা হচ্ছে। কমিশন সূত্রে খবর, প্রায় ১০০০-১৫০০ জন অতিরিক্ত এইআরও নিয়োগ করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুসারে তাঁদেরও শুনানির কাজে ব্যবহার করা হতে পারে।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল, প্রতিটি বিধানসভা এলাকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ জন ভোটারের শুনানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এখন সেই লক্ষ্যমাত্রা আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও)-এর দফতরে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয়, প্রতিদিন বিধানসভাপিছু কমপক্ষে ১০০ জন ভোটারের শুনানি করতে হবে। জানা যাচ্ছে, ২০০২ সালের তালিকার সঙ্গে কোনও যোগসূত্রই নেই, এমন প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটারের এনুমারেশন ফর্ম জমা পড়েছে। তাঁদের সকলকেই শুনানির জন্য ডাকবে কমিশন।
পাশাপাশি ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯১১ ভোটারের তথ্য সন্দেহজনক ঠেকেছে কমিশনের। ওই ভোটারদের তথ্য পুনরায় যাচাই করার জন্য তাঁদের বাড়িতে বিএলও-দের পাঠানো হবে। বিএলও-রা যাঁদের তথ্যে সন্তুষ্ট হবেন না, তাঁদের তালিকা যাবে কমিশনের কাছে। সেই সন্দেহজনক ভোটারদেরও ডাক পড়বে কমিশনের শুনানিতে।
আগামী ১৬ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। সেই তালিকায় কোনও অভিযোগ থাকলে, ত্রুটি থাকলে কমিশনকে জানাতে হবে। তার ভিত্তিতে হবে শুনানি। নোটিস জারি করে একে একে শুনানির জন্য ডাকা হবে অভিযোগ জানানো ভোটারদের। তথ্যপ্রমাণ যাচাই করে দেখে চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করবে কমিশন। তা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি।
সূত্রের খবর, ভোটারদের মোট তিনটি তালিকায় ভাগ করেছে কমিশন— নিজস্ব ম্যাপিং, প্রোজেনি ম্যাপিং এবং নন-ম্যাপিং। ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় (রাজ্যে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল ২০০২ সালে) যাঁদের নাম ছিল, তাঁরা নিজস্ব ম্যাপিংয়ের তালিকায় পড়ছেন। এমন ২ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৯ হাজার ১৮৮ জন ভোটারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যাঁদের নাম ২০০২ সালের তালিকায় না-থাকলেও বাবা-মা বা আত্মীয়ের নাম আছে, তাঁরা প্রোজেনি ম্যাপিং তালিকায় রয়েছেন। রাজ্যে তেমন ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ ৫৫ হাজার ৯৩৯ জন।
এ ছাড়া, ৩০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন, যাঁদের নিজেদের নাম বা আত্মীয়ের নামও ২০০২ সালের তালিকায় নেই। তাঁরা নন-ম্যাপিং তালিকাভুক্ত। এই তৃতীয় তালিকার সকলকেই কমিশনের তরফে শুনানিতে ডাকা হবে। তাঁদের তথ্যপ্রমাণ, নথি যাচাই করে দেখা হবে।
এদের পাশাপাশি আরও দেড় কোটির বেশি ভোটারের এনুমারেশন ফর্মের তথ্য সন্দেহজনক ঠেকেছে কমিশনের। কোনও ক্ষেত্রে ভোটারের চেয়ে তাঁর বাবা বা মা মাত্র ১৫ বছরের বড়। কোথাও আবার ঠাকুরদা বা ঠাকুরমার চেয়ে ভোটার ৪০ বছরেরও ছোট নয়। মাঝে এক প্রজন্ম ব্যবধানের পরেও বয়সের ফারাক ৪০ বছরের কম। কোথাও ভোটারের সঙ্গে তাঁর বাবা-মায়ের বয়সের ফারাক ৫০ বছরেরও বেশি। আবার কোথাও ছয়ের বেশি ভোটারের বাবার নাম একই রয়েছে। এমন বিভিন্ন সন্দেহজনক তথ্য ওই ১ কোটি ৬৭ লক্ষ ৪৫ হাজার ৯১১ ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুনরায় যাচাই করবেন বিএলও-রা। যাচাই প্রক্রিয়া সন্তোষজনক না-হলে, সংশ্লিষ্ট ভোটারকে ডেকে পাঠানো হবে শুনানির জন্য।